প্রাণায়াম করার কিছু নিয়মবিধি | প্রাণায়ামের উপকারিতা

প্রাণায়াম করার কিছু নিয়মবিধি

প্রাণায়াম করার কিছু নিয়মবিধি

প্রাণায়াম: আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কয়েকটি প্রাণায়াম করার পদ্ধতি ও তাদের উপকারিতা সম্পর্কে জানবো। আগের কতগুলি প্রতিবেদনে আমরা প্রাণায়ামের ধারণা ও পরিচিত কয়েকটি প্রাণায়াম করার পদ্ধতি ও তাদের উপকারিতার ব্যাপারে আলোচনা করেছি। আজকে জানবো বাকি কয়েকটি। বিস্তারিত জানতে পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

বিভিন্ন প্রাণায়াম করার নিয়ম ও তাদের উপকারিতা 

বাহ্য প্রাণায়াম ( Bahya Pranayama)

সিদ্ধাসন বা পদ্মাসনে বিধিপূর্বক বসে শ্বাসকে জোরপূর্বক বাইরে বের করে দিতে হবে।

শ্বাস বাইরে ছেড়ে মূলবন্ধ (পায়ুপ্রদেশ এবং মুত্রেন্দ্রিয়কে উপরের দিকে আকর্ষিত করা। এই বন্ধে নাভির নীচের অংশে টান পড়বে), উড্ডীয়ান বন্ধ (পেটকে ভিতরের দিকে ঢোকানোর চেষ্টা করা) এবং জালন্ধর বন্ধ (হাত দুটিকে হাঁটুর উপর রেখে থুতনিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে কণ্ঠকূপের সঙ্গে লাগানোকে জালনম্বর বন্ধ বলে) লাগিয়ে শ্বাসকে যথাসম্ভব বাইরে আটকে রাখতে হবে।

যখন শ্বাস নেওয়ার ইচ্ছা হবে, তখন বন্ধগুলিকে সরিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে হবে। (d) শ্বাস ভিতরে নিয়ে সেটাকে আটকে না রেখে আবার আগের মতো শ্বসন ক্রিয়া দ্বারা বাইরে বের করে দিতে হবে। এইভাবে 3-21 বার পর্যন্ত অভ্যাস করা যেতে পারে।

বাহ্য প্রাণায়াম এর উপকারিতা

  • মনের চঞ্চলতা দূর হয়।
  • এই প্রাণায়াম পেটের রোগে বিশেষ লাভপ্রদ হয়।
  • বুদ্ধি সূক্ষ্ম এবং তীব্র হয়ে ওঠে।
  • এই প্রাণায়াম শরীরের শোধন করে।
  • বীর্যকে ঊর্ধ্বগামী করে তুলে স্বপ্নদোষ, শীঘ্রপতন প্রভৃতি ধাতু বিকারের নিবৃত্তি করে।
  • বাহ্য প্রাণায়াম অভ্যাসে পেটের সব অবয়বের উপর বিশেষ জোর পড়ে। সুতরাং পেটকে বিশ্রাম এবং আরোগ্য প্রদান করার জন্য ত্রিবন্ধপূর্বক এই প্রাণায়াম করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম এর উপকারিতা ও করার পদ্ধতি

নাড়ি শোধন প্রাণায়াম (Nadi Shoidhan Pranayama)

শুরুতে নাড়ি শোধন প্রাণায়ামের জন্য অনুলোম-বিলোমের মতো ডান নাককে বন্ধ করে বাম নাক দিয়ে শ্বাসকে দ্রুত ভিতরে ভরা উচিত। পুরো শ্বাস ভিতরে ভরার পর প্রাণকে যথাসম্ভব ভিতরেই আটকে রেখে মূলবন্ধ এবং আলস্কর বশ করা উচিত। তারপর জালনম্বর বন্ধ সরিয়ে শ্বাসকে অত্যন্ত ধীর গতিতে ডান নাক দিয়ে বাইরে ছাড়া উচিত। পুরো শ্বাস বেরিয়ে যাওয়ার পর ডান দিকের নাক দিয়ে শ্বাসকে ধীরে ধীরে ভিতরে পুরে অন্তঃকৃম্ভক করতে হবে এবং যথাসম্ভব ভিতরেই প্রাণকে আটকে রাখার পর বান দিকের নাক দিয়ে শ্বাসকে ধীরে ধীরে বাইরে বের করে দিতে হবে। তবে এই প্রাণায়াম নাকের উপর হাত না লাগিয়ে মানসিক একাগ্রতার সঙ্গে করতে পারলে আরও বেশি লাভপ্রাপ্ত করা যেতে পারে। কারণ এতে মনকে পূর্ণ একাগ্রতার সঙ্গে প্রাণের উপর কেন্দ্রিত রাখা যায় এবং মনও অত্যন্ত স্থিরতা প্রাপ্ত হয়। শ্বাস নেওয়া বা ছাড়ার সময় প্রাণের কোনো শব্দ হওয়া উচিত নয়। এই প্রাণায়াম কমপক্ষে তিনবার অবশ্যই করা উচিত। এর থেকে বেশি করার ইচ্ছে হলে যতবার খুশি করা যেতে পারে। নাড়ি শোধন প্রাণায়ামে পুরক, অন্তঃকৃষক এবং রেচবের পরিমাণ শুরুতে যথাসম্ভব 1:2:2 রাখা উচিত অর্থাৎ 10 সেকেন্ড পূরক, 20 সেকেন্ড অন্তঃকুম্ভক এবং 20 সেকেন্ড ধীরে ধীরে রেচক করা উচিত। পরে, এর অনুপাত 1:4:2 পর্যন্ত করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে বাহাকুম্ভকও যোগ করা যেতে পারে। অর্থাৎ 1:4:2:2 অনুপাতে ক্রমশ পূরক, অন্তঃকুত্তক, রেচক এবং বাহাকুস্তক করা যেতে পারে।

নাড়ি শোধন প্রাণায়াম এর উপকারিতা

এই প্রাণায়ামের সব উপকার অনুলোম-বিলোম প্রাণায়ামের সমান হয়। যেমন-

  • এই প্রাণায়াম দ্বারা বাহাত্তর কোটি, বাহাত্তর লক্ষ, দশ হাজার দুশো দশ নাড়ি পরিশুদ্ধ হয়। সম্পূর্ণ নাড়িগুলির শুদ্ধি হওয়ায় দেহ পূর্ণ সুস্থ এবং বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
  • সন্ধিবাত, আমবাত, গেঁটে বাত, কম্পবাত, স্নায়ু দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্ত বাতরোগ, মূত্ররোগ, ধাতুরোগ, অম্লপিত্ত ইত্যাদি সমস্ত পিত্ত রোগ, সর্দিজ্বর, পুরোনো শ্লেষ্মা, সাইনাস, হাঁপানি, কাশি, টনসিল ইত্যাদি সমস্ত কফ রোগ দূর হয়।
  • হৃৎপিণ্ডের শিরাগুলিতে আসা অবরোধ (ব্লকেজ) খুলে যায়।
  • কোলেস্টরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস্, এইচ ডি এল (HDL) বা এল ডি এল (LDL) ইত্যাদির নিরাময় সম্ভব হয়।

আরও পড়ুনঃ কপালভাতি প্রাণায়াম করার নিয়ম ও এর উপকারিতা

চন্দ্ৰভেদী বা চন্দ্রাঙ্গ প্রাণায়াম (Chandra Bhedi Pranayama)

এই প্রাণায়ামে বাম নাক দিয়ে পুরক করে, তারপর অন্তঃকুম্ভক করতে হবে। এই প্রাণায়াম ভালব্বর এবং মূলবন্ধের সঙ্গে অভ্যাস করাটা উত্তম। তারপরে ডান নাক দিয়ে রেচক করতে হবে। এই প্রাণায়ামে সর্বদা চন্দ্রস্বর বা বাম নাক দিয়ে পূরক এবং সূর্যস্বর বা ডান নাক দিয়ে রেচক করা হয়। সূর্যভেদী প্রাণায়াম ঠিক এর বিপরীত হয়। শীতকালে চন্দ্রভেদী প্রাণায়ামের অভ্যাস কম মাত্রায় করা উচিত।

চন্দ্ৰভেদী বা চন্দ্রাঙ্গ প্রাণায়াম এর উপকারিতা 

  • শরীরে শীতলতা এসে ক্লান্তি এবং উন্নতা দূর হয়।
  • মানসিক উত্তেজনা শান্ত হয়।
  • পিত্তের কারণে উৎপন্ন জ্বলুনিতে এই প্রাণায়াম লাভদায়ক হয়।

আরও পড়ুনঃ অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম করার পদ্ধতি ও উপকারিতা

শীতলী প্রাণায়াম (Sheetali Pranayama)

ধ্যানাত্মক আসনে বসে দুই হাতকে হাঁটুর উপরে রাখতে হবে। জিভকে নালির মতো সরু করে মুড়ে মুখ খোলা রেখে মুখ দিয়ে পূরক করতে হবে। জিভের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে ফুসফুসে পুরো ভরতে হবে। কয়েক মুহূর্ত থেমে মুখ বন্ধ করে দুই নাক দিয়ে রেচক করতে হবে। তারপরে আবার একবার জিভকে মুড়ে মুখ দিয়ে পূরক এবং নাক দিয়ে রেচক করতে হবে। এইভাবে 4-10 বার এই প্রাণায়াম করতে হবে। শীতকালে এই প্রাণায়াম অভ্যাস কম মাত্রায় করা উচিত। তবে কফ বা টনসিলের রোগীদের এই প্রাণায়াম করা উচিত নয়।

শীতলী প্রাণায়াম এর উপকারিতা 

  • জিভ, মুখ এবং গলার রোগে এই প্রাণায়াম অত্যন্ত লাভজনক হয়।
  • এই প্রাণায়ামের সিদ্ধিতে ক্ষুধা-তৃষ্ণার উপর নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ, পিত্ত রোগ ও রক্তশোধনের ক্ষেত্রে এই প্রাণায়াম লাভ প্রদান করে।

সীৎকারী প্রাণায়াম (Sitkari Pranayama)

ধ্যানাত্মক আসনে বসে জিভকে উপরের দিকে তালুর সঙ্গে লাগিয়ে উপর আর নীচের পার্টির দাঁতের সঙ্গে একদম সাঁটিয়ে ধরে ঠোঁটকে খুলে রাখতে হবে। এবার ধীরে ধীরে‘সী-সী’ আওয়াজ করতে করতে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে এবং ফুসফুসে পুরো শ্বাস ভরতে হবে। জালন্ধর বন্ধ করে যতক্ষণ সম্ভব বিশ্রাম করে, তারপর মুখ বন্ধ করে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে রেচক করতে হবে। এই প্রাণায়াম 8-10 বার অভ্যাসই যথেষ্ট। শীতকালে এই প্রাণায়ামের অভ্যাস কম মাত্রায় করা উচিত। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রাণায়ামের অভ্যাস কুম্ভক এবং জালন্ধর বন্ধ ছাড়াও করা যেতে পারে ও পুরক করার সময় দাঁত এবং জিভ নিজের জায়গায় স্থির থাকা উচিত।

সীৎকারী প্রাণায়াম এর উপকারিতা 

  • দন্তরোগ (পায়োরিয়া), গলা, মুখ, নাক, জিভ ইত্যাদি রোগ নিরাময় হয়।
  • ঘুম কম হয় এবং শরীর ঠান্ডা থাকে।
  • উচ্চ রক্তচাপে 50 থেকে 60 বার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ উজ্জায়ী প্রাণায়াম এর উপকারিতা

মূৰ্চ্ছা প্রাণায়াম (Murchha Pranayama)

এই প্রাণায়ামে চোখ বন্ধ করে দুই নাক দিয়ে পূরক করতে করতে মাথাকে উপরে উঠিয়ে পিছন দিকে নিয়ে যেতে হবে, যাতে দৃষ্টি আকাশের দিকে থাকে। তারপর অন্তঃকুম্ভক করতে হবে। পরে চোখ খুলে আকাশের দিকে তাকাতে হবে। অন্তঃকুত্তকের পরে চোখ বন্ধ করে মাথাকে আগের অবস্থায় এনে ধীরে ধীরে রেচক করতে হবে। আর বিশ্রাম না নিয়ে পূরক, আকাশদৃষ্টি, কুম্ভক ইত্যাদি সবকিছু একসঙ্গে করতে হবে এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। প্রতিদিন 5 বার অভ্যাস করাই যথেষ্ট।

মূৰ্চ্ছা প্রাণায়াম এর উপকারিতা 

  • মাথা যন্ত্রণা, স্নায়ু দৌর্বল্য ইত্যাদিতে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং স্মরণশক্তি তীব্র করতে সহায়তা করে।
  • এই প্রাণায়াম মনকে অন্তর্মুখী করে তুলে ধ্যান করতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ

বিপিন রাওয়াত জীবন কাহিনী

বাপ্পি লাহিড়ী জীবনী

কীভাবে একটি গ্যাস এজেন্সির ডিলারশিপ নেবেন?

আজকের এই পোস্টটি উপকারী বলে হলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। প্রতিদিন এরকম পোস্ট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন- CLICK HERE

Post a Comment

0 Comments