ভ্রামরী প্রাণায়াম করার পদ্ধতি
ভ্রামরী প্রাণায়াম: আসনে সিদ্ধিলাভ হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে আটকানোই হচ্ছে প্রাণায়াম। যে বায়ু শ্বাস নিলে বাইরে থেকে শরীরের ভিতরে ফুসফুসে পৌঁছোয়, তাকে প্রশ্বাস (Inspiration) এবং শ্বাস ছাড়লে যে বায়ু শরীরের ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায় তাকে নিশ্বাস (Expiration) বলে। প্রাণায়াম করার জন্য শ্বাসকে শরীরের ভিতরে নেওয়াকে 'পূরক', শ্বাসকে শরীরের ভিতরে আটকে রাখাকে 'কুম্ভক' এবং শ্বাসকে বাইরে ছাড়াকে 'রেচক' বলা হয়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ভ্রামরী প্রাণায়াম করার নিয়ম-পদ্ধতি এবং ভ্রামরী প্রাণায়াম এর উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। যারা মাইগ্রেন এবং সাইনোসাইটিসে ভোগেন তাদের জন্য এই প্রাণায়াম খুবই উপকারী। এই প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা অবস্থার উপশম হয় এবং এই প্রাণায়াম অভ্যাস করলে অকারণ মাথাব্যথার শিকার ব্যক্তি এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ উজ্জায়ী প্রাণায়াম এর উপকারিতা
ভ্রামরী প্রাণায়াম
বর্তমান যুগে মানসিক চাপের মধ্যে থাকা সেরকম কোনো বড়ো কথা নয়, তবে এই সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে তা বিভিন্ন অসুবিধার কারণ হতে পারে। টেনশন, হতাশা এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল যোগব্যায়াম। যোগব্যায়াম আমাদের স্বাস্থ্য এবং মানসিক শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগব্যায়ামে এমন অনেক আসন রয়েছে, যেগুলির অনুশীলন খুবই উপকারী। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ১১ টি প্রাণায়ামের মধ্যে এমন একটি প্রাণায়ামের কথা বলবো, যা শুধু মানসিক চাপই দূর করে না, ঘুমহীনতা, ক্লান্তি বোধ এবং দুর্বল স্মৃতিশক্তিকে সবল করতেও সাহায্য করে। এই প্রতিবেদনে আমরা ভ্রামরী প্রাণায়ামের কথা বলবো। 'ভ্রামরী' শব্দটি এসেছে 'ভ্রমর' থেকে যার অর্থ গুনগুন করা মৌমাছি। এই প্রাণায়াম অনুশীলন করার সময়, নাক থেকে একটি গুনগুন শব্দ বের হয়, যা একটি মৌমাছির শব্দের মতো, তাই এর নাম ভ্রামরী। তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই প্রাণায়াম করার পদ্ধতি ও উপকারিতা সম্পর্কে-
আরও পড়ুনঃ ভাস্ত্রিকা প্রাণায়াম এর উপকারিতা
ভ্রামরী প্রাণায়াম করার নিয়ম
শ্বাসকে পুরো ভিতর পুরে দুই হাতের মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে নাকের মূলদেশে চোখের দুই পাশে একটু চেপে রাখতে হবে এবং অন্যান্য আঙুলগুলি নাকের দুই পাশে ত্বককে স্পর্শ করে থাকবে। দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে দুই কানকে পুরো বন্ধ করতে হবে। এবার ভ্রমরের মত গুঞ্জন করতে হবে 'ওম' (যেকোনো ধর্ম অনুযায়ী যেকোনো পবিত্র শব্দ) -এর উচ্চারণ করে শ্বাসকে নাকের মধ্য দিয়ে বাইরে ছাড়তে হবে। এই সময় মুখ বন্ধ থাকবে। এইভাবে প্রাণায়াম কমপক্ষে তিনবার অবশ্যই করতে হবে। তবে এই প্রাণায়াম ১১-১২ বার পর্যন্ত করা যেতে পারে।
- সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয় সময়ে এই আসনটি করা ভালো।
- প্রাণায়াম করার জন্যে পদ্মাসনে বা সুখাসনে বসুন।
- এবার উভয় হাত কনুইতে বাঁকিয়ে কানের কাছে নিয়ে আসুন এবং উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে আপনার উভয় কান বন্ধ করুন।
- এবার দুটি হাতের দুটি তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে দুটি চোখ হালকা করে চেপে রাখুন।
- এবার উভয় হাতের মধ্যমা আঙ্গুল নাকের শেষ প্রান্তে হালকা করে ধরে রাখুন।
- অনামিকা নাকের নিচে এবং এবং কনিষ্ঠা আঙুল ঠোঁটের নিচে হালকা করে রাখুন।
- ভ্রামরি প্রাণায়ামের সময় মনে রাখবেন মুখ যেন বন্ধ থাকে এবং নাক দিয়ে শ্বাস নিতে হবে।
- এবার মৌমাছির মতো গুঞ্জন বা 'ওম' শব্দ করতে করতে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
- শ্বাস ছাড়ার সময় 'ওম' উচ্চারণ করুন।
- এইভাবে প্রাণায়াম কমপক্ষে তিনবার অবশ্যই করতে হবে।
- তবে এই প্রাণায়াম ১১-১২ বার পর্যন্ত করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ কম খরচে কলকাতা ভ্রমণ
ভ্রামরী প্রাণায়াম এর উপকারিতা
- মানসিক চাপ কমাতে এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে ভ্রামরি প্রাণায়াম খুবই উপকারী।
- এই প্রাণায়াম দ্বারা মনের চঞ্চলতা দূর করা সম্ভব হয়।
- যারা মাইগ্রেন এবং সাইনোসাইটিসে ভুগছেন তাদের জন্যও এই প্রাণায়াম উপকারী।
- মানসিক টেনশন, উত্তেজনা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদিতে এই রামায়ণ অত্যন্ত লাভপ্রদ হয়।
- থাইরয়েডের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি উপকার পান এই প্রাণায়ামে।
- এটি ধ্যানের পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী প্রাণায়াম।
- শীতের মৌসুমে নাক বন্ধ, মাথাব্যথা, অর্ধেক মাথার প্রচণ্ড ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া, এই সব রোগ থেকে মুক্তি পেতে ভ্রামরি প্রাণায়াম খুবই উপকারী।
- আত্মবিশ্বাসের অনুভূতি বাড়ে এবং নিয়মিত অভ্যাস করলে মন ও মননে প্রশান্তি আসে।
- নিদ্রাহীনতা, রাগ, দুশ্চিন্তা দূর হয় এই প্রাণায়ামে।
- উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ভ্রামরি প্রাণায়াম খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুনঃ অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম করার পদ্ধতি ও এর উপকারিতা
আমরা গত কয়েকটি প্রতিবেদনে বিভিন্ন প্রাণায়াম করার পদ্ধতি ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের এই প্রতিবেদনে আলোচনা করলাম ভ্রামরী প্রাণায়াম সম্পর্কে। আশা করি প্রতিবেদনটি আপনাদের ভালো লেগেছে। পোস্টটি উপকারী মনে হলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং প্রতিদিন এরকম বিভিন্ন বিষয়ের পোস্ট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল (Click Here) জয়েন করুন।
আরও পড়ুনঃ
0 Comments