গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা | কচু শাকে কোন উপাদান বেশি থাকে

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

Health Tips: কচু দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সুপরিচিত একটি সবজি ও শাক। এর কান্ড সবজি এবং পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। কচুর কান্ড এবং পাতা সবকিছুতেই প্রচুর পরিমানে পুষ্টি থাকে। কচু শাক অত্যন্ত সহজলভ্য একটি সবজি। কচু পাতা খুবই বিশেষ, কচুশাক এবং শিকড় উভয়ই পুষ্টি ধারণ করে এবং উভয়ই বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে। কচু পাতার আকার মাঝারি থেকে বড়ো পর্যন্ত হয়। যার দৈর্ঘ্য 40 সেমি পর্যন্ত এবং প্রস্থ 20 সেমি পর্যন্ত হতে পারে। পাতাগুলি মসৃণ এবং পৃষ্ঠে গাঢ় সবুজ এবং নীচের দিকে ফ্যাকাশে। গ্রামবাংলায় সচরাচর এটি দেখা যায়। কিন্ত বেশিরভাগ মানুষ এই সামান্য জিনিসটির অসামান্য গুন সম্পর্কে অবগত নন। kolkatacorner -এর আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কচুশাক সম্পর্কিত কিছু অজানা তথ্য  নিয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, কচুশাকে কী কী খাদ্য উপাদান রয়েছে, মানবদেহে এর উপকারিতা এবং অপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা 

কচু শাকে কোন উপাদান বেশি থাকে

এবারে জেনে নেওয়া যাক কচু শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। 

প্রতি 150 গ্রাম কচু শাকে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান-

  • ক্যালোরি- 35 গ্রাম
  • প্রোটিন- 4 গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট- 6 গ্রাম
  • ফাইবার- 3 গ্রাম
  • চর্ব- 1 গ্রাম
  • ভিটামিন সি- 57%
  • ভিটামিন  - 34%
  • ফোলেট- 17%
  • পটাসিয়াম- 14%
  • ক্যালসিয়াম- 13%
  • আয়রন- 10%

আরও পড়ুনঃ মটরশুঁটির উপকারিতা

কচু শাকে কি ভিটামিন আছে

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে, যেমন ভিটামিন এ, সি ও বি। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ক্যালসিয়াম ও লৌহের চাহিদা কচুশাক সহজেই মেটাতে পারে।

কচু শাকে প্রাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ 

কচু শাক ভরপুর মাত্রায় পুষ্টিগুন সম্পন্ন একটি শাক। প্রতি 100 গ্রাম কচু শাকে 6.8 গ্রাম শর্করা, 3.9 গ্রাম প্রোটিন, 10 মিলিগ্রাম লৌহ, 0.22 মিলিগ্রাম ভিটামিন B1 বা থায়ামিন, 0.26 মিলিগ্রাম ভিটামিন B2 বা রাইবোফ্লবিন, 12 মিলিগ্রাম ভিটামিন C, 1.5 গ্রাম স্নেহ পদার্থ, 227 মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম, এবং 56 কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি থাকে। এছাড়াও এতে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ পদার্থ থাকে।

কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা

পুষ্টিবিদদের মতে, কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা দেহের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। খেলোয়াড়, গর্ভাবস্থা, বাড়ন্ত শিশু ও কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি খুবই উপকারী একটি উপাদান। এতে ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে, যা দেহের হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সক্ষম। এর মধ্যে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি আছে। এই আঁশ খাবার খুব সহজে হজম করে, দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যেকোনো বড় ধরনের অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এই কচুর লতি।

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

আরও পড়ুনঃ কালমেঘ পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কচুশাকের উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে এবং সন্তান প্রসবের পর কচু শাক খাওয়ার একাধিক উপকারিতা রয়েছে। যেমন-

  • জন্মের পর থেকে অন্তত ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুর প্রধান খাদ্য হল মাতৃদুগ্ধ। কিন্ত অনেক সময় মাতৃ স্তনে শিশুর আহারের জন্য পর্যাপ্ত দুগ্ধের ঘাটতি দেখা যায়। এক্ষেত্রে পরপর তিন থেকে চার দিন কচু শাক খেলে মাতৃ স্তনে দুগ্ধের পরিমান বৃদ্ধি পায়। 
  • গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রচুর পুষ্টির প্রয়োজন হয়, অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারের মহিলারা প্রোটিন ড্রিঙ্ক ও ভিটামিন ক্যাপসুলের পরিবর্তে কচু শাক গ্রহন করতে পারেন। 
  • কচুশাকে ক্যালশিয়াম থাকার জন্য গর্ভাবস্থায় কচুশাক খেলে সন্তানের হাড়ের বৃদ্ধি সুগঠিত হয়। 

কচু খাওয়ার উপকারিতা

কচু একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি, যা খাওয়ার ফলে অসংখ্য উপকার পাওয়া যায়। তবে এর পাতাকে অকেজো ভেবে ভুল করবেন না। কচু শাকের আকৃতি হৃৎপিণ্ডের আকৃতির মতো, যাতে অনেক ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লুকিয়ে থাকে। কচু শাক খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়। তবে এটি কচু শাকের একমাত্র সুবিধা নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক কচু শাক খাওয়ার আরও সব উপকারিতা সম্পর্কে।

আরও পড়ুনঃ নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

1. গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি বর কচু 

ডাক্তাররা গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন ফোলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। ফোলেট ভ্রূণের সুস্থ বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য ভিটামিন। কচু শাকে এই ভিটামিন খুব বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তাই গর্ভবতী মহিলাদের এটি নিয়মিত খাওয়া উচিত।

2. হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

কচু পাতায় স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ খুবই কম। তাই এর সেবন হার্টের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। কচুতে উপস্থিত ফাইবার রক্তনালীতে কোলেস্টেরল ও চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তে হোমোসিস্টাইনের মাত্রা কমায় এবং হার্টের সমস্যা ও স্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

3. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে উপকারী

কচু শাকে উপস্থিত প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ চোখের পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের জন্যও খুবই উপকারী। এটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখার পাশাপাশি চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন মায়োপিয়া, অন্ধত্ব এবং ছানি প্রতিরোধে সহায়তা করে।

4. ক্যান্সার রোগীদের জন্য উপকারী

তাজা এবং রান্না করা কচু শাক খাওয়া ক্যান্সারের প্রভাব কমাতে পারে। এতে ভিটামিন সি -এর ভালো উপস্থিতির কারণেই এমনটা হয়। ভিটামিন সি একটি প্রতিরক্ষামূলক এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সর্দি, কাশি এবং কিছু ধরণের ক্যান্সারের মতো সাধারণ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ গরুর দুধের ঘি এর উপকারিতা, ঘি খাওয়ার নিয়ম

5. উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য উপকারী

কচু শাকে উপস্থিত মেথিওনিন এবং ফাইবার ট্রাইগ্লিসারাইড ভেঙে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।কচু শাকে ধুয়ে, শুকিয়ে এবং পিষে একটি পাউডার তৈরি করুন এবং প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় দুধ বা জলের সাথে মিশিয়ে পান করুন। এর সাহায্যে সহজেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

6. বলিরেখা দূর করতে

কচু অ্যামিনো অ্যাসিড এবং থ্রোনাইন সমৃদ্ধ। এটি কোলাজেন এবং ইলাস্টিন তৈরিতে সাহায্য করে। এই দুটিই আপনার স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই কচু ও এর শাক নিয়মিত সেবন করলে বলিরেখা রোধ হয়।

7. জয়েন্টের ব্যথায় উপকারী 

জয়েন্টে ব্যথা বেশি হলে প্রতিদিন কচুশাক খেতে হবে, ব্যথায় উপশম হবে।

8. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে 

কচুশাক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, এটি খেলে মানসিক চাপের কোনো সমস্যা হয় না।

গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

আরও পড়ুনঃ খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

9. ওজন কমাতে

ওজন কমাতেও কচু শাক খুবই কার্যকরী। এতে উপস্থিত ফাইবার মেটাবলিজমকে সক্রিয় করে, যার কারণে ওজন অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

10. পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে

এই পাতা ফাইবার সমৃদ্ধ। অতএব, এটি আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হতে পারে। এতে উপস্থিত ফাইবার মল বাড়ায় এবং মলত্যাগ স্বাভাবিক করে। এইভাবে, এটি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো কিছু পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

কচু শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যগুন রয়েছে। যা আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী। কচু শাকের অন্যান্য উপকারিতা গুলি হল-

  • কচু শাকে আয়রন নামক খনিজ পদার্থ থাকে। যা আমাদের দেহের রক্তাল্পতা দূর করতে সহায়তা করে। 
  • কচুশাকে উপস্থিত ক্যালশিয়াম দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে।
  • কচু শাকে ভরপুর মাত্রায় ভিটামিন A থাকে। ফলে এটি রাতকানা,  ছানিপড়া ইত্যাদি চোখের সমস্যা সমাধানের প্রতিরোধের পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। 
  • কচু শাকে রয়েছে ভিটামিন B ও ভিটামিন C । যা ত্বকের ও মুখের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • কচু শাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে। ফলে খাদ্য সহজে পাচিত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ ফলদায়ক হয়। 
  • ক্ষতস্থানে কচু শাকের ডাঁটা থেকে নির্গত রস লাগালে দ্রুত ক্ষত সেরে ওঠে।
  • কচু শাক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই উপকারী।
  • আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 
  • কচু শাক রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।  ফলে ডায়াবেটিসের সমস্যা দূর হয়। 
  • কচু শাকে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কচু শাক মহিলাদের স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম।

আরও পড়ুনঃ টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

কচু শাকের অপকারিতা

কচু শাক একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার ফলে এতে বিশেষ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। কিন্ত কচু শাক অ্যালার্জি সংক্রমণের প্রবনতা বৃদ্ধি করতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না, এরকম আরও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পোস্টের আপডেট পেতে জয়েন করুন আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল।

Join Our Telegram Channel Click Here
Follow us on Facebook Click Here

আরও পড়ুনঃ

পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা

কিভাবে মুখ থেকে পিগমেন্টেশন স্থায়ীভাবে দূর করবেন

তুলসী চা বানানোর পদ্ধতি 

Post a Comment

0 Comments