যোনি পূজা কেন করা হয়? | মোট কতগুলি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ

যোনি পূজা রহস্য

যোনি পূজা কোথায় করা হয়

কামাখ্যা শক্তিপীঠ, ৫১ টি শক্তিপীঠে'র একটি। দেবী সতীর যোনি অংশটি কামাখ্যা শক্তিপীঠে পড়েছিল এবং যোনিটি আজও পূজিত হয়।

আসামের গুয়াহাটি শহরের কামাখ্যা নামক স্থানে একটি মন্দির রয়েছে, যেখানে আজও যোনির পূজা হয়। প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে, কথিত আছে যে দেবী সতীর যোনি অংশ কামাখ্যায় পড়েছিল। হিন্দু ধর্ম ও পুরাণ অনুসারে, যেখানেই সতীদাহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা তার পরিধেয় বস্ত্র ও অলঙ্কার পতিত হয়েছে, সেখানেই শক্তিপীঠের অস্তিত্ব রয়েছে । এই মন্দিরে, দেবী সতীকে যোনি রূপে পূজা করা হয়, যদিও এখানে দেবীর কোনো মূর্তি নেই। এখানে শুধুমাত্র একটি যোনি আকৃতির বোল্ডার অর্থাৎ পাথরের স্তূপ আছে। যার উপর লাল রঙের একটি স্রোত নেমে আসে।  ভারতীয় ইতিহাস অনুসারে, এই মন্দিরটি ১৬ শতকে একবার ধ্বংস হয়েছিল। তারপর কয়েক বছর পরে, ১৭ শতকে বিহারের রাজা নারায়ণ নরসিংহ এই মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।

বলা হয় যে এই মন্দিরের বাইরে গণেশ ও ভগবান শঙ্করের মূর্তিও তৈরি করা হয়েছে।

কালকেয় পুরাণে শিবের যুবতী বধূর মুক্তির শক্তিকে কামাখ্যা বলা হয়েছে। 

দেবী সতী দক্ষ রাজার অমতে মহাদেবকে বিবাহ করেছিলেন। প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশে একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন দক্ষ রাজা। যজ্ঞের আগুনে আত্মঘাতী হন সতী। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন মহাদেব। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ভয়ে ভগবান বিষ্ণু প্রলয় থামাতে, সুদর্শন চক্র পাঠিয়ে দেন। দেবীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। এই সব কটি জায়গাকে সতীপীঠ বলা হয়। সতীর ৫১ পীঠ হিন্দু ধর্মে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাগুলি প্রত্যেক হিন্দুর কাছে পরম পবিত্রের জায়গা। বিভিন্ন জায়গা জুড়ে রয়েছে এই ৫১ পীঠ। ভারতবর্ষ-সহ বাংলাদেশ,পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় এই ৫১টি পীঠ অবস্থিত।

কথিত আছে যে সতীর যোনি অংশটি আসামের কামাখ্যায় পড়েছিল যেখানে এই মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে এবং আজও লক্ষ লক্ষ ভক্ত সেখানে যান এবং সেখানে সর্বদা ভক্তদের ভিড় থাকে।

এই মন্দিরের কাছে একটি পুকুর রয়েছে যেখানে পাঁচ দিন ধরে দুর্গা মাতারও পূজা করা হয় এবং প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত দর্শনের জন্য এখানে আসেন।  এই মন্দিরে কামাখ্যা মাকে ছাগল, কচ্ছপ ও মহিষ নিবেদন করা হয় এবং কিছু মানুষ কামাখ্যা দেবীর মন্দিরে পায়রা, মাছ ও আখও নিবেদন করে। একই সঙ্গে এটাও বলা হয় যে, প্রাচীনকালে এখানে মানব শিশুকেও বলি দেওয়া হতো, কিন্তু এখন এই প্রথা বন্ধ হয়ে গেছে।

আসামের কামাখ্যা শক্তিপীঠ ছাড়াও আরও ৫০ টি শক্তিপীঠ বা সতীপীঠ -এর বর্তমান অবস্থান দেওয়া  হল -

৫১ শক্তিপীঠ এর বর্তমান অবস্থান
কোথায় সতীর কোন অংশ পড়েছিল

১। হিঙ্গুলা(হিংলাজ)— সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র, করাচি, পাকিস্তান।

২। করবীর/সর্করারে- দেবীর ত্রিনেত্র, করাচি, পাকিস্তান।

৩। সুগন্ধা- দেবীর নাসিকা, বরিশাল,বাংলাদেশ।

৪। অমরনাথ- সতীর কন্ঠ, শ্রীনগর।

৫। জ্বালামুখী- সতীর জিহ্বা, পাঠানকোট।

৬। জালন্ধর- সতীর বামস্তন, জালন্ধর, পঞ্জাব।

৭। বৈদ্যনাথ- সতীর হূদপিণ্ড, দেওঘর, ঝাড়খণ্ড।

৮। মানস- সতীর ডান হাত, মানস সরোবর।

৯। নেপাল- সতীর জানুদ্বয়, গুজ্যেশ্বরী মন্দির, নেপাল।

১০। উৎকল বিরজাক্ষেত্র- সতীর নাভী, পুরীর মন্দির চত্বরে।

১১। গণ্ডকী- সতীর গণ্ডদেশ, মুক্তিনাথ মন্দির, নেপাল।

১২। বহুলা- সতীর বাম বাহু, কেতুগ্রাম, বর্ধমান।

১৩। উজানী- দেবীর ডান কনুই, গুসকরা, বর্ধমান।

১৪। চট্রল/চট্রগ্রাম- সতীর ডান বাহু, চট্রগ্রাম, বাংলাদেশ।

১৫। ত্রিপুরা- সতীর ডান পা, ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির, ত্রিপুরা।

১৬। ত্রিস্রোতা- সতীর বাম পা, জলপাইগুড়ি।

১৭। কামরূপ কামাক্ষা- সতীর যোনি, গুয়াহাটি।

১৮। যুগাদ্যা- সতীর ডান পাদাঙ্গুষ্ঠ, ক্ষীরগ্রাম, বর্ধমান।

১৯। কালিঘাট- সতীর ডান পাদাঙ্গুলি, কালিঘাট, কলকাতা।

২০। প্রয়াগ- দেবীর হাতের আঙুল, এলাহাবাদ।

২১। জয়ন্তী/জয়ন্তাতে- সতীর বাঁ জঙ্ঘা, শ্রীহট্র, বাংলাদেশ।

২২। কিরীট/কিরীটকোণা- সতীর কিরীট অঙ্গ, মুর্শিদাবাদ।

২৩। বারাণসী- দেবীর কর্ণ, বারাণসী।

২৪। কন্যাশ্রম- দেবীর পৃষ্ঠদেশ, তামিলনাডু।

২৫। কুরুক্ষেত্র- দেবীর গুল্ফ, হরিয়ানা।



২৬। মনিবেদ/মনিবেদিক- দেবীর মনিবদ্ধ, রাজস্থান।

২৭। শ্রীশৈল- দেবীর কর্ণকুণ্ডল, শ্রীহট্র, বাংলাদেশ।

২৮। কাঞ্চিদেশ- দেবীর কঙ্কাল, কঙ্কালীতলা, বোলপুর।

২৯। কালমাধব- দেবীর বাঁ নিতম্ব, মধ্যপ্রদেশ।

৩০। শোন- দেবীর ডান নিতম্ব, মধ্যপ্রদেশ।

৩১। রামগিরি- দেবীর ডান স্তন, উত্তরপ্রদেশ।

৩২। বৃন্দাবন- দেবীর কেশজাল, ভূতেশ্বর মন্দির।

৩৩। শূচি বা অনল- দেবীর ওপরের দাঁতের পাটি, কন্যাকুমারী, ত্রিবান্দ্রম।

৩৪। পঞ্চসায়র- দেবীর অধোদন্তপংক্তি, সঠিক অবস্থান অজানা।

৩৫। করতোয়াতট- সতীর তল্প, বগ্ডুড়া, বাংলাদেশ।

৩৬। শ্রীপর্বত- সতীর ডান তল্প, গুন্টুর, অন্ধ্রপ্রদেশ।

৩৭। বিভাষ- দেবীর বাম গুল্ফ, তমলুক, মেদিনীপুর।

৩৮। প্রভাস- দেবীর উদর, কাথিয়াওয়ারা।

৩৯। ভৈরব পর্বত- দেবীর ঊর্ধ্ব ওষ্ঠ, উজ্জয়িনী, মধ্যপ্রদেশ।

৪০। জনস্থানে/জলেস্থলে- সতীর চিবুক, নাসিক, মহারাষ্ট্র।

৪১। গোদাবরীতট- সতীর বাম গণ্ড, রাজমহেন্দ্রী, অন্ধ্রপ্রদেশ।

৪২। রত্নাবলী- দেবীর ডান স্কন্ধ, খানাকুল, হুগলী।

৪৩। মিথিলা- দেবীর বাম স্কন্ধ, সঠিক স্থান অজানা।

৪৪। নলহাটি- দেবীর নলা, নলহাটি, বীরভূম।

৪৫। কর্ণাট- দেবীর কর্ণদ্বয়, সঠিক স্থান অজানা।

৪৬। বক্রেশ্বর- দেবীর মন/ভ্রূমধ্যস্থ, দুবরাজপুর, বীরভূম।

৪৭। যশোহর- দেবীর পানিপদ্ম, খুলনা, বাংলাদেশ।

৪৮। অট্রহাস- দেবীর ওষ্ঠ, লাভপুর, বীরভূম।

৪৯। নন্দপুর- দেবীর হার, সাঁইথিয়া, বীরভূম।

৫০। লঙ্কা- দেবীর নূপুর, শ্রীলঙ্কা।

৫১। বিরাট- দেবীর উত্তর পাদাঙ্গুলি, জয়পুর।

মোট কতগুলি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠ

শক্তিপীঠ হিন্দুধর্মের পবিত্রতম তীর্থগুলির অন্যতম। লোকবিশ্বাস অনুসারে, শক্তিপীঠ নামাঙ্কিত তীর্থগুলিতে দেবী দাক্ষায়ণী সতীর দেহের নানান অঙ্গ প্রস্তরীভূত অবস্থায় রক্ষিত আছে। সাধারণত ৫১টি শক্তিপীঠের কথা বলা হয়ে থাকলেও, শাস্ত্রভেদে পীঠের সংখ্যা ও অবস্থান নিয়ে মতভেদ আছে। পীঠনির্ণয় তন্ত্র গ্রন্থে শক্তিপীঠের সংখ্যা ৫১। শিবচরিত গ্রন্থে ৫১টি শক্তিপীঠের পাশাপাশি ২৬টি উপপীঠের কথাও বলা হয়েছে। কুব্জিকাতন্ত্র গ্রন্থে এই সংখ্যা ৪২। আবার জ্ঞানার্ণবতন্ত্র গ্রন্থে পীঠের সংখ্যা ৫০।

Post a Comment

0 Comments