বিভিন্ন শাকের নাম ও ছবি | বিভিন্ন শাকের নাম


বিভিন্ন শাকের নাম ও ছবি

বিভিন্ন শাকের নাম: শাক শব্দটি শুনতে যেমন ছোটো তেমনি হাটে বাজারে ছোটো ছোটো আঁটি হিসেবেই বিক্রি হয়। আমরা প্রত্যেকটা ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি হাতের কাছে পেয়ে থাকি সেটা হোক বাজার থেকে কেনা কিংবা ঘরোয়া। কিন্তু এই পাঁচ টাকার শাকের মধ্যে রয়েছে পঞ্চাশ বা পাঁচশোটি নয় তার থেকেও বেশি মাত্রার গুণ ও উপকারিতা। বিভিন্ন শাক, শরীরের বিভিন্ন রোগব্যাধির উপশম করে। শাক আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও বার্ধক্যজনিত সমস্যা প্রতিহত করে। কারণ শাকে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, মিনারেলস ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান, যেগুলি শরীরের ভেতরকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে দিতে পারে। তাই আজকের এই পোস্টে বিভিন্ন শাকের নাম, তাদের ছবি, তাদের ইংরেজি নাম ও শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হল।

আরও পড়ুনঃ কালমেঘ পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

বিভিন্ন শাক ও তাদের ইংরেজি নাম

  • কলমি শাক - Water amarnath
  • পালং শাক - Spinach
  • সরষে শাক - Mustard leaf
  • মুলো শাক - Radish leaves
  • পুঁইশাক - Malabar spinach
  • লাল শাক - Red amarnath
  • পুদিনা শাক - Mint leaf
  • মেথি শাক - Fenugreek
  • ডাঁটা শাক - Stem amarnath
  • গিমা শাক - Kangkong
  • কচু শাক - Taro stem/ Arum leaves
  • পাট শাক - Jute leaves 
  • কুমড়ো পাতা - Pumpkin leaves
  • ঢেঁকি শাক - Edible fern
  • ধনেপাতা - Coriander

কলমি শাকের উপকারিতা

জলে জন্ম এবং জলেই বেড়ে ওঠা কলমি শাকের উপকারিতা সত্যিই অবিশ্বাস্য। অন্যান্য শাকের থেকে এই শাক কম খাওয়া হলেও এর গুনাগুন ও উপকারিতা অসামান্য। এই শাকের বৈজ্ঞানিক নাম আইপোসিয়া অ্যাকোয়াটিক। এই শাক চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, চোখকে সুস্থ রাখে, হজমে সাহায্য করে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। কলমি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে বলে এটি হরমোন উৎপাদনেও সাহায্য করে। কলমি শাক দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে, কারণ এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- C। কলমি শাক এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের বিভিন্ন রোগকে প্রতিহত করে। কলমি শাকের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশক্তি থাকায় শারীরিক দুর্বলতা দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিষোধক হিসেবে কাজ করে। কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্তহীন রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে এই শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও পড়ুনঃ মটরশুঁটির উপকারিতা ও অপকারিতা

বেতো শাকের উপকারিতা

কথায় বলে- 'লিভার যদি হয় গেঁতো, খাও তবে বেতো। শাকটি ক্ষারযুক্ত, সাথে মধুর, হজমকারক, অরুচি নাশক, কোষ্ঠ-পরিষ্কারক, যকৃত ও প্লিহার ক্রিয়াবর্ধক, বলকারক ও অর্শে খুবই উপকারী। বায়ু-পিত্ত-কফের সমতা রক্ষা করে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। ক্রিমি, রক্তপিত্ত, অম্লপিত্ত, আমবাত, আমাশা, কাশি প্রভৃতি রোগ নিয়ন্ত্রণে বেতোর ক্ষমতা অসীম। এছাড়া মেধা ও শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে। সাধারণত এটি যব, গম, সরষে ও আলু চাষের জমিতে আগাছা হিসেবে উৎপন্ন হয়। কোনও কোনও জায়গায় বেতোর উৎপাতে অন্য শাকসব্জির চাষ ব্যাহত হয়ে থাকে। যবের খেতে জন্মায় বলে, এর আরেক নাম যবশাক। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এটির চাষের পরিমাণ বেড়েছে। বেতোকে গুণের বিচারে শাকরাজ বা শাকশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রিয় শাক বেতো। এই শাকটিতে এমন এক প্রকার উদ্বায়ী তেল আছে, যেটি অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে। অর্থাৎ সহজে হজম হয় এবং কোষ্ঠকে পরিষ্কার করে। মৃত গ্রন্থির ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে এবং লিভারের ক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তোলে। শাকটিতে ভিটামিন- C, A, অ্যাসকারিডল, ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান। লাল ও সাদা দুই প্রকারের বেতোশাক পাওয়া যায়। আলু, বেগুন, সিম, কুমড়ো, বড়ি, গাজর প্রভৃতি সহযোগে রান্না করে খেতে পারেন। বেতো শাকের রস এক কাপের সঙ্গে তিল তেল ২ কাপ ও জল ৩ কাপ মিশিয়ে হালকা আঁচে ফোটাতে হবে। তেল অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে, ঠান্ডা হলে ছেঁকে শিশিতে ভরে রাখুন। এটি মাথায় মাখলে উকুন মরবে, খুশকি ও মাথার চামড়ার ঘা সারবে।

পালং শাকের উপকারিতা

স্বাস্থ্যকর শাক সব্জির মধ্যে পালং শাকের স্থান শীর্ষে। তবে পালং শাক যত তাজা হবে, তার গুণগত মান বেশি হবে। পালং শাকের জন্মস্থান নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ কেউ বলেন, আরবে এটির প্রথম চাষ হয়। কারও মতে আফ্রিকা। পালং এর ইংরেজি নাম Spinach, শব্দটি এসেছে স্পেনীয় শব্দ Hispanin থেকে। পালং শাক অত্যাধিক পুষ্টিকর, বলকারক ও ক্যান্সার প্রতিরোধক। ডজনখানেক ফ্লেভনয়েড যৌগ শাকটিতে থাকায় এটি প্রস্টেট, ব্রেস্ট, পাকস্থলী ও চামড়ার ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতে পারে। শরীরের অন্যান্য স্থানের ক্যান্সারকেও প্রতিরোধে সক্ষম পালং শাক। বিশেষত ক্ষতিকর প্রস্টেট ক্যান্সারের যেকোনো স্টেজকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।

শাকটিতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, অতি প্রয়োজনীয় কতগুলি অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম, ভিটামিন- C, A, E, K প্রভৃতি রয়েছে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। পালংয়ে অক্সালেট থাকায় পাথুরি, বাতরক্ত, অন্ত্র ও যকৃতের নানাবিধ রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা দরকার। অক্সালেট শরীরের আয়রন শোষণে বাধা দেয়। লেবু কিংবা লেবু জাতীয় ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সহজেই শোষিত হয়। সেজন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় টক জাতীয় কিছু না কিছু থাকা প্রয়োজন। কেবল পালং তো নয়, বহু শাকসব্জিতে এই সমস্যা থাকে। কাঁচা শাকে এক প্রকার বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে। ভালোভাবে ধুলেও নষ্ট হয় না। তাই সতেজ পালং শাক ১৬০° ফারেনহাইট বা ৭১° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ সেকেন্ড ফুঁটিয়ে নিলে ক্ষতিকারক দ্রব্যটির বিনাশ ঘটে। এটি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অভিমত। শীতের পালং বেশি উপকারী। সারা বছর ধরে যেসব পালংশাক বাজারে আসে, তা হিমঘর থেকে আসে বা অল্পরসযুক্ত মাটিতে তৈরি পালং, না খাওয়াই ভালো। পালং শাক কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তহীনতা, জন্ডিস, রক্তদুষ্টি, রক্তপিত্ত, অরুচি, রাতকানা, উচ্চ রক্তচাপ, পাকস্থলীর ক্ষত, পেট ও ফুসফুসের অসুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হাড়কে মজবুত ও শক্ত করে। মায়েরা গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে শাকটি খেতে পারেন। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও সহজে খেতে পারেন। পালং শাকের ঘন্ট, ছেঁচকি, ডাল-পালং, স্যুপ প্রভৃতি রেসিপি বানিয়েও খাওয়া যায়।


সরষে শাকের উপকারিতা

শাকটি বায়ু-পিত্ত-কফ তিনটি ধাতুরই বৃদ্ধি করতে পারে। স্বাদে মধুর, কটু, লবণ ও ঈষৎ ক্ষারধর্মী। স্বভাবে রুক্ষ, উষ্ণ, গুরুপাক ও তীক্ষ্ণবীর্য। এজন্য আয়ুর্বেদ মতে এটি নিকৃষ্ট শাক। তা সত্ত্বেও আয়ুর্বেদের গবেষণা এখানে থেমে থাকেনি। সেখানে বলা হয়েছে- এটি মূত্রবর্ধক এবং কাশি, রক্তহীনতা, উন্মাদ, ঝিঁঝি বাত, স্নায়ু সংকোচ, মাড়ির ক্ষত প্রভৃতি সারাতে পারে। 

সরষে শাক সহজে উৎপন্ন করা যায়। টবে দানা ফেলেও চাষ করা যেতে পারে। সরষে শাক ভালোভাবে ধুয়ে কেটে হালকা ভাপিয়ে জল ফেলে দিয়ে রান্না করা দরকার। শাকটিতে অক্সালিক অ্যাসিড থাকে, সিদ্ধ করে জল ফেলে দিলে অনেকটা দোষ কেটে যায়। শাকের সঙ্গে আলু-বেগুন মিশিয়ে রান্না করলে উপাদেয় খাদ্য হয়ে ওঠে। 

আধুনিক গবেষণায় জানা যায়- সরষে শাক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এতে আছে ফ্লেভোনয়েডস, সালফোরাফেল, ক্যারোটিন, ইনভোলস, লিউটিন, ডাই-ইনডোলিন, ফলিক অ্যাসিড প্রভৃতি। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও সক্ষম। রক্তহীনতা, কাশি‌ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরষে শাকের ভূমিকা রয়েছে। 

মুলো শাকের উপকারিতা

সাদা ও লাল রঙের নানা জাতের মুলো পাওয়া যায়। সারাবছর কমবেশি জন্মালেও শীত ছাড়া অন্য সময়ে শুধু মুলো শাকটিই পাওয়া যায়। মুলো কাঁচায় ও তরকারিতে খাওয়া যায়। কচি মুলো শাকসমেত কিংবা মুলো বসার আগে শাক কিভাবে রান্না করা যায়। শাকভাজা বা আলু-বেগুন মিশিয়ে মুলো শাকের চচ্চড়ি রান্না করা হয়। পাঁচমিশালী তরকারিতে মুলোর ব্যবহার সর্বজনবিদিত। স্যালাড হিসাবেও খাওয়া হয়ে থাকে।

মুলো ও মুলো শাকে প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন-বি, সি, কপার, জিঙ্ক, সেলেসিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। জন্ডিসের টক্সিন বের করতে, অর্শ ও মেদবৃদ্ধি আটকাতে কচি মুলো ও মুলো শাক অনবদ্য। মুলো শাক হজমকারক, অরুচি নাশক, প্রস্রাবকারক, মলকারক, নাসিকার রোগে হিতকর এবং ক্যান্সার প্রতিষেধক।

আরও পড়ুনঃ নিমপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পুঁই শাক ও বিটুলির উপকারিতা

কথায় আছে- মাছের মধ্যে রুই, শাকের মধ্যে পুঁই। পুঁই শাক শীতবীর্য, বায়ুপিত্ত নাশক, নিদ্রাজনক, শুক্রবর্ধক, বলকারক, রক্তপিত্তনাশক, পুষ্টিকর, তৃপ্তিদায়ক, রক্তাল্পতায় ব্যবহার্য। শাক ও বিটুলিতে ভিটামিন- এ, বি, সি, আয়রন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট প্রভৃতি আছে। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখে ও কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে। আমাশয়ে খেতে নেই, পেটে বায়ু জমলে, অম্বল, বদহজম থাকলে পুঁইশাক নিষিদ্ধ। 

নটে শাকের উপকারিতা

নোটে শাক মূলত দুই প্রকারের- সবুজ নটে ও লাল নটে। সবুজ নটে আবার দু'রকমের- নটে ও চাঁপা নটে। এছাড়া আর এক প্রকারের নটে আছে, কাঁটা নটে। কাঁটা নটে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় বেশি। বাকি সব নটে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবুজ নটের থেকে লাল নটে বেশি উপকারী। এছাড়াও গুবরে নটে, টুনটুনি নটেও পাওয়া যায়।

নটে/ চাঁপা নটে শাকের উপকারিতা

অত্যধিক সুস্বাদু ও রুচিকর শাক। এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মলমূত্র পরিষ্কার রাখে, সহজে পরিপাক হয়। শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে, পিত্ত ও কফকে বাড়তে দেয় না। এটিতে প্রোটিন, ফ্যাট, আয়রন, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি বিদ্যমান। শাকটি ক্যান্সার প্রতিরোধক। শরীরে যখন তখন উৎপন্ন অযাচিত উত্তাপ নিরসনে নটে শাকের অনবদ্য ভূমিকা রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ ব্যায়াম করার সঠিক সময় কখন


লাল নটে বা লাল শাকের উপকারিতা

লাল রঙের বাহারি শাকটি খুবই সুস্বাদু ও রুচিকর। এটিতে ভিটামিন- এ, বি, সি, কে, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ফলিক অ্যাসিড, গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রভৃতি রয়েছে। শাকটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যার ফলে মেয়েরা গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে খেতে পারেন। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপযোগী। মেয়েদের রক্তস্রাবে ও সাদাস্রাবে কাজ দেয়। বার্ধক্য প্রতিরোধে ও উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে নটে শাক যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। নটে শাক ভাজা চচ্চড়ি করে খাওয়া হয়ে থাকে। 

পুদিনা পাতা বা পুদিনা শাকের উপকারিতা

পুদিনা পাতা ও সমগ্র গাছ তীক্ষ্ণ, শীতল, অগ্নিবর্ধক, রক্তশোধক, বলকর, রুচিকর, হজমকারক, কফনাশক, জড়তা নাশক, গুরু ও সুস্বাদু, কফ ও বাতনাশক, হৃদয়ের বলকারক, সংকোচক, প্রস্রাবকারক, ঋতুস্রাব বর্ধ এবং জন্মনিরোধক গুণসম্পন্ন। 

জ্বর, কৃমি, কফ-কাশি, পাকস্থলীর প্রদাহ, মাথাধরা, বাতের যন্ত্রণা, ব্রণ, শিশুদের পেটের নানাবিধ রোগ, চর্মরোগ, সর্দি, অ্যালার্জি, কীটদংশন, রক্তহীনতা, মুখে দুর্গন্ধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে উপকারী। শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষ বা টক্সিন বের করতে পারে পুদিনা। 

পুদিনায় মনোটারপিন নামক এক প্রকার ক্ষারীয় উপাদান থাকায় এটি ব্রেস্ট, যকৃৎ, ফুসফুস, প্যানক্রিয়াস ও ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধক। 

এই শাক প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন- বি, সী, ডি, ই, কার্বোহাইড্রেট ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভেষজ। 

পুদিনা পাতা বেটে তাতে লবণ, চিনি, লেবুর রস বা পাকা তেঁতুল মিশিয়ে ভাত বা রুটির সঙ্গে চাটনি করে খাওয়া যেতে পারে। বাড়িতে টবে লাগিয়ে রাখুন পুদিনা গাছ। বহিরাগত গাছ হলে কী হবে, এর হাড়-মজ্জায় যে জাদু আছে!

আরও পড়ুনঃ রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী মানুষের বৈশিষ্ট্য


মেথি শাকের উপকারিতা

মেথি শাক এসেছে ইউরোপ ও ইথিওপিয়া থেকে। বর্তমানে এটি আমাদের অত্যন্ত প্রিয় একটি শাক। 

শাকটি যকৃতের ক্রিয়া বর্ধক, প্লীহা ও যকৃতের বৃদ্ধি কে নষ্ট করে, হাত পায়ের ফোলা কমায়। জন্ডিস, আমাশা, মুখের ঘা, চর্মরোগ, রক্তহীনতা, ডায়াবেটিস প্রভৃতি ক্ষেত্রে মেথি শাক খুবই উপকারী। শারীরিক ও মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য রক্ষায় ও সুগারের রোগীদের পথ্য হিসেবে মেথি শাকের ভূমিকা অতুলনীয়। প্রথম মাসিকের সময় মেয়েদের বয়স কম থাকে, সে সময় শরীর রুগ্ন থাকলে রক্তহীনতা দেখা দিলে মেথি শাক হালকা ভেজে বা তরকারি করে প্রত্যহ কিছুদিন খেলে উপকার পাবে। এটি খারাপ কোলেস্টরেলকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মেথি পাতা বাটা মুখে ও মাথায় লাগালে মুখের সৌন্দর্য বজায় থাকে এবং চুল ঘন ও লম্বা হয়, সৌন্দর্য বাড়ে। মেথি শাক সূর্যের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে। মেথি শাক ক্যান্সার প্রতিরোধক এবং ক্যান্সারের কেমোথেরাপি রোগীদের পথ্য হিসেবে খুবই উপকারী। এছাড়া সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। মেথি শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে।

ধনে শাক বা ধনেপাতার উপকারিতা

ধনেপাতা শীতের রান্নার রুচিকর উপাদান। শীতের ধনেপাতায় যেসব যৌগ বা ভিটামিন যত মাত্রায় থাকে, বছরের অন্য সময়ের পাতাতে তা থাকে না। স্যালাড হিসেবে ধনেপাতা ব্যবহৃত হয়। ধনে পাতা খেলে শরীরে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও পুষ্টি প্রভৃতির সমতা বজায় থাকে। তবে ধনেপাতা খুব বেশি খেতে নেই, কারণ ধনেপাতাতে অধিক পরিমাণে অক্সালিক অ্যাসিড থাকে। পাকা তেঁতুল, লেবুর রস অক্সালিক অ্যাসিড নষ্ট করতে থাকে। 

ধনেপাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন- C, A, K এবং পরিমাণমতো ভিটামিন- B, E থাকে। এটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক গুণসম্পন্ন। খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি ঘটায়। সামান্য পরিমাণে করে গোটা শীতের সময়টা নিয়মিত ধনেপাতা খেতে পারলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, শরীর ঠান্ডা থাকবে, বমি বমি ভাব নষ্ট হবে। 

শাকটি অজীর্ণ, অনিদ্রা, অবসাদ, দুশ্চিন্তা ও কৃমিনাশক। কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যালার্জি ও চুলকানির কারণও হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কোন কোন শাকসব্জি ডায়াবেটিসে উপকারী

এরকম বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কিত প্রতিবেদন পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন-

Post a Comment

0 Comments