নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা | নিমপাতার গুনাগুন ও উপকারিতা

নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা: আমাদের মধ্যে অনেকেই খুব স্বাস্থ সচেতন, তারা চান তাদের শরীর খুব ফিট, স্বাস্থবান ও নীরোগ থাকুক। কিন্তু বিভিন্ন অপ্রাকৃতিক ঔষধ ব্যবহারের ফলে তাদের শরীর নীরোগ থাকার পরিবর্তে শরীরে বিভিন্ন প্রকার পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখা দেয়। যার ফলে ত্বক, চুল, পেট ও চোখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে সেই সমস্ত স্বাস্থ সচেতন মানুষদের জন্যে একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদের উপকারিতা সম্পর্কে বলবো। উল্লিখিত ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদটি আমাদেরই হাতের কাছে থাকা নিম। হ্যাঁ, আমাদের বাড়ির উঠোনে বা বাগানে থাকা সেই নিম গাছ, এই গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে জেনে নিন- নিমপাতার উপকারিতা, নিমপাতার গুনাগুন ও নিমপাতার অপকারিতা সম্পর্কে। 

নিমপাতার গুনাগুন ও উপকারিতা 

নিমপাতা: আমাদের ভারতবর্ষের বিশেষত্ব হল এখানে প্রাকৃতিক ওষুধের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, তা গাছের আকারে হোক, বা ফল-ফুল বা যে কোনো ভেষজ আকারে হোক। তাদের মধ্যে নিম হল ওইরকমই এক ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিশেষ বিষয় হল শুধু নিমের পাতাই নয়, ফল, এর তেল, শিকড়, ছাল এই সব জিনিসকেও খুব উপকারী বলে মনে করা হয়। শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের বহু দেশে নিম গাছ দেখতে পাওয়া যায়, এমনকি ঔষধ তৈরির জন্যে নিমগাছের চাষ করা হয়। কিন্তু নিম খাওয়ার ব্যাপারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে খালি পেটে নিমপাতা বা নিমগাছের কোনো অংশ খাওয়ার ব্যাপারে। কীভাবে নিমগাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করবেন, কখন এবং কতটা করবেন, আসুন জেনে নেওয়া যাক নিম সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।

1. স্বাস্থ্যের জন্য নিমপাতা 

  • নিমপাতা খালি পেটে খেলে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে উপকারী প্রমাণিত হয়। নিমপাতা কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না এবং শরীর থেকে সমস্তরকম দূষিত পদার্থ দূর করতে সহায়ক। এই কারণেই এটি খেলে রক্ত  বিশুদ্ধ হয়, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • নিমপাতা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। হ্যাঁ, যদি প্রতিদিন খালি পেটে কয়েকটি নিম পাতা চিবানো হয়, তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী, কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য।
  • নিমের কান্ড দাতুন অর্থাৎ দাঁত মাজার ব্রাশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নিমের তেতো স্বাদের জন্যে দাঁতে থাকে পোকা মারা যায়। তাই প্রাচীনকালে মানুষ ব্রাশের পরিবর্তে শুধুমাত্র নিমের কান্ড দাতুন হিসেবে ব্যবহার করত। এছাড়াও, এটি মাড়ির জন্য খুব ভালো প্রমাণিত হয়।
  • নিম পাতা পাকস্থলীর পরিপাকতন্ত্র নিরাময় বা সক্রিয় করে। এটি পেটে আলসার, জ্বালাপোড়া, গ্যাসের মতো সমস্যা দূর করে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়। নিম পেট থেকে বিষাক্ত জিনিস বের করে পেট সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে।
  • ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে নিমপাতার গুঁড়ো খাওয়া উচিত। তিন মাস ধরে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিমপাতা খেলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এটি সীমিত পরিমাণে খেতে হবে এবং সম্ভব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
  • নিমের তেল কানের ব্যথায় আরামদায়ক। অনেকের কানের সমস্যা থাকে, তাই কানে নিমের তেল দিন।
  • যদি আপনার কোনো ক্ষত বহু সময় পরও না সারে তাহলে সেই জায়গায় নিমপাতার পেস্ট নিমপাতার বাটা লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
  • আপনি যদি ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, তাহলে প্রতিদিন সকালে নিমের গুঁড়ো খেতে পারেন।
  • এখন করোনার সময়, তাই যদি নিমের গুঁড়া হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে গরম জলে পান করা হয়, তাহলেও খুব উপকার পাওয়া যায়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়।
  • নাক দিয়ে রক্ত   পড়ার সমস্যা থাকলে জোয়ান ও নিমপাতা সমপরিমাণে মিশিয়ে খান, আরাম পাবেন। শুধু তাই নয়, এর পাউডার তৈরি করে কপালে লাগালে মাথাব্যথা ও ক্লান্তি দূর হয়।
  • নিমপাতার রস -এর সেবন বাত, ম্যালেরিয়া, পেটের কৃমির সংক্রমণ থেকেও মুক্তি দেয়।

2. চুলের জন্য নিমপাতার ব্যবহার

  • নিমের বীজ পিষে চুলে লাগালে চুলের জট মুক্ত হয়।
  • নিমপাতার সঙ্গে তেঁতুলের পাতা মিশিয়ে পিষে চুলে লাগিয়ে দেড় ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেললে চুল লম্বা, ঘন ও কালো হয়। এরকম কিছুদিন করতে হবে।
  • নিমপাতা ভালো করে জলে সিদ্ধ করে তারপর ঠাণ্ডা করে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে শুধু ময়লা পরিষ্কার হবে না, চুলও মজবুত হবে। এবং যদি মাথায় উঁকুন থাকে তাও দূর হবে।
  • নিম পাতার পেস্ট লাগালে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হয় এবং চুল পড়া বন্ধ হয়।
  • নিমের ফলের তেল নিয়মিত চুলে লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং নতুন চুল গজাতে শুরু করে।
  • নিম বীজের তেল চুলে একটানা কয়েকদিন দিয়ে রাখলে সাদা চুল কালো হতে শুরু করে।
  • নিমের মধ্যে রয়েছে লিনোলিক অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, যার কারণে চুল ঘন হয় এবং শুষ্কতা থেকে মুক্তি পায়।
  • নিমের ছত্রাক-বিরোধী গুণ রয়েছে, যার কারণে খুশকির সমস্যা নিরাময় হয়, যার কারণে এটি প্রদাহ, চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।

3. ত্বকের জন্য নিমপাতা 

  • ত্বকে নিমের তেল লাগালে শুষ্ক ত্বকের সমস্যার দূর হয়। নিম তেলের ব্যবহার শুষ্ক ত্বক উজ্জ্বল করতেও সহায়ক।
  • নিমে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার কারণে ত্বকের বার্ধক্যজনিত সমস্যাও দূর হয়, যার ফলে ত্বক তরুণ দেখায়। নিয়মিত মুখে নিমের তেল বা পেস্ট লাগালে ত্বকে বয়সের প্রভাব পড়ে না।
  • প্রায়শই কারও কারও মুখে ছোটো ছোটো ব্রণ বা ক্ষত হয়, এমন পরিস্থিতিতে নিম পাতা পিষে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও নিমপাতার সঙ্গে কিছু পরিমান কাঁচা হলুদ মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগালে মুখের উজ্জ্বলতা বাড়, এবং মুখ পরিষ্কার হয়।
  • নিমের রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ, যা ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
  • মুখের কালো দাগ দূর করতে চাইলে নিমের ফেসপ্যাক বা নিম যুক্ত ক্লিনজার লাগান। এর জন্য বাড়িতে নিম ও মাখন মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরী করতে পারেন।
  • নিমের তেলে রয়েছে ভিটামিন ই, যা ত্বককে হাইপারপিগমেন্টেশন থেকে রক্ষা করে। এই কারণেই মাস্ক, ক্লিনজার, স্ক্রাবের মতো বিউটি প্রোডাক্টে নিম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।  বেসন ময়দায় লেবু মিশিয়ে তার মধ্যে নিম পাতা পিষে মুখে লাগান, খুব উপকার হবে।
  • দাদ রোগে নিম পাতা একটানা লাগালে নিমপাতার অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ দাদ -এর সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
  • যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের জন্য নিম উপকারী, এটি অতিরিক্ত তেল বের হতে বাধা দেয়। এজন্য নিমপাতা ও লেবু দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে, এতে তৈলাক্ততা কমে যায়।
  • নিম পাতা পিষে তাতে কিছু গোলাপ জল মিশিয়ে মুখে লাগান, উজ্জ্বলতা বাড়বে।
  • ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও নিম ব্যবহার করা হয়, তাই শুষ্ক ত্বকের জন্য নিমপাতার পেস্ট -এ  মধু মিশিয়ে মুখে লাগান।
  • নিমপাতা গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে লাগালে মুখে উজ্জ্বলতা আসে।
  • নিমের পেস্ট ত্বকের অনেক রোগ, যেমন জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ক্ষত থেকে মুক্তি দেয়।
  • মুখের রং ফর্সা করতে নিম ও পেঁপের মাস্ক লাগালে খুব উপকার পাওয়া যায়।

4. নিমপাতার অপকারিতা

  • এটা ঠিক যে নিমের অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে এটি অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। আসুন, জেনে নেওয়া যাক এর অসুবিধাগুলো কী কী?
  • নিম চিনির মাত্রা কমায়, তাই আপনি যদি উপোস থাকেন তবে নিমপাতা খাওয়া উচিত নয়।
  • এমনকি মহিলারা গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী হলেও তাদের নিম খাওয়া এড়ানো উচিত।
  • চুল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নিম আপনার চোখে না পড়ে, কারণ এটি আপনার চোখকে জ্বালাতন করতে পারে।
  • অতিরিক্ত নিম খেলে মুখের রুচি শেষ হয়ে যায়।

নিম পাতার ছবি

FAQ

1. নিমপাতার উপকারিতা কি?

নিমপাতা স্বাদে তেতো, তাই বহু রকম শারীরিক রোগ দূর করতে সক্ষম।

2. নিম গাছ কোথায় পাওয়া যায়?

নিমগাছ ভারত সহ বিশ্বের বহু দেশে পাওয়া যায়। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে এবং শহরেও নিমগাছ দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে বন, বাগান, কংবা বাড়ির উঠোনে নিমগাছ হয়।

3. নিম গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম?

নিমপাতার বৈজ্ঞানিক নাম: Azadirachta indica. নিমপাতা একটি ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। নিম একটি বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ। আকৃতিতে ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।

4. নিমপাতা খেলে কি উপকার হয়?

নিমপাতা খেলে শরীরের সমস্ত অঙ্গ যেমন, চুল, ত্বক, চোখ, পেটের বহু সমস্যা দূর হয়।

5. নিম পাতা খেলে কি উপকারিতা পাওয়া যায়?

নিম পাতা খেলে সমস্ত শারীরিক রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

Post a Comment

0 Comments