প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি
প্রাণায়াম: শরীর সুস্থ রাখতে যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম খুবই উপকারী। শরীরের যেকোনো সমস্যা একদম গোড়া থেকে নির্মূল করতে প্রাণায়ামের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু তার জন্যে আমাদের সবার আগে প্ৰাণায়াম সম্পর্কে একটা ধারণা থাকা উচিত, এবং সেই প্রাণায়াম সম্পর্কিত ধারণাই রয়েছে আজ এই প্রতিবেদনে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো প্রাণায়াম কি বা কাকে বলে, প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি, প্রাণায়ামের কিছু নিয়মবিধি, প্রাণায়ামের উপকারিতা এবং প্রতিটি প্রাণায়ামের উপকারিতা সম্পর্কে।
প্রাণায়াম
প্রাণায়াম কি?
অষ্টাঙ্গ যোগের চতুর্থ অঙ্গ হল প্রাণায়াম।
আরও পড়ুনঃ শরীর ও মন সুস্থ রাখার উপায়
প্রাণায়াম কাকে বলে?
প্রাণায়াম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ঋষি পতঞ্জলি বলেছেন, 'তস্মিন সতি শ্বাসপ্রশ্বাসয়োর্গতিবিচ্ছেদঃ প্রাণায়ামঃ', অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে যখন বিচ্ছেদ করে দেওয়া হয়, তখন তাকে প্রাণায়াম বলা হয়। বিচ্ছেদে মানে নিয়ন্ত্রণ করা। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করাকেই প্রাণায়াম বলা হয়। এখানে মনে রাখতে হবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে বাতাস ভিতর আসছে আর বাতাস বেরিয়ে যাচ্ছে, প্রাণের ক্ষেত্রে এগুলির খুব একটা গুরুত্ব নেই; গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের শরীরের যে প্রাণন ক্রিয়া বা প্রাণের যে গতি চলছে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল আয়ত্ত করা। প্রাণ হল মহাজাগতিক শক্তি, প্রাণের মুখ্য দ্বার হল নাসিকা। নাসিকা ছিদ্র দ্বারা আসা-যাওয়া করতে থাকা শ্বাস-প্রশ্বাস হচ্ছে জীবন এবং প্রাণায়ামের আধারস্বরূপ। শ্বাস-প্রশ্বাসরূপী রজ্জুর আশ্রয় নিয়ে এই মন দেহগত অভ্যন্তরীণ জগতে প্রবিষ্ট করে সাধককে সেখানকার দিব্যতা অনুভব করাবে। এই উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাণায়াম বিধির আবিষ্কার প্রাচীন মুনি-ঋষিরা করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায়
আসলে সিদ্ধিলাভ হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে আটকানোই হচ্ছে প্রাণায়াম। যে বায়ু শ্বাস নিলে বাইরে থেকে শরীরের ভিতরে ফুসফুসে পৌঁছোয়, তাকে প্রশ্বাস এবং শ্বাস ছাড়লে যে বায়ু শরীরের ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় তাকে নিশ্বাস বলে। প্রাণায়াম করার জন্য শ্বাসকে শরীরের ভিতরে নেওয়াকে'পূরক', শ্বাসকে শরীরের ভিতরে আটকে রাখাকে'কুম্ভক'এবং শ্বাসকে বাইরে ছাড়াকে 'রেচক' বলা হয়। আর শ্বাসকে বাইরেই আটকে রাখাকে'বাহ্যকুম্ভক' বলে। প্রাণায়াম করার জন্য রেচক, পূরক, কুম্ভক ও বাহ্যকুম্ভক ক্রিয়া করা হয়ে থাকে। যখন শ্বাস শরীরে প্রবেশ করে, তখন শুধুমাত্র বায়ু বা অক্সিজেনই প্রবেশ করে না, এক অখন্ড দিব্যশক্তিও শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে, যা শরীরের জীবন শক্তিকে বজায় রাখে। প্রাণায়াম করার অর্থ শুধুমাত্র শ্বাস নেওয়া বা শ্বাস ছাড়াই নয়, বরং বায়ুর সঙ্গে সঙ্গে প্রাণশক্তি বা জীবন শক্তি গ্রহণ করাও হয়। এই জীবন শক্তি সর্বত্র ব্যাপ্ত এবং সদা বিদ্যমান থাকে। যাকে আমরা ঈশ্বর, ভগবান বা খোদা ইত্যাদি যে নামই প্রদান করি না কেন, সেই পরম শক্তি একই থাকে এবং তার সঙ্গে যুক্ত হওয়া ওর যুক্ত হয়ে থাকার অভ্যাস করাই হচ্ছে প্রাণায়াম।
প্রাণায়ামের কিছু নিয়মবিধি
প্রাণায়ামে বসার নিয়মবিধি
প্রাণায়াম করার সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখা উচিত। এর জন্য যেকোনো ধনাত্মক আসনে বসা যেতে পারে, যেমন- সিদ্ধাসন, পদ্মাসন, সুখাসন, বজ্রাসন ইত্যাদি। যদি কোনো আসনে বসতে অসুবিধা হয়, তাহলে চেয়ারেও সোজা হয়ে বসে প্রাণায়াম করা যেতে পারে। কিন্তু মেরুদন্ডের হাড়কে সর্বদা সোজা রাখতে হবে। আজকাল লোকেরা চলতে-ফিরতে বা প্রাতঃভ্রমণের সময়ও ঘুরতে ঘুরতে নাড়ি শোধন ইত্যাদি প্রাণায়াম করে থাকেন, এটি প্রাণায়াম করার ভুল পদ্ধতি। এর ফলে যেকোনো সময় প্রচন্ড ক্ষতি হতে পারে। প্রাণায়াম করলে প্রাণশক্তির উত্থান হয় এবং মেরুদন্ডের সঙ্গে যুক্ত চক্রগুলির জাগরণ হয়। সুতরাং প্রাণায়াম করার সময় সোজা হয়ে বসাটা অত্যন্ত আবশ্যক।
আরও পড়ুনঃ ব্যায়াম করার সঠিক সময় কখন
প্রাণায়ামের কিছু সাবধানতা
- প্রাণায়াম শুদ্ধ সাত্বিক নির্মল স্থানে করা উচিত, যদি সম্ভব হয় তবে জলের কাছে বসে অভ্যাস করা ভালো।
- শহরে যেখানে দূষণের প্রভাব বেশি, সেখানে প্রাণায়াম করার আগে ঘি এবং গুগগুল দ্বারা সেই স্থানটিকে সুগন্ধিত করতে হবে। আর না হলে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালাতে হবে ।
- প্রাণায়াম করার জন্য সিদ্ধাসন, বজ্রাসন বা পদ্মাসনে বসাই উপযুক্ত। তবে বসার জন্য যে আসন ব্যবহৃত হবে, সেটা যেন বিদ্যুতের কু-চালক হয়। যেমন- কম্বল, ম্যাট, কুশন ইত্যাদি।
- শ্বাস সব সময় নাক দিয়েই নেয়া উচিত। এতে শ্বাস ফিল্টার হয়ে ভিতরে ঢুকবে।
- যোগাসনের মতো এনাম করার জন্য কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা আগে ভোজন করা উচিত। প্রাতঃকালে শৌচাদির পর যোগাসন করার আগে যদি প্রাণায়াম করা যায়, তবে সেটা সর্বোত্তম হয়। শুরুতে ৫-১০ মিনিট অভ্যাস এবং ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে এক ঘন্টা পর্যন্ত করা যেতে পারে। প্রাণায়ম সর্বদা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাতেই করা উচিত, কম বা বেশি না করাই ভালো।
- প্রাণায়াম করার সময় মন শান্ত এবং প্রসন্ন থাকা উচিত। এমনিতে প্রাণায়াম দ্বারাও মন শান্ত, প্রসন্ন এবং একাগ্র হয়ে ওঠে।
- প্রাণায়াম করার সময় যদি ক্লান্তি অনুভব হয়, তবে পরের প্রাণায়াম শুরু করার আগে ৫-৬ বার স্বাভাবিক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিশ্রাম করে নেওয়া উচিত।
- প্রাণায়ামকে নিজের নিজের প্রকৃতি এবং ঋতু অনুযায়ী করা উচিত। কিছু প্রাণায়ম দ্বারা শরীরের গরমভাব বেড়ে ওঠে। আবার কিছু প্রাণায়ামে ঠান্ডা ভাব কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
- গর্ভবতী মহিলা, ক্ষুধার্ত ব্যক্তি, জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রাণায়াম করা উচিত নয়। রোগী ব্যক্তিদের প্রাণায়ামের সঙ্গে দেওয়া সতর্কতাগুলিকে মাথায় রেখে প্রাণায়াম করা উচিত।
- প্রাণায়ামের দীর্ঘ অভ্যাসের জন্যে পূর্ন ব্রহ্মচর্যের পালন করা উচিত। ভোজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, দুধ, ঘি এবং ফলের সেবন লাভকারী হয়।
- প্রাণায়ামে শ্বাসকে জোর করে আটকে রাখা উচিত নয়। প্রাণায়াম করার জন্য শ্বাসকে শরীরের ভিতরে নেওয়াকে 'পূরক', শ্বাসকে শরীরের ভিতরে আটকে রাখাকে 'কুম্ভক', এবং শ্বাসকে বাইরে ছড়াকে 'রেচক' এবং শ্বাসকে বাইরেই আটকে রাখাকে 'বাহ্যকুম্ভক' বলে।
- প্রাণায়ামের আগে বেশ কয়েকবার 'ওম' শব্দ উচ্চারণ করা উচিত। এতে মন শান্ত হয়।
- প্রাণায়াম করার সময় চোখ, মুখ, নাক ইত্যাদি অঙ্গের উপর কোনো প্রকারের টেনশন না এনে সহজ অবস্থায় রাখা উচিত। প্রাণায়াম অভ্যাস করার সময় গলা, মেরুদন্ড, বক্ষ, কটি সব সময় সোজা রাখা উচিত।
- প্রাণায়ামের অভ্যাস ধীরে ধীরে, কোন রকমের উতলা ভাব ছাড়া, ধৈর্য সহকারে সতর্কতার সঙ্গে করা উচিত।
- স্নানের পর ধ্যান-উপাসনার আগে প্রাণায়াম করা উচিত। প্রাণায়াম করার 15-20 মিনিট পরেও স্নান করা যেতে পারে। বই পড়ে কখনও নিজে নিজে প্রাণায়ামটি অভ্যাস করা উচিত নয়।
আরও পড়ুনঃ মেডিটেশন করার সঠিক সময়
প্রাণায়ামের উপকারিতা
প্রাণায়ামের গুরুত্ব এবং লাভ
প্রাণের আয়াম (নিয়ন্ত্রণ)-ই হল প্রাণায়াম। প্রতিমুহূর্তে জীবন আর মৃত্যুর যে অটুট সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে রয়েছে, সেটা প্রাণের সংযোগের দ্বারাই রয়েছে। সংস্কৃত ভাষায় 'জীবন' শব্দ 'জীব-প্রাণধারণ' ধাতু থেকে তৈরি হয়েছে আর 'মৃত্যু' শব্দ তৈরি হয়েছে 'মৃতং প্রাণত্যাগ' থেকে।
স্থূলরূপে প্রাণায়াম হল শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়ামের একটি পদ্ধতি, যার দ্বারা ফুসফুস শক্তিশালী হয়ে ওঠে, রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত হয়ে ওঠার ফলে আরোগ্য এবং দীর্ঘায়ুর প্রাপ্তি হয়। শরীরবিজ্ঞান অনুযায়ী মানব শরীরে দুটি ফুসফুস হল শ্বাসকে নিজের ভিতর নেওয়ার সেই যন্ত্র, যাতে ভরা বায়ু শরীরের সমস্ত অংশে পৌঁছে অক্সিজেন প্রদান করে এবং বিভিন্ন অবয়ব থেকে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বাইরে বের করে দেয়। এই ক্রিয়া ঠিক মতন চলতে থাকলে ফুসফুস মজবুত হয়ে ওঠে এবং রক্তশোধন কার্য চলতে থাকে।
প্রায়ই অধিকাংশ ব্যক্তি, গভীর শ্বাস প্রশ্বাস নিতে অভ্যস্ত থাকেনা, যার ফলে তাদের ফুসফুসের এক-চতুর্থাংশ ভাগই কাজ করে, বাকি তিন-চতুর্থাংশ ভাগ নিষ্ক্রিয় থাকে। মৌমাছির চাকের মতো ফুসফুসে প্রায় সাত কোটি তিরিশ লক্ষ 'স্পঞ্জের' মত প্রকোষ্ঠ থাকে। সাধারণ হালকা শ্বাস নিলে তাদের ভিতর প্রায় দুই কোটি ছিদ্রেই প্রাণবায়ুর সঞ্চার হয়, বাকি পাঁচ কোটি তিরিশ লক্ষ ছিদ্রে প্রাণবায়ু না পৌঁছানোর ফলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকে। ফলস্বরূপ, সেগুলির মধ্যে জড়তা ও মলজাতীয় দ্রব্য জমা হতে থাকে, যার ফলে ব্যক্তি টিবি, কাশি, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
এই প্রকার ফুসফুসের কার্যপদ্ধতির অপূর্ণতা রক্তশুদ্ধির উপর প্রভাব বিস্তার করে। হৃদপিণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফলস্বরূপ অকালমৃত্যু উপস্থিত হয়। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তির দীর্ঘ আয়ুর জন্য প্রাণায়াম এর গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। উদ্বেগ, চিন্তা, ক্রোধ, নিরাশা, ভয় এবং কামুকতা ইত্যাদি মনোবিকারের সমাধান প্রাণায়াম দ্বারা সহজেই করা যেতে পারে। শুধুমাত্র এই নয়, মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতা, সূক্ষ্ম নিরীক্ষন, ধারণা, মেধা ইত্যাদি মানসিক বৈশিষ্ট্যের বৃদ্ধি করে প্রাণায়াম দ্বারা দীর্ঘজীবী হয়ে উঠে জীবনের বাস্তবিক আনন্দ প্রাপ্ত করা যেতে পারে।
যদিও প্রাণায়ামের বিভিন্ন বিধি শাস্ত্রে বর্ণিত আছে এবং প্রত্যেক প্রাণায়ামের নিজস্ব একটি বিশেষত্ব আছে, তবুও সব প্রাণায়ামের অভ্যাস ব্যক্তি প্রতিদিন করতে পারেন না। যদি প্রাণায়ামের পূর্ণ অভ্যাস ব্যক্তি করতে পারেন তবে যেসব লাভ প্রাপ্ত করবেন সেগুলি হল-
- বাত, পিত্ত এবং কফ এই ত্রিদোষ নিরাময় করা সম্ভব।
- পাচনতন্ত্র সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে এবং সমস্ত প্রকারের উদর রোগ দূর হয়।
- হৃদপিন্ড ও ফুসফুস এবং মস্তিষ্ক সম্বন্ধীয় সমস্ত রোগ দূর হয়।
- মেদাধিক্য, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অম্লপিত্ত, শ্বাসরোগ, আ্যালার্জি, মাইগ্রেন, রক্তচাপ, কিডনির রোগ, মহিলা ও পুরুষের সমস্ত যৌন রোগ ইত্যাদি সাধারণ রোগ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো ভয়ঙ্কর সব অসাধ্য রোগ দূর হয়।
- শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- বংশানুক্রমিক ডায়াবেটিস এবং হূদরোগ ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- চুল পড়ে যাওয়া এবং পেকে যাওয়া, মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া, নেত্রজ্যোতির বিকার, স্মৃতিদৌর্বল্য ইত্যাদি থেকে বাচা যায়।
- মন স্থির, শান্ত, প্রসন্ন এবং উৎসাহিত হয়ে ওঠে, হলে ডিপ্রেশনজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- স্থূল এবং সূক্ষ্ম দেহের সমস্ত রোগ এবং কাম, ক্রোধ, লোভ-মোহ ও অহংকার ইত্যাদি নষ্ট হয়।
- শরীর কত সমস্ত বিকার, টক্সিনস্ ইত্যাদি নষ্ট হয়।
আরও পড়ুনঃ ওজন ও চর্বি কমানোর উপায়
প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি
সাধারণত প্রাণায়ামকে ১১ টি ভাগে ভাগ করা যায়, সেগুলি হল-
- ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম
- কপালভাতি প্রাণায়াম
- বাহ্য প্রাণায়াম
- অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম
- ভ্রামরী প্রাণায়াম
- নাড়ি শোধন প্রাণায়াম
- চন্দ্রভেদী বা চন্দ্রাঙ্গ প্রাণায়াম
- উজ্জায়ী প্রাণায়াম
- শীতলী প্রাণায়াম
- সীৎকারী প্রাণায়াম
- মূর্চ্ছা প্রাণায়াম
ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- সর্দি কাশি, অ্যালার্জি, শ্বাসরোগ, হাঁপানি, শ্লেষ্মা, সাইনাস ইত্যাদি সমস্ত প্রকারের কফ ঘটিত রোগ দূর হয়। ফুসফুস শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং শুদ্ধ বায়ুর প্রাপ্তির ফলে হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কেরও আরোগ্য লাভ হয়।
- থাইরয়েড, টনসিল ইত্যাদি গলার সমস্ত রোগ দূর হয়।
- রক্ত পরিশুদ্ধ হয় এবং শরীরের বিষাক্ত, বিজাতীয় দ্রব্য শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়।
- প্রাণ ও মন স্থির হয়।
আরও পড়ুনঃ ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম করার নিয়ম ও পদ্ধতি
কপালভাতি প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- মস্তিষ্ক ও মুখমন্ডলে তেজ, আভা ও সৌন্দর্য বেড়ে ওঠে।
- সমস্ত প্রকারের কফ রোগ, হাঁপানি, শ্বাসরোগ, আ্যালার্জি, সাইনাস, ইত্যাদি রোগ দূর হয়।
- ফুসফুস, হৃদপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের সমস্ত রোগ দূর হয়।
- মেদাধিক্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অম্লপিত্ত, কিডনি এবং প্রস্টেটের সঙ্গে সম্পর্কিত সব রোগ নিশ্চিতরূপে দূর হয়।
- হৃদপিন্ডের শিরাগুলির অবরোধ (ব্লকেজ) খুলে যায়।
- মন স্থির, শান্ত এবং প্রসন্ন থাকে। যার ফলে ডিপ্রেশন জাতীয় রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- এই প্রাণায়াম করলে আমাশয়, অগ্নাশয়, যকৃৎ, প্লীহা, অন্ত্র, প্রস্টেট এবং কিডনির রোগ বিশেষরূপে আরোগ্যপ্রাপ্তি হয়। দুর্বল অন্ত্রগুলিকে সকল বানানোর জন্যও এই প্রাণায়াম হল সর্বোত্তম।
আরও পড়ুনঃ কপালভাতি প্রাণায়াম করার নিয়ম
বাহ্য প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- মনের চঞ্চলতা দূর হয়।
- এই প্রাণায়াম পেটের রোগে বিশেষ লাভপ্রদ হয়।
- বুদ্ধি সূক্ষ্ম ও তীব্র হয়ে ওঠে।
- এই প্রাণায়াম শরীরের শোধন করে।
- বীর্যকে ঊর্ধ্বগামী করে তুলে স্বপ্নদোষ, শীঘ্রপতন প্রভৃতি ধাতু বিকারের নিবৃত্তি করে।
- বাহ্য প্রাণায়াম অভ্যাসে পেটের সব অবয়বের উপর বিশেষ জোর পড়ে। সুতরাং পেটকে বিশ্রাম এবং আরোগ্য প্রদান করার জন্য ত্রিবন্ধপূর্বক এই প্রাণায়াম করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ বাহ্য প্রাণায়াম করার নিয়ম
অনুলোম বিলোম এর উপকারিতা
- এই প্রাণায়াম দ্বারা বাহাত্তর কোটি, বাহাত্তর লক্ষ, দশ হাজার দুশো দশ নাড়ি পরিশুদ্ধ হয়। সম্পূর্ণ নাড়িগুলির শুদ্ধি হওয়ায় দেহ পূর্ন সুস্থ ও বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
- সন্ধিবাত, আমবাত গেঁটেবাত, কম্পবাত, স্নায়ু দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্ত বাতরোগ, ধাতুরোগ, মূত্ররোগ, অম্লপিত্ত ইত্যাদি সমস্ত পিত্ত রোগ, সর্দি জ্বর, পুরনো শ্লেষ্মা, সাইনাস, হাঁপানি, কাশি, টনসিল ইত্যাদি সমস্ত কফ রোগ দূর হয়।
- হৃদপিন্ডের শিরাগুলিতে আসা ব্লকেজ খুলে যায়।
- কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, এইচডিএল বা এলডিএল ইত্যাদির নিরাময় সম্ভব হয়।
আরও পড়ুনঃ অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
ভ্রামরী প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- এই প্রাণায়াম দ্বারা মনের চঞ্চলতা দূর করা সম্ভব হয়।
- মানসিক টেনশন,উত্তেজনা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ইত্যাদিতে এই প্রাণায়াম অত্যন্ত লাভপ্রদ হয়।
- এই ধ্যানের পক্ষে অত্যন্তও উপযোগী প্রাণায়াম।
আরও পড়ুনঃ ভ্রামরী প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
নাড়ি শোধন প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- এই প্রাণায়াম দ্বারা বাহাত্তর কোটি, বাহাত্তর লক্ষ, দশ হাজার দুশো দশ নাড়ি পরিশুদ্ধ হয়। সম্পূর্ণ নাড়িগুলির শুদ্ধি হওয়ায় দেহ পূর্ণ সুস্থ এবং বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
- সন্ধিবাত, আমবাত, গেঁটে বাত, কম্পবাত, স্নায়ু দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্ত বাতরোগ, মূত্ররোগ, ধাতুরোগ, অম্লপিত্ত ইত্যাদি সমস্ত পিত্ত রোগ, সর্দিজ্বর, পুরোনো শ্লেষ্মা, সাইনাস, হাঁপানি, কাশি, টনসিল ইত্যাদি সমস্ত কফ রোগ দূর হয়।
- হৃৎপিণ্ডের শিরাগুলিতে আসা অবরোধ (ব্লকেজ) খুলে যায়।
- কোলেস্টরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস্, এইচ ডি এল (HDL) বা এল ডি এল (LDL) ইত্যাদির নিরাময় সম্ভব হয়।
আরও পড়ুনঃ নাড়ি শোধন প্রাণায়াম করার নিয়ম
চন্দ্রভেদী বা চন্দ্রাঙ্গ প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- শরীরে শীতলতা এসে ক্লান্তি এবং উন্নতা দূর হয়।
- মানসিক উত্তেজনা শান্ত হয়।
- পিত্তের কারণে উৎপন্ন জ্বলুনিতে এই প্রাণায়াম লাভদায়ক হয়।
আরও পড়ুনঃ চন্দ্রভেদী বা চন্দ্রাঙ্গ প্রাণায়াম করার নিয়ম
উজ্জায়ী প্রাণায়াম উপকারিতা
- যেসব ব্যক্তি সারা বছরই সর্দি-কাশি-জ্বরে পীড়িত হয়ে থাকেন, যাদের টনসিল, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড, অনিদ্রা, মানসিক টেনশন, রক্তচাপ, অজীর্ণ, আমবাত, টি.বি. ইত্যাদি রোগ আছে, তাদের জন্য এই প্রাণায়াম অত্যন্ত লাভজনক হয়।
- গলাকে নীরোগ এবং মধুর করার জন্য এই প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাস করা উচিত।
- এই প্রাণায়াম অভ্যাসে বাচ্চাদের তোতলামি দূর হয়।
আরও পড়ুনঃ উজ্জায়ী প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
শীতলী প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- জিভ, মুখ এবং গলার রোগে এই প্রাণায়াম অত্যন্ত লাভজনক হয়।
- এই প্রাণায়ামের সিদ্ধিতে ক্ষুধা-তৃষ্ণার উপর নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
- উচ্চ রক্তচাপ, পিত্ত রোগ ও রক্তশোধনের ক্ষেত্রে এই প্রাণায়াম লাভ প্রদান করে।
আরও পড়ুনঃ শীতলী প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
সীৎকারী প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- দন্তরোগ (পায়োরিয়া), গলা, মুখ, নাক, জিভ ইত্যাদি রোগ নিরাময় হয়।
- ঘুম কম হয় এবং শরীর ঠান্ডা থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপে 50 থেকে 60 বার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ সীৎকারী প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
মূর্চ্ছা প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- মাথা যন্ত্রণা, স্নায়ু দৌর্বল্য ইত্যাদিতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং স্মরণশক্তি তীব্র করতে সহায়তা করে।
- এই প্রাণায়াম মনকে অন্তর্মুখী করে তুলে ধ্যান করতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ
মূর্চ্ছা প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
দুধ দিয়ে আইসক্রিম বানানোর রেসিপি
FAQ
1. প্রাণায়াম কি?
অষ্টাঙ্গ যোগের চতুর্থ অঙ্গ হল প্রাণায়াম।
2. প্রাণায়াম কাকে বলে?
প্রাণায়াম সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ঋষি পতঞ্জলি বলেছেন, 'তস্মিন সতি শ্বাসপ্রশ্বাসয়োর্গতিবিচ্ছেদঃ প্রাণায়ামঃ', অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে যখন বিচ্ছেদ করে দেওয়া হয়, তখন তাকে প্রাণায়াম বলা হয়। বিচ্ছেদে মানে নিয়ন্ত্রণ করা। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করাকেই প্রাণায়াম বলা হয়।
3. প্রাণায়াম কত প্রকার?
সাধারণত প্রাণায়ামকে ১১ টি ভাগে ভাগ করা যায়।
4. প্রাণায়াম কত প্রকার ও কি কি?
সাধারণত প্রাণায়ামকে ১১ টি ভাগে ভাগ করা যায়, সেগুলি হল-
ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম, কপালভাতি প্রাণায়াম, বাহ্য প্রাণায়াম, অনুলোম-বিলোম প্রাণায়াম, ভ্রামরী প্রাণায়াম, নাড়ি শোধন প্রাণায়াম, চন্দ্রভেদী বা চন্দ্রাঙ্গ প্রাণায়াম, উজ্জায়ী প্রাণায়াম, শীতলী প্রাণায়াম, সীৎকারী প্রাণায়াম, মূর্চ্ছা প্রাণায়াম।
5. প্রাণায়াম করলে কি হয়?
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে স্মরণশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শিতা, সূক্ষ্ম নিরীক্ষন, ধারণা, মেধা ইত্যাদি মানসিক বৈশিষ্ট্যের বৃদ্ধি করে প্রাণায়াম দ্বারা দীর্ঘজীবী হয়ে উঠে জীবনের বাস্তবিক আনন্দ প্রাপ্ত করা যেতে পারে।
6. যোগ কত প্রকার ও কি কি
যোগ চার প্রকার- জ্ঞানযোগ, ভক্তিযোগ, ধ্যানযোগ, কর্মযোগ।
প্রতিদিন এরকম বিভিন্ন বিষয়ের পোস্ট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হোন- CLICK HERE
0 Comments