ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

ধনেপাতার উপকারিতা 

ধনেপাতা আপনার হার্টের স্বাস্থ্য, দৃষ্টিশক্তি এবং আরও অনেক কিছুকে উন্নত করতে পারে। 

ধনেপাতা দিয়ে তৈরি প্রতিটি খাবারই সুস্বাদু। ধনেপাতা, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি এবং কে এর মতো বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর। ধনেপাতার উদ্ভিদ এবং বীজ উভয়ই রান্নার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ধনিয়া পাউডার বেশিরভাগ ডাল এবং তরকারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এবং তাজা ধনে পাতা সাধারণত চাটনি তৈরি এবং খাবার সাজানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি আপনার খাবারে শুধু সুগন্ধ এবং সৌন্দর্যই যোগ করে না বরং ধনেপাতার রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। এখানে ধনেপাতার ১০ টি উপকারিতা দেওয়া হল-

ধনেপাতার উপকারিতা

১) হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

ধনেপাতা একটি মূত্রবর্ধক হিসাবে কাজ করে, যা আপনার পাচনতন্ত্র থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম ফ্লাশ করতে সাহায্য করে এবং আপনার রক্তচাপ কমাতে পারে। কিছু প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ধনিয়া খারাপ কোলেস্টেরল, এলডিএল কমাতে সাহায্য করে, যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

২) প্রদাহ কমায়

ধনিয়া বা ধনেপাতা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে যা ক্যান্সার থেকে হৃদরোগ পর্যন্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত। ধনেতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ল্যাবে ক্যান্সার কোষের ধীরগতির বৃদ্ধির সাথে যুক্ত হয়েছে।

৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে

ধনেতে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালের কারণে কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এই যৌগগুলির মধ্যে রয়েছে টেরপিনিন, কোয়ারসেটিন এবং টোকোফেরল, যেগুলির অনাক্রম্যতা-বর্ধক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নিউরোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব রয়েছে।

৪) রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়

বর্তমান ট্রায়ালগুলি দেখায় যে ধনিয়া এনজাইমগুলিকে সক্রিয় করতে সাহায্য করতে পারে যা আপনার শরীরকে কার্যকরভাবে রক্তের গ্লুকোজ প্রক্রিয়া করতে সাহায্য করতে পারে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় ধনিয়ার উপকারিতা নিশ্চিত করতে উচ্চ রক্তে শর্করার লোকদের উপর আরও গবেষণা করা দরকার।



আরও  পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ঘরোয়া উপায়

৫) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে

পারকিনসন, আলঝেইমার এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের মতো মস্তিষ্কের রোগ প্রদাহের সাথে যুক্ত। ধনেপাতা খেলে এই তিনটি রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ধনিয়া নির্যাস স্নায়ু কোষের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। ধনে পাতা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

৬) এটি হজম এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নতি করতে পারে

ধনে বীজের তেল স্বাস্থ্যকর হজমকে ত্বরান্বিত করতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৩০ ফোঁটা ধনে-যুক্ত ভেষজ ওষুধ আইবিএস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেওয়া হলে পেটে ব্যথা, ফোলাভাব, অস্বস্তি এবং ব্যথা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এটি ঐতিহ্যগত ইরানী ওষুধে ক্ষুধা উদ্দীপক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

৭) দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়

ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনয়েড শ্রেণীর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। এগুলি কনজেক্টিভাইটিস এবং ম্যাকুলার এবং দৃষ্টির বয়স-সম্পর্কিত অবক্ষয়জনিত ব্যাধি নিরাময়েও কার্যকর।



আরও  পড়ুনঃ শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায়

৮) লিভারের কর্মহীনতার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে

ধনে পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যালকালয়েড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড পিত্তজনিত রোগ এবং জন্ডিসের মতো লিভারের রোগ নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।

৯) সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে

ধনেতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল যৌগ রয়েছে যা সংক্রমণ এবং খাদ্যজনিত অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। ধনেতে থাকা ডোডেসেনাল সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে, যা জীবন-হুমকি খাবার বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে এবং একটি বিশাল জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করতে পারে।

১০)আপনার ত্বককে রক্ষা করে

ধনেপাতা আপনার ত্বককে হালকা ফুসকুড়ি এবং ডার্মাটাইটিস থেকে বাঁচাতে পারে। এটি ফুসকুড়ির মতো ত্বকের অসুস্থতার বিকল্প চিকিৎসা হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সেলুলার ক্ষতিও প্রতিরোধ করতে পারে যা ত্বরিত ত্বকের বার্ধক্য এবং অতিবেগুনী বি বিকিরণ থেকে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

ধনেপাতার অপকারিতা



১) লিভারের ক্ষতি

অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলে। এছাড়া এটাতে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যেটা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। কিন্তু দেহের মধ্যে এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের ক্ষতিসাধন করে।

২) নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি

অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে হৃৎপিন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে অতিরিক্ত খেলে সেটা নিম্ন রক্তচাপের সৃষ্টি করে। এছাড়া এটি মাথাব্যথারও কারণ হতে পারে।

৩) পেট খারাপ

স্বাভাবিকভাবে ধনেপাতা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিষয়ক সমস্যা দূর করে থাকে। কিন্তু বেশি পরিমাণে ধনেপাতা খেলে পাকস্থলীর হজমক্রিয়ায় সমস্যা তৈরি করে। এক গবেষণা বলছে, সপ্তাহে ২০০ গ্রামের বেশি ধনেপাতা খেলে তা গ্যাসের ব্যথা, পেটে ব্যথা, পেট ফোলা, বমি হওয়া এমনকি ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।

৪) শ্বাসকষ্ট বাড়ায়

শ্বাসকষ্টের রোগীদের ধনেপাতা খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেন চিকিৎসকরা। কেননা এটি শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা করে। যার ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। শ্বাসকষ্টের রোগীরা ধনেপাতা খেলে ছোট ছোট নিঃশ্বাস নিতেও সমস্যা তৈরি হয়।

আরও পড়ুনঃ ঘরে তৈরি ঘি এর ৫ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা



৫) বুকে ব্যথা

অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে বুকে ব্যথার মত জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটা শুধুমাত্র অস্বস্তিকর ব্যথাই সৃষ্টি করে না তা দীর্ঘস্থায়ীও করে।এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে দৈনন্দিন আহারে কম পরিমাণে ধনেপাতা খেতে পারেন।

৬) ত্বকের সংবেদনশীলতা

সবুজ ধনেপাতাতে মোটামুটিভাবে কিছু ঔষধি অ্যাসিডিক উপাদান থাকে যেটি ত্বককে সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচিয়ে সংবেদনশীল করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত সেবনে সূর্যের রশ্মি একেবারেই ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ত্বক ভিটামিন ‘কে’ থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া ধনেপাতা ত্বকে ক্যানসারও তৈরি করে থাকে।

৭) অ্যালার্জির সমস্যা

ধনেপাতার প্রোটিন উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে সমানভাবে বহন করে থাকে। কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে অ্যালার্জীর তৈরি হয়। এই অ্যালার্জীর ফলে দেহে চুলকানি, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া করা, র‌্যাশ ওঠা ইত্যাদি সমস্যা তৈরি করে।

৮) মুখ ব্যথা

অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার আর একটি ক্ষতিকর দিক হল মুখে ব্যথা হওয়া। ধনেপাতায় বিভিন্ন এসিডিক উপাদান রয়েছে, যা ত্বককে সংবেদনশীল করে থাকে। পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহেরও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ঠোঁট, মাড়ি এবং গলা ব্যথা হওয়া। সারা মুখ লালও হয়ে যেতে পারে।

৯) ভ্রূণের ক্ষতি

নারীদের গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। ধনেপাতাতে থাকা কিছু উপাদান নারীদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলে। যার ফলে নারীদের বাচ্চাধারণ ক্ষমতা হৃাস পায়। বাচ্চাধারণ করলেও গর্ভকালীন ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ তুলসী পাতা খাবার নিয়ম

বিলাতি ধনেপাতার উপকারিতা

মশলার মধ্যে বিলাতি ধনিয়া একটি কিউলিনারী হার্ব। এটিকে বাংলা ধনিয়া এবং সিলেটে একে বনঢুলা বলে। বর্তমানে এই ফসলটি পার্বত্য অঞ্চলের রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। রাঙ্গামাটি জেলার রাণীর হাট এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বিলাতি ধনিয়ার ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বিলাতি ধনিয়ার চাহিদা সারা দেশে বিদ্যমান। মসলাজাত এই ফসলটি রপ্তানিরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ইউরোপে বিভিন্ন হোটেল বিশেষ করে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বাঙালি হোটেলগুলোতে এর প্রচুর চাহিদা আছে। চীনারা সর্বপ্রথম ধনিয়ার বিকল্প হিসেবে বিলাতি ধনিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রচলন করেন। বর্তমানে বিলাতি ধনিয়া বাংলাদেশ ছাড়াও ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশে চাষ হচ্ছে।



বিলাতি ধনেপাতার উপকারিতা 

১) অর্শরোগে

বিলেতি ধনেপাতার বেটে সেই রস খেলে অর্শরোগীর রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

২) দাঁত ও মাড়ির সমস্যায়

বিলেতি ধনেপাতা চিবিয়ে রস বের করে তা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয় খুব দ্রুত। সাথে মাড়িও শক্ত করতে সাহায্য করে এই ধনেপাতা।

৩) চুলকানির সমস্যায়

দেহের চুলকানি-পাঁচড়ায় এই পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি ভলো হয়ে যায়।

৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

বিলেতি ধনিয়াপাতা রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে।

৫) হজমে সহায়ক

এই পাতা মানুষের শরীরকে ঠান্ডা রাখে। এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি করে এবং এটি বায়ুনাশক। এটি খাবারকে সহজে পরিপাক করে হজেমে সাহায্য করে থাকে।



Post a Comment

0 Comments