প্রাণায়াম কাকে বলে | প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি

প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি

প্রাণায়াম কি 

প্রাণায়াম: বর্তমানে এই প্রযুক্তির যুগে এসে আমরা অনেকটাই অলস হয়ে উঠছি। যার ফলে আমরা খেয়াল রাখছি না আমাদের শরীরের, ফলস্বরূপ দৈনন্দিন কাজে আমরা মনোযোগী হতে পারছিনা, শুধু যতটুকু না করলে নয় সেটাই করছি। শরীরে কোনোপ্রকার তেজ বা সতেজভাব থাকছে না। আমাদের সবার শরীর ফিট রাখা কতটা জরুরি সেটা আমরা করোনা মহামারীর সময় খুব প্রত্যক্ষভাবেই বুঝতে পেরেছি। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কথা বলবো কিভাবে একটা ছোটো কাজের মাধ্যমে আমরা মৃত্যু পর্যন্ত ফিট ও সতেজ থাকতে পারি। হয়তো আপনারা অনেকেই বুঝতে পেরেছেন যে আমি যোগব্যায়ামের কথা বলবো। হ্যাঁ প্রায় ঠিক ধরেছেন, আজকে আমরা কথা বলবো প্রাণায়াম নিয়ে।  আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো প্রাণায়াম কি বা কাকে বলে, প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি, প্রাণায়ামের কিছু নিয়মবিধি, প্রাণায়াম করার সময়, প্রাণায়ামের উপকারিতা ইত্যাদি। 

প্রাণায়াম কাকে বলে

'প্রাণায়াম' দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয় প্রাণ ও আয়াম দিয়ে। প্রাণ শব্দের অর্থ 'প্রাণশক্তি' এবং আয়াম শব্দের অর্থ 'বৃদ্ধি'। সামগ্রিকভাবে, এটি জীবনীশক্তি  বৃদ্ধির একটি অনুশীলন হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে গেলে, প্রাণায়াম হল সেই প্রক্রিয়া যা শ্বাসের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ানো যেতে পারে। এটি করার সময়, একটি বিশেষ উপায়ে শ্বাস নেওয়া এবং বের করতে হয়। একটানা প্রাণায়াম অনুশীলন করলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রাণায়াম অষ্টাঙ্গ যোগের একটি অংশ। অষ্টাঙ্গ যোগের প্রধান অংশগুলি হল যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যহার, ধরন, ধ্যান এবং সমাধি। 

প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি

সাধারণত প্রাণায়ামকে আমরা গুরুদেব কৃপা এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক রীতি ও আধ্যাত্মিক বিধি দ্বারা বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে থাকি। শ্বাস নিয়ন্ত্রন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় প্রাণায়াম, প্রাণায়াম করার অনেক উপকারিতা রয়েছে, মূলত 11 ধরনের প্রাণায়াম রয়েছে যার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। প্রাণায়াম বা যোগ ক্রিয়া একটি প্রাচীন ঐতিহ্য যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। যোগব্যায়াম অনুশীলনে শ্বাস একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে। যোগিক ক্রিয়াকলাপে শ্বাস-প্রশ্বাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, যা শুধুমাত্র শারীরিকভাবে নয় মানসিকভাবেও অনেক উপকারী। প্রাণায়ামের সহজ অর্থ হল আপনার শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করা, এই শিল্পকে বলা হয় প্রাণায়াম।

  • ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম 
  • কপালভাতি প্রাণায়াম 
  • বাহ্য প্রাণায়াম 
  • অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম 
  • ভ্রামরী প্রাণায়াম 
  • নাড়ি শোধন প্রাণায়াম 
  • চন্দ্রভেদী বা চন্দ্রাঙ্গ প্রাণায়াম 
  • উজ্জায়ী প্রাণায়াম 
  • শীতলী প্রাণায়াম 
  • সীৎকারী প্রাণায়াম 
  • মূর্চ্ছা প্রাণায়াম 

প্রাণায়াম করার সময় 

প্রাণায়াম করার সেরা সময় হল সকাল, সকালে খালি হাতে প্রাণায়াম করতে হবে। ব্যায়াম করার সময় খাবার খাবেন না কারণ এটি আপনার ওয়ার্কআউটের কার্যকারিতা কমিয়ে দেবে।

কিভাবে প্রাণায়াম করবেন 

প্রাণায়াম করার সময় মেরুদণ্ড সোজা থাকা উচিত। এর জন্য যেকোনো ধনাত্মক আসনে বসা যেতে পারে, যেমন সিদ্ধাসন, সুখাসন, বজ্রাসন ইত্যাদি। যদি কোনো আসনে বসতে অসুবিধা হয়, তাহলে চেয়ারেও সোজা হয়ে বসে প্রাণায়াম করা যেতে পারে, কিন্তু মেরুদন্ডের হাড়কে সর্বদা সোজা রাখতে হবে। আজকাল লোকেরা চলতে-ফিরতে বা প্রাতঃভ্রমণের সময়েও ঘুরতে ঘুরতে নাড়ি শোধন ইত্যাদি প্রাণায়াম করে থাকেন, এটি প্রাণায়াম করার ভুল পদ্ধতি। এর ফলে যেকোনো সময় প্রচন্ড ক্ষতি হতে পারে। প্রাণায়াম করলে প্রাণশক্তির উত্থান হয় এবং মেরুদন্ডের সঙ্গে যুক্ত চক্রগুলির জাগরন হয়। সুতরাং প্রাণায়াম করার সময় সোজা হয়ে বসাটা অত্যন্ত আবশ্যক।

প্রাণায়ামের কিছু নিয়মবিধি

  • প্রাণায়াম শুদ্ধ সাত্ত্বিক নির্মল স্থানে করা উচিত। যদি সম্ভব হয়, তবে জলের কাছে বসে অভ্যাস করা ভালো।
  • শহরে যেখানে দূষণের প্রভাব বেশি, সেখানে প্রাণায়াম করার আগে ঘি এবং গুগগুল দ্বারা সেই স্থানটিকে সুগন্ধিত করতে হবে। আর না হলে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালাতে হবে।
  • প্রাণায়ামের জন্য সিদ্ধাসন, বজ্রাসন বা পদ্মাসনে বসাই উপযুক্ত। তবে বসার জন্য যে আসন ব্যবহৃত হবে, সেটা যেন বিদ্যুতের কু-চালক হয়, যেমন কম্বল বা কুশাসন ইত্যাদি।
  • শ্বাস সব সময় নাক দিয়েই নেওয়া উচিত। এতে শ্বাস ফিল্টার হয়ে ভিতরে ঢুকবে।
  • যোগাসনের মতো প্রাণায়াম করার জন্য কমপক্ষে 4-5 ঘন্টা আগে ভোজন করা উচিত। প্রাতঃকালে শৌচাদির পর যোগাসন করার আগে যদি প্রাণায়াম করা যায় তবে সেটা সর্বোত্তম হয়। শুরুতে 5-10 মিনিট অভ্যাস এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে 1 ঘন্টা পর্যন্ত করা যেতে পারে। প্রাণায়ম সর্বদা একটি নির্দিষ্ট সংঘাতে কি করা উচিত, কম বা বেশি না করাই ভালো।
  • প্রাণায়াম করার সময় মন শান্ত এবং প্রসন্ন থাকা উচিত। এমনিতে প্রাণায়াম দ্বারাও মন শান্ত, প্রসন্ন ও একাগ্র হয়ে ওঠে।
  • প্রাণায়াম করার সময় যদি ক্লান্তি অনুভব হয়, তবে পরের প্রাণায়াম শুরু করার আগে 5-6 বার স্বাভাবিক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিশ্রাম করে নেওয়া উচিত।
  • প্রাণায়ামকে নিজের নিজের প্রকৃতি এবং ঋতু অনুযায়ী করা উচিত। কিছু প্রাণায়ম দ্বারা শরীরের গরমভাব বেড়ে ওঠে, আবার কিছু প্রাণায়ামে ঠান্ডাভাব কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
  • গর্ভবতী মহিলা, ক্ষুধার্ত ব্যাক্তি, জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রাণায়াম করা উচিত নয়। রোগী ব্যক্তিদের প্রাণায়ামের সঙ্গে দেওয়া সতর্কতাগুলিকে মাথায় রেখে প্রাণায়াম করা উচিত।
  • প্রাণায়ামের দীর্ঘ অভ্যাসের জন্য পূর্ন ব্রহ্মচর্যের পালন করা উচিত। ভোজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। দুধ, ঘি এবং ফলের সেবন লাভকারী হয়।
  • প্রাণায়ামে শ্বাসকে জোর করে আটকে রাখা উচিত নয়। প্রাণায়াম করার জন্য শ্বাসকে শরীরের ভিতরে নেওয়াকে 'পূরক' শ্বাসকে শরীরের ভিতরে আটকে রাখাকে 'কুম্ভক' এবং শ্বাসকে বাইরে ছাড়াকে 'রেচক' এবং শ্বাসকে বাইরেই আটকে রাখাকে 'বাহ্যকুম্ভক' বলে।
  • প্রাণায়ামের অর্থ কেবলমাত্র পূরক, কুম্ভক এবং রেচকই নয়, বরং এটি শ্বাস এবং প্রাণের গতিকে নিয়ন্ত্রিত করে মনকে স্থির এবং একাগ্র করার অভ্যাসও বটে।
  • প্রাণায়ামের আগে বেশ কয়েকবার 'ওম' শব্দটির লম্বা উচ্চারণ করা উচিত। এতে মন শান্ত হয়।
  • প্রাণায়াম করার সময় চোখ, মুখ, নাক ইত্যাদি অঙ্গের ওপর কোনো প্রকার টেনশন না এনে সহজ অবস্থায় রাখা উচিত। প্রাণায়াম অভ্যাস করার সময় গলা, মেরুদন্ড, বক্ষ, কটি সব সময় সোজা রাখা উচিত।
  • প্রাণায়ামের অভ্যাস ধীরে ধীরে, কোনো রকমের উতলাভাব ছাড়া, ধৈর্য সহকারে, সতর্কতার সঙ্গে করা উচিত।
  • স্নানের পর ধ্যান-উপাসনার আগে প্রাণায়াম করা উচিত। প্রাণায়াম করার 15 থেকে 20 মিনিট পরেও স্নান করা যেতে পারে।

প্রাণায়ামের গুরুত্ব এবং লাভ 

প্রাণের আয়াম (নিয়ন্ত্রণ)-ই হল প্রাণায়াম। প্রতিমুহূর্তে জীবন আর মৃত্যুর যে অটুট সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে রয়েছে, সেটা প্রাণের সংযোগের দ্বারাই রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় 'জীবন' শব্দ 'জীব-প্রাণধারণ' ধাতু থেকে তৈরি হয়েছে আর 'মৃত্যু' শব্দটি তৈরি হয়েছে 'মৃতং প্রাণত্যাগ' থেকে। প্রাণায়াম দ্বারা ইন্দ্রিয় ও মনের সব দোষ দূর করা সম্ভব হয়। আসন দ্বারা যোগীর রজঃগুণ, প্রাণায়াম দ্বারা পাপনিবৃত্তি এবং প্রত্যাহার করা মানসিক বিকার দূর করা উচিত। প্রাণ এবং মনের মধ্যে সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। প্রাণ থেমে গেলে মন আপনা থেকেই একাগ্র হয়ে পড়ে।

প্রাণায়াম করলে মনের উপর আসা অসৎ, অবিদ্যা এবং ক্লেশ রুপী তমসের আবরণ পাতলা হয়ে আসে। পরিশুদ্ধ হয়ে পড়া মনে ধারণা আপনা থেকেই হতে লাগে এবং ধারণা দ্বারা যোগের উন্নতি স্থিতি ধ্যান এবং সমাধির দিকে এগিয়ে চলা যায়। যোগাসন দ্বারা আমরা স্থূল শরীরের বিকৃতি দূর করি। সূক্ষ্ম শরীরের উপরে যোগাসনের থেকে প্রাণায়ামের বেশি প্রভাব পড়ে। শুধুমাত্র সূক্ষ্ম শরীরই নয়, ফুল শরীরের উপরেও প্রাণায়ামের বিশেষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আমাদের শরীরে ফুসফুস, হৃদপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে।

স্থলরূপে প্রাণায়াম হল শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের একটি পদ্ধতি, যার দ্বারা ফুসফুস শক্তিশালী হয়ে ওঠে, রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত হয়ে ওঠার ফলে আরোগ্য এবং দীর্ঘায়ুর প্রাপ্তি হয়। শরীরবিজ্ঞান অনুযায়ী মানব শরীরের দুটি ফুসফুস হল শ্বাসকে নিজের ভিতরে নেওয়ার সেই যন্ত্র, যাতে ভরা বায়ু শরীরের সমস্ত অঙ্গ পৌঁছে অক্সিজেন প্রদান করে এবং বিভিন্ন অবয়ব থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বাইরে বের করে দেয়। এই ক্রিয়া ঠিকমতন চলতে থাকলে ফুসফুস মজবুত হয়ে ওঠে এবং রক্তশোধন কার্য চলতে থাকে। 

প্রায়ই অধিকাংশ ব্যক্তি, গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অভ্যস্ত থাকেনা, যার ফলে তাদের ফুসফুসের এক-চতুর্থাংশ ভাগই কাজ করে, বাকি তিন-চতুর্থাংশ ভাগ নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে। মৌমাছির চাকের মত ফুসফুসে প্রায় সাত কোটি তিরিশ লক্ষ 'স্পঞ্জের' মতো প্রকোষ্ঠ থাকে। সাধারন হালকা শ্বাস নিলে তাদের ভিতর প্রায় দুই কোটি ছিদ্রেই প্রাণবায়ুর সঞ্চার হয়, বাকি পাঁচ কোটি তিরিশ লক্ষ ছিদ্রে প্রাণবায়ু না পৌঁছানোর ফলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকে। ফলস্বরূপ, সেগুলির মধ্যে জড়তা ও মলজাতীয় দ্রব্য জমা হতে থাকে, যার ফলে ব্যক্তি টিবি (TB), কাশি, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

এই প্রকার ফুসফুসের কার্যপদ্ধতির অপূর্ণতা রক্তশুদ্ধির উপর প্রভাব বিস্তার করে। হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ অকালমৃত্যু উপস্থিত হয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তির দীর্ঘ আয়ুর জন্য প্রাণায়ামের গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। এই কারণেই সনাতন ধর্মে, শুভ কার্যে এবং সন্ধ্যা উপাসনার নিত্যকর্মে প্রাণায়ামকে এক আবশ্যক ধর্ম রূপের শামিল করা হয়। উদ্বেগ, চিন্তা, ক্রোধ, নিরাশা, ভয় এবং কামুকতা ইত্যাদি মনোবিকারের সমাধান 'প্রাণায়াম' দ্বারা সহজেই করা যেতে পারে। শুধুমাত্র এই নয়, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতা, সূক্ষ্ম নিরীক্ষন, ধারণা, মেধা ইত্যাদি মানসিক বৈশিষ্ট্যের বৃদ্ধি করে 'প্রাণায়াম' দ্বারা দীর্ঘজীবী হয়ে উঠে জীবনের বাস্তবিক আনন্দ প্রাপ্ত করা যেতে পারে।

প্রাণায়াম করা ব্যক্তি নিজের শ্বাসের প্রয়োগ খুব কম করে থাকেন, তার ফলে তিনি দীর্ঘায়ু হন। এমনিতেও এই সৃষ্টিতে যে প্রাণী যত কম শ্বাস নেয়, সে তত বেশি দিন বেঁচে থাকে।

প্রাণী শ্বাস সংখ্যা / মিনিট
পায়রা 34
পাখি 30
হাঁস 22
বাঁদর 30
কুকুর 28
শুয়োর 30
ঘোড়া 26
ছাগল 24
বিড়াল 24
সাপ 19
হাতি 22
মানুষ 15
কচ্ছপ 05

প্রাণায়ামের উপকারিতা

যোগ বিজ্ঞানের মতে, প্রাণায়ামের উদ্দেশ্য হল জীবনীশক্তিকে নির্দেশিত সমস্ত কাজে অংশগ্রহণ করা। অক্সিজেন আমাদের শরীরের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি। আমরা জল ছাড়া 1-2 দিন বেঁচে থাকতে পারি, কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া আমরা কয়েক মিনিটের জন্যও বাঁচতে পারি না। প্রতিদিন প্রাণায়াম করলে অনেক ধরণের উপকার পাওয়া যায়-

ওজন কমাতে সহায়ক: যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য প্রাণায়াম খুবই ভালো প্রমাণিত। কারণ প্রাণায়াম আপনাকে শরীর নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। যখন আমরা নিয়মিত প্রাণায়াম অনুশীলন শুরু করি, তখন অনেক খাবারের প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা কমে যায় কারণ এটি আমাদের শরীরের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে শুরু করে। যখন আমাদের শরীর ক্লান্ত থাকে, তখন আমরা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখাই। কিন্তু প্রাণায়ামের অনুশীলন আমরা যে খাবার খাই তার ভারসাম্য ও সচেতনতা বাড়ায়।

সামগ্রিক মঙ্গল করে: প্রাণায়াম শরীরের স্নায়ু শুদ্ধ করতে পরিচিত। যেহেতু এটি শরীরের শক্তি প্রবাহের ভারসাম্য বজায় রাখে, তাই প্রাণায়াম আমাদের সামগ্রিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। তাই প্রতিদিন প্রাণায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বলা হয় যে প্রতিদিন প্রাণায়াম করলে মন একটি স্থিতিশীল এবং রোগমুক্ত শরীর পেতে সাহায্য করে। এছাড়াও, অনেক গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে প্রাণায়াম একজন ব্যক্তির আয়ু বাড়াতে পারে। এর কারণ হল প্রাণায়াম একজন ব্যক্তিকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করে।

মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে: প্রাণায়াম এমন একটি অনুশীলন যা আপনাকে শারীরিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করে। যেহেতু, অক্সিজেন আপনার সমস্ত অঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে, তাই প্রাণায়াম পাচনতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আপনার ত্বকে একটি প্রাকৃতিক আভা দেয়। প্রাণায়াম একজন ব্যক্তির জীবনীশক্তি বাড়াতে পরিচিত।

শারীরিক ও মানসিক চাপ কমায়: প্রাণায়াম মানসিক চাপ কমিয়ে একাগ্রতা, স্মৃতিশক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্যও গড়ে তোলে। আমাদের মন একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা আমাদের পুরো দিনটি কেমন হবে তা আমাদের গাইড করতে পারে। প্রাণায়াম আমাদের মানসিক স্নায়ুতে শান্তি আনতে সাহায্য করে কারণ এটি শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়। এর অর্থ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চাপ উপশম করতে সাহায্য করে।

রোগ নিরাময় করে: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন এমন মহিলাদের জন্য প্রতিদিন প্রাণায়াম করা খুবই উপকারী হতে পারে। যেহেতু প্রাণায়াম একটি ধ্যানমূলক অবস্থা, এটি শরীরকে শান্ত করে এবং ফলস্বরূপ হরমোন নিঃসরণ করে যা শরীরকে সম্পূর্ণ শিথিল করে। রক্তচাপের পাশাপাশি, ডায়াবেটিস এবং বিষণ্নতার মতো গুরুতর সমস্যাগুলিও নিয়মিত প্রাণায়াম অনুশীলনের মাধ্যমে সাহায্য করা যেতে পারে।

যদিও প্রাণায়ামের বিভিন্ন বিধি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে এবং প্রত্যেক প্রাণায়ামের নিজস্ব একটি বিশেষত্ব আছে, তবুও সব প্রাণায়ামের অভ্যাস ব্যক্তি প্রতিদিন করতে পারেন না। যদি প্রাণায়ামের পূর্ন অভ্যাস (বিশেষত 7 টি) ব্যক্তি করতে পারেন তবে যেসব লাভ প্রাপ্ত করবেন সেগুলি হল-

  • বাত, পিত্ত এবং কফ এই ত্রিদোষ নিরাময় করা সম্ভব হয়।
  • পাচনতন্ত্র সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সমস্ত প্রকারের উদর রোগ দূর হয়।
  • হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, এবং মস্তিষ্ক সম্বন্ধীয় সমস্ত রোগ দূর হয়।
  • মেদাধিক্য, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অম্লপিত্ত, শ্বাসরোগ, আ্যালার্জি, মাইগ্রেন, রক্তচাপ, কিডনির রোগ, মহিলা ও পুরুষের সমস্ত যৌন রোগ ইত্যাদি সাধারণ রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মত ভয়ঙ্কর সব অসাধ্য রোগ দূর হয়। 
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • বংশানুক্রমিক ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগ ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • চুল পড়ে যাওয়া, পেকে যাওয়া, মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া, নেত্রজ্যোতির বিকার, স্মৃতিদৌর্বল্য ইত্যাদি থেকে বাঁচা যায়।
  • মন স্থির, শান্ত, প্রসন্ন এবং উৎসাহিত হয়ে ওঠে, ফলে ডিপ্রেশনজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • স্থূল এবং সূক্ষ্ম দেহের সমস্ত রোগ এবং কাম, ক্রোধ, লোভ-মোহ ও অহংকার ইত্যাদি দোষ নষ্ট হয়। 
  • শরীরগত সমস্ত বিকার টক্সিনস ইত্যাদি নষ্ট হয়। 

আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা প্রাণায়ামের একদম প্রাথমিক ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। এই পোস্টে আপনারা জানলেন যে প্রাণায়াম কি বা কাকে বলে, প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি, প্রাণায়াম কখন করা উচিত, কিভাবে প্রাণায়াম করবেন, প্রাণায়ামের কিছু নিয়মবিধি, প্রাণায়ামের গুরুত্ব এবং লাভ এবং প্রাণায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে। এর পরবর্তী প্রতিবেদনে গুলির মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন প্রাণায়াম গুলি করার নিয়ম,পদ্ধতি ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। আজকের এই প্রতিবেদনটি যদি আপনাদের একটুও উপকারী বলে মনে হয় তাহলে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন এবং প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ের পোস্ট পেতে "Kolkatacorner" পেজটিকে ফলো করুন।

JOIN OUR TELEGRAM CHANNEL CLICK HERE
 

Post a Comment

0 Comments