কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা | শরীরকে সুস্থ রাখতে কচুশাকের জুড়ি মেলা ভার

কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

কচু শাক: সাধারণত বর্ষাকালে সব্জিতে ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে বীজ সবজিতে। আসলে, এই ধরনের শাকসবজি খেলে পেটে ইনফেকশন, পেটে ব্যথা এবং আরও অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও এগুলো বমিসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।  এমতাবস্থায় ক্যাপসিকাম, ঢেঁড়স ও লাউয়ের পরিবর্তে কচু শাক বা কচুর বিভিন্ন অংশের তরকারি খেতে পারেন। কারণ এগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য নানাভাবে উপকারী। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলাদা আলাদা করে কচু শাকের বিভিন্ন অংশের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানবো। এছাড়াও জানবো শরীরের জন্যে কি কি ভাবে উপকারী।

কচুশাকের উপকারিতা

কচুশাক বা কচু আমাদের খুবই পরিচিত একটি সবজি বা গাছ বলা যেতে পারে। এই গাছের প্রতিটি অংশ, যেমন পাতা, কান্ড, মূল ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। বাড়িতে প্রায় সব গ্রাম্য এলাকাতেই কচু জন্মাতে দেখা যায়। গ্রামের বাড়ির আনাচকানাচে, রাস্তার পাশে ও পুকুরধারে কচু জন্মায়। তবে অনেক প্রজাতির কচু আছে, যা যত্নের সঙ্গে চাষ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের চাষ করা কচুই আমরা নানা ধরনের রান্নায় ব্যবহার করে থাকি। কচু ডাঙা ও জল দুই স্থানেই বেশ সহজে জন্মাতে পারে। তবে মাটিতে জন্ম নেওয়া কচুর সংখ্যাই বেশি। কিছু কচু আছে, যেগুলো বনজঙ্গলে জন্মে থাকে, এগুলো বুনো কচু নামে পরিচিত। এধরনের কচু মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। মানুষের খাওয়ার উপযোগী জাতের মধ্যে মুখিকচু, দুধকচু, মানকচু, জলকচু, পঞ্চমুখিকচুওলকচু উল্লেখযোগ্য।

উপরে যেমনটা বলা হল, কচুর কোনো অংশই ফেলনা নয়, কচুর মূল থেকে শুরু করে, কচুর কাণ্ড, পাতা, ফুল, লতি—সবকিছুই খাওয়ার উপযুক্ত। কচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তবে অনেকেই মনে করেন, কচু খাওয়া বেশ ঝামেলার কাজ, তাই অন্য সব সবজি খেলেও কচু এড়িয়ে চলেন। আগাগোড়া খাওয়া যায় এই সবজির পুষ্টিগুণ অবাক করার মতো।

কচুর পুষ্টিগুণ 

কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে, এছাড়াও চোখসম্পর্কিত জটিলতা কমায়। কচুশাকে থাকা স্যাপোনিনস, টেনিনস, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্লাভোনয়েড উচ্চ রক্তচাপ কমায়। কচুর ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে জল থাকে, তাই গরমের সময় কচুর ডাঁটা রান্না করে খেলে শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ হয়। নিয়মিত কচুশাক খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও কমে। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, এ কারণে এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত শাকটি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। এটি হজমশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। কচুশাক যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, কেননা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে এতে। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ক্যালসিয়াম ও লৌহের চাহিদা কচুশাক সহজেই মেটাতে পারে।

কচুর মূলের পুষ্টিগুণ 

কচুতে আছে আয়রন, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে। যাঁদের রক্তশূন্যতা আছে, তাঁরা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পাবেন। কচু খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে, তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ওল কচুর রস বেশ উপকারী। নিয়মিত কচু খেলে কোলন ক্যানসার ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। জ্বরের সময় রোগীকে দুধকচু রান্না করে খাওয়ালে জ্বর দ্রুত ভালো হয়ে যায়। কচুতে আছে প্রচুর ফাইবার, ফোলেট ও থায়ামিন, যা মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান।

কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা (কচুর লতির পুষ্টি উপাদান)

পুষ্টিবিদদের মতে, কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা দেহের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। খেলোয়াড়, গর্ভাবস্থা, বাড়ন্ত শিশু ও কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি খুবই উপকারী একটি উপাদান। এতে ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে, যা দেহের হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সক্ষম। এর মধ্যে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি আছে। এই আঁশ খাবার খুব সহজে হজম করে, দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যেকোনো বড় ধরনের অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এই কচুর লতি।

কচুর মুখির পুষ্টিগুণ 

কচুর মুখি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, যেমন এ, সি ও বি থাকে। কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন ও ক্রিপ্টোজেন্থিন নামের খনিজ উপাদান থাকে কচুর মুখিতে। এই উপাদানগুলো ভালো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে। এতে প্রোটিনও থাকে এবং এটি গ্লুটেনমুক্ত খাবার।

কচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা

এবারে জেনে নেওয়া যাক কচুশাকের কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখে 

কচুশাক বা পাতা গাঢ় শাক-সবজির ক্যাটাগরিতে আসে, যার নিয়মিত গ্রহণ মানে খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কচু শাক ডায়েটারি নাইট্রেটের একটি ভালো উৎস যা রক্তচাপ কমায়। এছাড়াও, এই পাতাগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট রয়েছে যা ধমনীর রক্ত সঞ্চালন ঠিক করতে সহায়তা করে।

ওজন কমাতে সহায়ক

কচুশাকে ক্যালোরি কম থাকে, যা যারা কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে চায় তাদের জন্য এটি উপকারী করে তোলে। এছাড়াও, কচুশাকে রয়েছে ফাইবার যা আমাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য পেটকে পরিপূর্ণ রাখে এবং খাবারের লোভ কমায়।

চোখের জন্য উপকারী

কচুশাক চোখের জন্য নানাভাবে উপকারী। এই পাতায় রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। এটি খেলে বয়স বাড়ার সঙ্গে যে সমস্যা হয় তা এড়াতে পারেন। এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রির‌্যাডিক্যালের কারণে হওয়া ক্ষতি থেকে চোখকে রক্ষা করে।

উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে উপকারী

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় আক্রান্তদের জন্য কচুশাক খুবই উপকারী। এই পাতায় অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও, শুকনো কচুশাকের গুঁড়া সেবন লিপিড কমাতে সাহায্য করে। এইভাবে এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে উপকারী।

ফাইবার সমৃদ্ধ

কচুশাকে রয়েছে ফাইবার যা পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়ক। এটি মেটাবলিজম ঠিক করে এবং হজমে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতেও সহায়ক এবং বাউস মুভমেন্ট ঠিক করে পেট পরিষ্কার করে।

গর্ভাবস্থায় কচুশাকের উপকারীতা 

কচুশাকে ভালো পরিমাণে আয়রন থাকে, যা রক্তশূন্যতা দূর করে। এটি নিয়মিত খেলে শরীরে লোহিত কণিকার পরিমাণ ঠিক থাকে এবং তখন শরীরে দুর্বলতা থাকে না। এছাড়াও এর ফোলেট অনাগত শিশুদের ডিএনএ এবং আরএনএ তৈরিতে সাহায্য করে এবং শিশুদের সুস্থ রাখে।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী

কচুপাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ, যা চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী। এটি খুশকি কমায় এবং ছত্রাকবিরোধী বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ যা ত্বকের জন্য উপকারী। আপনি এই পাতাগুলি বিভিন্ন উপায়ে তৈরি করে খেতে পারেন।  তাই বিশেষ করে বৃষ্টিতে অবশ্যই কচুশাক খাবেন।

সতর্কতা 

কচুশাক খাওয়ায় সামান্য কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হয়। যেমন, যাঁদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁদের কচু না খাওয়াই ভালো। কচু খাওয়ার পর কিছুটা বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের সতর্ক থাকতে হবে। খাওয়ার পর অ্যাসিডিটির ওষুধ খেয়ে নিলে হবে। কচু রান্না করার আগে কিছু পরিমাণ লেবুর রস, ভিনেগার অথবা তেঁতুল গোলা পানি দিলে অপালেটের দানা দূর করা যায়। আর এই অপালেটের দানা দূর হওয়ার কারণে কচু খেলেও গলা চুলকাবে না।

Post a Comment

0 Comments