মাশরুম বীজ কোথায় পাওয়া যায় | মাশরুম চাষে আয় ব্যয়

বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা

মাশরুম চাষ: কম খরচে শুরু করুন এই ব্যবসা, লাভ হবে লক্ষাধিক টাকা।

আপনি যদি একজন কৃষক হন এবং অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করে একটি নতুন ব্যবসা খুলতে চান, তাহলে শুরু করুন মাশরুম চাষ। আপনার জন্য এটি খুবই ভালো ও উপকারী বিকল্প হতে পারে। যদিও এতে ভালো ফলন পেতে আপনাকে অনেক যত্ন নিতে হবে, কিন্তু তাতে পরিশ্রম করলে লাভও হবে অনেক বেশি। অতি সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের মতো রাজ্যে এর চাষ (মাশরুম চাষ ব্যবসা) শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীরের মতো ঠান্ডা রাজ্যেও মাশরুমের চাষ শুরু হয়েছে। সমগ্র বিশ্বের এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে এর চাহিদা অনেক বেশি। মাশরুম এক ধরনের উদ্ভিদ কিন্তু তবুও দেখতে মাংসের মতো এবং স্বাদেও দুর্দান্ত। মানে আপনি একে ভেষজ উদ্ভিদ বলতে পারবেন না। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ভিটামিন ডি এর মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

মাশরুম বীজ কোথায় পাওয়া যায়

মাশরুম বীজের দাম

মাশরুম বীজের দাম প্রতি কেজি প্রায় ৭৫ টাকা, যা ব্র্যান্ড এবং জাত অনুসারে পরিবর্তিত হয়। অতএব, মাশরুম চাষ শুরু করার জন্য, আপনাকে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন ধরনের মাশরুম চাষ করতে চান।

মাশরুম চাষের উপকরণ

প্রধানত চারটি উপকরণ দরকার এই ধরনের মাশরুম চাষ করার জন্য —

১) স্পন (spawn) বা মাশরুমের বীজ

২) খড়

৩) পলিথিনের ব্যাগ

৪) কীটনাশক 

মাশরুম কোথায় পাওয়া যায় 

চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যায় এমন দোকানে, মাশরুম প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এবং অনলাইন শপিং সাইট থেকে মাশরুমের বীজ কিনতে পাওয়া যাবে। বাকি উপকরণগুলিও সহজে জোগাড় করা কিন্তু মোটেই কঠিন নয়।

কোথায় মাশরুম বিক্রি করবেন

মাশরুমের চাহিদা অনেক জায়গায়। গৃহস্থালি, ফাস্টফুডের দোকান, হোটেল, ওষুধ কোম্পানি ইত্যাদির মতো উপযুক্ত জায়গায় বিক্রি করা যেতে পারে। এছাড়াও বেশিরভাগ মাশরুম চাইনিজ খাবারে ব্যবহার করা হয়। এর অন্যান্য উপকারী বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এটি অনেক দেশে রপ্তানিও করা হয়, অর্থাৎ এটি বিক্রি করার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে।

কীভাবে করবেন মাশরুম চাষ

মাশরুম চাষের পদ্ধতি: প্রথমে ৫০ কিলোগ্রাম এক বছরের পুরনো আমন ধানের খড় ৩২ টি আঁটিতে ভাগ করে নিতে হবে। ওই খড় পরিষ্কার জলে ১২ থেকে ১৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর বাড়তি জল ঝড়িয়ে নেওয়া হয়। মাশরুম চাষে ফোটানো জল ঠান্ডা করে ব্যবহার করলে রোগ লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। এবার পাটাতন বা মাচার ওপর আসেই খড়ের আঁটি একদিকে মাথা বা আগা রেখে পাশাপাশি বিছিয়ে দিতে হবে। আবার বিপরীত দিকে মাথা রেখে আগে বিছানো চার আঁটির উপর আরও চার আঁটি খড় বিছোতে হবে। পাটাতনের ধার বরাবর খড়ের বাড়তি অংশ কাস্তে দিয়ে কেটে দিতে হবে। এইভাবে বিছানো আট আঁটি খড়ের একটি স্তর তৈরি হল। ওই স্তরের উপর ধার বরাবর তিন থেকে চার সেন্টিমিটার ভিতরে সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো ও মাশরুমের বীজ দেওয়া হয়। প্রথম স্তরের কাজ এইভাবে শেষ হয়।

এরপরে ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় স্তরের আট আঁটি খড় প্রথম স্তরের আড়াআড়ি বিছিয়ে আগের মতো একইভাবে মাশরুমের বীজ ও ডালের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিতে হবে। তৃতীয় স্তরের আট আঁটি খড় প্রথম স্তরের সমান্তরাল একইভাবে বিছিয়ে বীজ ও ডালের গুঁড়ো আগের মতো ছিটিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় স্তরের সমান্তরাল চতুর্থ স্তরে আট আঁটি খড় একইভাবে বিছানো হয়। এই স্তরে বীজ বা ডালের গুঁড়ো ছিটানো হয় না। তিনটি স্তরের মোট ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম বীজ ও সমপরিমাণ ডালের গুঁড়ো প্রয়োগ করা হয়। প্রতিটি স্তরের খড়ের আঁটিগুলি যাতে ভেঙে না পড়ে সেজন্য এক বা একাধিক জায়গায় দড়ি বা খড় দিয়ে আলতো বাঁধন দিতে পারলে ভাল হয়। স্তরগুলি সাজানোর সময় পুরো স্তর জোরে চাপ দিয়ে ঘনসন্নিবিষ্ট করা যেতে পারে। পলিথিনের চাদর দিয়ে পুরো স্তরগুলি ঢেকে দেওয়া হয়।

প্রথম চারদিন ঢাকা খোলা বা জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তারপর প্রতিদিন পলিথিনের চাদর খুলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাওয়া খাওয়ানোর পর প্রয়োজন মতো জল হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ফের পলিথিন চাদর ঢেকে দিতে হবে। আট থেকে ১০দিনের মধ্যে স্তূপে ছত্রাকের কুঁড়ি জন্মায়। কুঁড়ি জন্মানোর পর আর পলিথিন ঢাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সকালে বিকেলে প্রয়োজন মতো জল প্রতিটি স্তূপে ছিটিয়ে দিতে হয়। ১৫ দিনের মাথায় মাশরুম তোলার উপযুক্ত হয়ে যায়। পাঁচ থেকে সাতদিনের বিরতি দিয়ে আরও ১৫ দিন পর্যন্ত অল্প করে মাশরুম উৎপন্ন হয়। এইরকম এক একটা স্তূপে তিন থেকে চার কিলোগ্রাম পর্যন্ত মাশরুম জন্মায়।

সতর্কতা: মাশরুম চাষে যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন তা হল পাটাতন সরাসরি সূর্যের আলো বা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা। ঠিক সময়ে পরিমিত মাত্রায় স্তূপে জল প্রয়োগ। স্তূপের তলায় কোনও মতেই জল জমতে না দেওয়া। যথাসময়ে পলিথিন চাদর ঢাকা দেওয়া ও সরিয়ে নেওয়া। একটি স্তূপে ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়। বিরতির পর আবার অল্প হারে ফলন পাওয়া গেলেও কোনও অবস্থাতেই একমাসের বেশি কোনও স্তূপে রাখা উচিত নয়। পুরনো স্তূপের খড় কম্পোষ্ট পিটের গর্তে ফেলে দিয়ে আবার নতুন স্তূপ তৈরি করা হয়। তাই একসঙ্গে মাশরুম ও কম্পোষ্ট দুইই উৎপন্ন হয়।

মাশরুম চাষে  আয় ব্যয় 

প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ বা খরচ (মাশরুম চাষ ব্যবসা আইডিয়া)

এতে বিনিয়োগের পরিমাণ আপনার সামর্থ্য এবং ব্যবসার স্তর অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। এই ব্যবসায় (মাশরুম ফার্মিং বিজনেস) আপনাকে শুধুমাত্র এটির যত্ন নেওয়ার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে এবং এটির বৃদ্ধির জায়গা করে তুলতে হবে৷ এ ছাড়া কীটনাশক ব্যবহারে ব্যয় হবে।  আপনি যদি একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেন তবে আপনি ১০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন৷ একই সময়ে, বড়, ব্যবসার জন্য ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা উপযুক্ত হবে৷

স্বল্প বিনিয়োগে ব্যবসা

ঘরে বসেও মাশরুম চাষের ব্যবসা করা যায়। আপনাকে শুধু মনে রাখতে হবে যে এটি শুধুমাত্র আর্দ্রতায় জন্মায়। এছাড়াও আপনি অনেক জৈব অজৈব যৌগ, নাইট্রোজেন পুষ্টি উপাদান কিনতে পারেন। এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

মাশরুম চাষে লাভ 

এই ব্যবসা প্রতি বছর ১২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অর্থাৎ কম সময়ে এই ব্যবসায় ভালো অবস্থান অর্জন করতে পারবেন। আপনি যদি ১০০ বর্গমিটারে ব্যবসা শুরু করেন, তাহলে আপনি প্রায় বছরে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা লাভ করতে পারেন, তবে মাশরুম চাষ খুবই লাভজনক (Profitable Mushroom Cultivation) এটা নির্ভর করবে প্রযুক্তির ওপর আপনার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো।

মাশরুমের উপকারিতা

মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। খেতেও সুস্বাদু ও সহজপাচ্য। প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ উপযোগী। ফলিক আ্যসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী। বাজারে মাশরুমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তাই বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। বহু বেকার যুবক-যুবতী মাশরুম চাষ করে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারছেন।

Kolkatacorner.com

Post a Comment

0 Comments