শিবলিঙ্গের তত্ত্বকথা | ভগবান শিবের পূজা লিঙ্গ রূপে করা হয় কেন?

শিবলিঙ্গ

শিবলিঙ্গের তত্ত্বকথা

ভারতের অধিকাংশ দেব-দেবী সর্বত্র পূজিত হন মূর্তি রূপে কিন্তু ভগবান শিবের পূজা লিঙ্গ রূপে করা হয় কেন? পৌরাণিক তত্ত্বের একটি বড়ো প্রশ্ন যা মানুষের জানা প্রয়োজন

শিবলিঙ্গের তত্ত্বকথা

প্রাচীন যুগ হতে আবহমানকাল ধরে আমরা ভগবান শিবের লিঙ্গ পূজা করে আসছি। "হিন্দুপুরাণ" মতে শিবলিঙ্গ হল ভগবান শঙ্করের লিঙ্গ, অর্থাৎ শিবলিঙ্গ হল একটি পুরুষ লিঙ্গ। এবং এই লিঙ্গটি যার উপর অবস্থিত তাকে যোনি বলা হয় অর্থাৎ এটি একটি স্ত্রীলিঙ্গ। শিবের লিঙ্গটি একটি যোনির মধ্যে অবস্থান করে। প্রতিটি শিবলিঙ্গ হল ভগবান শিব ও শক্তির মিলিত স্বরূপ। প্রতিটি শিবলিঙ্গের দুটি খন্ড থাকে একটি হল পুরুষ লিঙ্গ বা পুরুষ জননেন্দ্রিয় এবং অপরটি হল স্ত্রীলিঙ্গ বা স্ত্রী জননেন্দ্রিয়। বহুকাল পূর্বে সৃষ্টির রচনার পর সপ্তঋষি সহ আরো অনেক ঋষিগণ সম্মিলিত হয়ে একটি মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন, এবং যোগ্য সম্পন্ন হওয়ার পর যজ্ঞের সুফল বা শক্তি নির্গত হয়। কিন্তু ঋষিদের মধ্যে কেউই জানতেন না এই যোগ্যের মহাফল বা মহাশক্তি কার পাওয়া উচিত বা কে এই মহাশক্তির যোগ্য। সেই সময় দেবঋষি নারদের আগমন হয়। তার মতে এই ফলের যোগ্য অধিকারী হলেন ত্রিদেব অর্থাৎ ভগবান "ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ও মহেশ্বর"। কিন্তু তিনি এও বলেন যে তিনিও জানেন না যে ত্রিদেবের মধ্যে কোন একজন এর যোগ্য অধিকারী, তাই তিনি ঋষিগণকে ত্রিদেবের পরীক্ষা নেওয়ার উপদেশ দেন। তখন সকল ঋষিগণ মিলে সপ্তঋষির অন্যতম ঋষি মহর্ষি ভৃগুকে নির্বাচিত করেন এই কাজটি সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য মতো, মহর্ষি ভৃগু সত্যলোকে উপস্থিত হন শ্রীব্রহ্ম পরীক্ষা করিবার তরে, কিন্তু তিনি দেখেন যে ব্রহ্মদেব এবং দেবী সরস্বতী সংগীতচর্চায় নিমগ্ন রয়েছেন। মহর্ষি ভৃগুর আগমন ব্রহ্মদেব এবং দেবী সরস্বতী কেউই লক্ষ্য করেননি, এই দেখে মহর্ষি ভৃগু খুবই ক্ষুব্ধ হন এবং ব্রহ্মকে অভিশাপ দেন, হে ব্রহ্মা তুমি আমার আগমন উপেক্ষা করে, আমাকে লক্ষ্য না করে আমাকে অপমানিত করেছো তাই পুষ্কর সারা বিশ্বসংসারে আর কোথাও তোমার পুজো হবে না। অনুরূপভাবে যখন ঋষিদেব ভগবান শঙ্করের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কৈলাসে উপস্থিত হন তখন তিনি দেখেন ভগবান শংকর বিবাহ তথা সংসার আশ্শাদে ব্যস্ত, এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বাক্যালাপে বিভোর। কিন্তু যখন ভগবান শংকর মহর্ষি ভৃগুকে লক্ষ্য করেন তিনি রেগে গিয়ে বলে উঠেন যে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত সময়ে আপনি কি করে বিনা অনুমতিতে এই জায়গায় উপস্থিত হন। এই শুনে মহর্ষি ভৃগু খুবই ক্ষুব্ধ হন ভগবান সকলের প্রতি, এবং ভগবান শংকরকেও অভিশাপ দেন যে, বিশ্বসংসারের তুমি লিঙ্গ রূপে পূজিত হবে। এবং সেই থেকেই জগত সংসারে ভগবান শিব লিঙ্গ রূপে পূজিত হন।

শিবলিঙ্গের তত্ত্বকথা

কিন্তু পুরান মতে কথিত আছে মূর্তি হল সাকারের প্রতীক এবং লিঙ্গ হল নিরাকারের প্রতীক। এই লিঙ্গ মানবদেহের কোন নির্দিষ্ট অঙ্গকে বোঝায় না। এই লিঙ্গ সাক্ষাৎ ব্রহ্মের প্রতীক। ব্রহ্মভাব যুক্ত শিবের নিরাকার রুপই হলো শিবলিঙ্গ। এই শিবলিঙ্গে আড়াআড়িভাবে তিনটি সাদা রেখা ও চোখের নিদর্শন পাওয়া যায়, এর থেকে আমরা বুঝতে পারি এটি কোন মানবদেহের অঙ্গ নয় বরং এটি একটি ভাবের অবস্থান মাত্র। শিবলিঙ্গ হল একটি কল্যাণকারী প্রতীক বা চিহ্ন। একদা ব্রহ্মা ও বিষ্ণু ভগবানের মধ্যে জীবজগতের সৃষ্টি ও লালন-পালন নিয়ে এক বিশাল বিবাদ শুরু হয়। সেই বিবাদ নিরসন করার জন্য দেবতাগণ ভগবান শিবের দ্বারস্থ হন। দেবতাগণের দ্বারা প্রেরিত হয় ভগবান শিব শ্রীব্রহ্মা ও শ্রীবিষ্ণুর নিকট প্রকট হন। ভগবান ব্রহ্মা ও বিষ্ণু হাত জোড়ো অবস্থায় ভগবান শিবের দুদিকে দাঁড়িয়ে থাকেন। ব্রহ্মজ্ঞানী শিব দুজনের কাছে পুরুষ বস্তু (আবহমানকাল ধরে যে বস্তু অবিকৃত এবং সুস্থির অবস্থায় রয়েছে) এবং প্রাকৃত বস্তুর তত্ত্ব বর্ণনা করেন। ভগবান শিবের কথা শুনতে শুনতে শ্রীব্রহ্মা ও শ্রীবিষ্ণু শিবের নিরাকার রূপের অথবা ব্রহ্মভাবের পুজো করেন। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু ব্রহ্মভাব স্বরূপ শিবের লিঙ্গকে পূজা করেছিলেন বলে আজও জগত সংসারে ভগবান শিবের লিঙ্গকেই পুজো করা হয়। তাছাড়াও ভগবান শিবের লিঙ্গ হল পিতা-মাতার স্বরূপ যা থেকে জীবের সৃষ্টি হয়।

সাদা শিবলিঙ্গ বাড়িতে রাখতে নেই কেন

শাস্ত্র অনুযায়ী বাড়িতে সাদা শিব লিঙ্গ রাখতে কোনো বাধা নেই, এবং এর পূজাও করা যেতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন গৃহস্ত ঘরে সাদা শিবলিঙ্গ তার উদ্দেশ্য ও গুরুত্বের সঙ্গে পারস্পরিক বিপরীত ক্রিয়া করে। কারণ আমরা যেমনটা জানি, সাদা রঙ হল বৈরাগ্যের প্রতীক, অমরত্বের রঙ এবং আধ্যাত্মিকতা যুগের চরম সীমার রঙ। এই রঙ অর্থাৎ সাদা শিবলিঙ্গ যখন আমরা বাড়িতে প্রতিস্থাপন করি বা মনে মনে কল্পনা করি তখন আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে থাকি না। আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চাই। এই কারণেই সাধু-সন্ন্যাসীরা ধ্যান করার ক্ষেত্রে এই রঙ ব্যবহার করে থাকেন। এই রঙের শিবলিঙ্গ মন্দির অবশ্যই পূজা করা যেতে পারে। এক কথায় বলা যেতে পারে, সংসারের মধ্যে থেকে যদি আধ্যাত্মবাদ ও বৈরাগ্যকে যদি এত পরিমান গুরুত্ব দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে কোথাও একটা সাংসারিক তরঙ্গে ব্যাঘাত ঘটে। সাধারনত আমরা দেখে থাকি বাড়ির মা, ঠাকুমা, পিসিমা অর্থাৎ বাড়ির মহিলারা শিবের পুজো করে থাকেন, কিন্তু এক্ষেত্রে মহিলাদের সাদা শিবলিঙ্গের পূজা না করাই ভালো।

শিবলিঙ্গ

তাই শাস্ত্র মতে বলা হয়েছে, গৃহের একদম ভিতরে অর্থাৎ অভ্যন্তরের শিবলিঙ্গের পূজা না করে গৃহের বাইরে বা গৃহ সংলগ্ন কোনো ভালো জায়গা বা মন্দিরে রাখা যেতে পারে। এবং পুরোহিত দিয়ে নিত্যই ওই শিবলিঙ্গের পূজা করা যেতে পারে। 

আমরা অনেকেই বিভিন্ন পূজা-পার্বণ, মেলা, অনুষ্ঠান থেকে শিবলিঙ্গ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিমা বা মূর্তি এনে বাড়িতে সাজিয়ে রাখি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কিছু সুফলের বদলে সাংসারিক, নিজস্ব জীবনে কিছু খারাপ প্রভাব পড়ে। তাই যেকোনো জিনিসের রং, আকার এবং তাদের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব বুঝে বাড়িতে প্রতিস্থাপন করা উচিত। তাতে আমরা অনেকটাই সুফল লাভ করতে পারি। মোদ্দা কথা ভক্তি মন থেকেই করা যায় সে ক্ষেত্রে কোন মূর্তি বা প্রতিমার প্রয়োজন হয় না, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলাটাই বড় কথা। 

শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন

শিব অর্থাৎ সত্য ন্যায়ের পথ বা এই পথে চলা। ভগবান শিব খুব অল্পতেই সন্তুষ্ট হন। এখানে অল্প বলতে শুধুমাত্র সামান্য জল এবং বেলপাতাকেই বোঝানো হয়েছে। এই সামান্য দুটি প্রাকৃতিক উপাদানে দেবাদিদেব মহাদেব সন্তুষ্ট হন। 

কিন্তু আমাদের জানতে হবে শিবের মাথায় জল ঢালা হয় কেন? এ সম্বন্ধে জানতে হলে আমাদের পুরাণে ফিরে যেতে হবে। যখন সমস্ত ভগবান অসূরদের মধ্যে সমুদ্র মন্থন হয়েছিল তখন সেই মন্থন থেকে বিভিন্ন বস্তু নির্গত হয়েছিল। মন্থনের একসময় 'হলাহল' নামক এক বিষাক্ত গরল নির্গত হয়। কিন্তু ও অসূর ও ভগবানদের মধ্যে কোন পক্ষই এই বিষাক্ত গরল গ্রহণ করতে চায় না। সেই সময় আবির্ভাব হয় ভগবান শিবের, তিনি সেই বিষাক্ত গরল পান করেন। এই গরল পান করার পর তার কন্ঠ অর্থাৎ গলা নীল বর্ণের হয়ে যায় ( এই থেকেই দেবাদিদেব মহাদেব নীলকন্ঠ নামেও পরিচিত)। সমস্ত ভগবান কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান। ভগবান শিব গরলের জালায় কিছুটা অস্থির হয়ে পড়েন। সেই সময় ভগবানগণ তার মাথায় জলের অভিষেক করেন। তাতেও তার গলায় গরলের নীলাভাব দূর হচ্ছিল না।  তাই সমস্ত ভগবান মিলে ভগবান শিবকে বেলপাতা খাওয়াতে থাকেন। কিছুসময়ের মধ্যেই দেবাদিদেব মহাদেব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। এবং এই থেকে শিবের মাথায় জল ঢালার প্রচলন শুরু হয়

শিবলিঙ্গের ইতিহাস

হিন্দুদের বিশ্বাসের প্রতীক হলেন ভগবান শিব। এবং ভগবান শিবের প্রতি এই বিশ্বাস ভরসার প্রতীক শিবলিঙ্গ আমাদের সবার মনে এবং কল্পনায় রয়েছে। কিন্তু ৯ ও ১০ -এর দর্শকের মুঘলদের ভারতে আসার পর, এবং ১৬ ও ১৭ -এর দশকে ইংরেজদের ভারতে আসার পর শিবলিঙ্গ সম্পর্কিত বহু কথা সমাজে প্রচলিত হতে থাকে। কিছু মুঘল ও কিছু ব্রিটিশরা শিবলিঙ্গকে ভগবান শিবের যৌনাঙ্গ হিসেবে তুলনা করেন। এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় এটাই ওই সময়ে অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ ওই কথা স্বীকার করে নেন। 

শিবলিঙ্গের ইতিহাস

শিবলিঙ্গের বাস্তবিক অর্থ

সংস্কৃত ভাষার সমস্ত ভাষার জননী রূপে গণ্য হয়। এরকমটা আমরা সবাই জানি, একটি শব্দের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন অর্থ নির্গত হয়। যদি একটি শব্দ ধরা হয়- 'সূত্র' হিন্দিতে এর অর্থ হল দড়ি, সুতি, ও ডুরি বা ডোর। কিন্তু আবার সংস্কৃতে এই শব্দের ব্যবহার আলাদা 'সূত্র' অর্থাৎ- গাণিতিক সূত্র, বৈজ্ঞানিক সূত্র প্রভৃতি। এই ভাষা-ভাষীর সম্পর্ক রয়েছে শিবলিঙ্গের সঙ্গে। সংস্কৃত শব্দ এবং ভাষা না জানার ফলে শিবলিঙ্গের লিঙ্গ শব্দের অর্থটি গুপ্তাঙ্গ বা যৌনাঙ্গ হিসেবে বোঝা হল। যেখানে সংস্কৃত ভাষায় লিঙ্গ শব্দের অর্থ হল- চিহ্ন, প্রতীক, ছাপ। অর্থাৎ এই হিসেবে শিবলিঙ্গ হল শিবের চিহ্ন। 
যেমনটা আমরা সবাই বাংলা ভাষার ব্যাকরণে পড়েছি, পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ। তাহলে সেখানে কি আমরা পুরুষ বা মহিলার যৌনাঙ্গের কথা বলেছি? মোটেও না, আমরা শুধু দুজন ব্যক্তিকে আলাদা করার চিহ্ন হিসেবে ওই শব্দ রেখেছি। 

শিবলিঙ্গ

আমরা প্রায় সব দেবতার পূজার্চনা বিভিন্ন পাথরের মূর্তি বা প্রতিমা রূপে করে থাকি। কিন্তু শুধুমাত্র ভগবান শিবের পূজা লিঙ্গ রূপে করি কেন, কেনইবা ঋষি মুনিগণদের মনে শিবকে লিঙ্গ রূপে পূজা করার ধারণা এল। 
শূন্য, আকাশ, অনন্ত, ব্রহ্মাণ্ড ও পরমপুরুষের প্রতীক হওয়ার জন্য একে লিঙ্গ বলা হয়। শিবলিঙ্গ বাস্তবে আমাদের ব্রহ্মান্ডের আকার (The Universe is a sign of Shin Lingam)। শিবলিঙ্গের অর্থ অনন্তও হয়, অর্থাৎ যার কোন অন্ত বা শেষ নেই। স্কন্ধ পুরাণ মতে, আকাশ স্বয়ং লিঙ্গ। 
গোটা ব্রহ্মাণ্ডে দুটো জিনিস রয়েছে শক্তি ও বস্তু বা পদার্থ। আমাদের শরীর পদার্থ দ্বারা নির্মিত এবং আত্মা শক্তি দ্বারা নির্মিত। এইভাবে শিব পদার্থ ও শক্তির প্রতীক। এই দুইয়ের মিলনে হয় শিবলিঙ্গ। 
ভগবান শিব কার পূজা করেন
হিন্দু ধর্মের সব থেকে আদি দেবতা হলেন ভগবান শিব। হিন্দু ধর্মের পুরাণ গ্রন্থগুলিতে তার বহু কাহিনী বর্ণিত রয়েছে। এছাড়া বেদে রয়েছে শিবের রুদ্ররূপের ব্যাখ্যা। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ভগবান শিবের পুজো করি, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা ভগবান শিবকে ধ্যানরত অবস্থায় বসে থাকতে দেখি। এইখানে একটা প্রশ্ন ভাবায় যে ভগবান শিব স্বয়ং কার পূজার্চনা করেন। 
হিন্দু পুরাণ মতে, ভগবান শিব সংসারের ধ্বংস কর্তা। যার শুরু বা শেষ কিছুই নেই। মাতা পার্বতি ভগবান শিবকে একবার প্রশ্ন করেছিলেন যে তিনি কার পূজা করেন বা কে সবথেকে প্রিয়? এর উত্তরে মহাদেব বলেন তিনি রামের পূজা করেন। কিন্তু এখানে আশ্চর্যের বিষয় হল তখনও পর্যন্ত এই ভুলোকে রামের জন্ম হয়নি। ভগবান শিবের আরেক তত্ত্ব কথায় জানা যায় তিনি শ্রীকৃষ্ণেরও পূজা করেন। শেষ কথা একটাই রাম-কৃষ্ণ-শিব সবাই একে অপরের সমার্থক।

ভগবান শিবের গলায় সাপ থাকে কেন

আমরা প্রত্যেকেই একটা প্রশ্ন জানার চেষ্টা করি যে ভগবান শিবের গলায় যে সাপ থাকে তার নাম কি? হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর আমরা জানতে পারিনা। কিন্তু আজকে জানবো। 
মহাদেবের প্রত্যেকটা রূপেই আমরা তার গলায় সাপ দেখতে পাই। কি সেই আসল তত্ত্বকথা যার কারণে ভগবান-শিব সর্বদা তার গলায় সাপকে অলংকার এর মতো রাখেন। শিবের গলায় সাপ থাকা নিয়ে বিভিন্ন গ্রন্থ ও পুরাণে বিভিন্ন তত্ত্ব বর্ণিত রয়েছে। 
ভগবান শিবের গলায় যে সাপ থাকে তার নাম বাসুকী। এই বাসুকী হলেন ভগবান শিবের অন্যতম একনিষ্ঠ ভক্ত। পৌরাণিক তথ্য অনুসারে, নাগ সম্প্রদায়ের রাজা বাসুকী সম্পূর্ণ নাগ সম্প্রদায়কে নিয়ে শিবের তপস্যা করেন। এবং বাসকীর তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে বাসুকীকে ভগবান শিব অলংকারের মতো নিজের গলায় ধারণ করেন। 
সম্পূর্ণ প্রাণী জগতের মধ্যে সাপ সবথেকে বিষধর প্রাণী। আর মহাদেব সেই সাপকেই নিজের গলায় অলংকারের মতো ধারণ করেছেন, যা ভগবান শিবের সাহসিকতা ও অমরত্বের নিদর্শন। এর থেকে বোঝা যায় ভগবান শিব জন্ম-মৃত্যুর ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। শিবের গলায় সাপের চক্রাকার ভাবে থাকা মানুষের জন্ম-মৃত্যু চক্রকে বোঝায়।

ভগবান শিবের মাথায় চাঁদ থাকে কেন

ভগবান শিবের প্রত্যেকটি ছবি বা মূর্তিতে তার মাথায় অর্ধচাঁদ দেখতে পাই। এবং এও বর্ণিত আছে যে সেই চাঁদ থেকেই নাকি গঙ্গা নির্গত হয়েছে। এইসবের ব্যাখ্যা পেতে হলে আপনাকে প্রবেশ করতে হবে পুরান কাহিনীতে। শুধুমাত্র শিবপুরাণ নয়, মহাদেবের চন্দ্রশেখর হওয়ার কাহিনী বর্ণিত আছে বহু প্রাচীন গ্রন্থ ও পুরাণে।
সমুদ্রমন্থনের সময় যখন তীব্র বিষ হলাহল নির্গত হয়, মহাদেব তা নিজের কন্ঠে ধারণ করেন। এই বিষ পান করার ফলে তার শরীরে তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়। এই তাপ কমাতেই শিবচন্দ্র দেবকে মাথায় ধারন করেন। চন্দ্রের প্রকৃতি শীতল, তাই হয়তো এরূপ সম্ভব হয়েছিল।

FAQ

1. মক্কায় শিব বন্দি কেন?

এই প্রশ্ন সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

2. শিবের জটা কে কি বলে?

দেবতা শিবকে জটাধারা বলা হয়, যার মানে যার মাথায় ম্যাট করা চুলের স্তূপ রয়েছে।

3. শিব কার ধ্যান করেন?

দেবাদিদেব মহাদেব শ্রী নারায়নের ধ্যান করেন।

4.শিবের অবতার কি কি?

দেবাদিদেব ভগবান শিব তথা মহাদেবের 19 টি অবতার রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে হনুমান অবতার, নামদেব অবতার, দুর্বাসা অবতার, ঈশান অবতার, তৎপুরুষ অবতার, অঘোর অবতার, অশ্বত্থামা অবতার, নন্দী অবতার, বীরভদ্র অবতার, কালভৈরব অবতার, গৃহপতি অবতার, পিপ্পলাদ অবতার, শরভ অবতার, জ্যোতিনাথ অবতার, সুরেশ্বর অবতার, যক্ষেশ্বর বা যক্ষ অবতার, বৃষভ বা রিষভ অবতার, কিরাত অবতার, অবধূত বা অদ্ভুত অবতার। লোকবিশ্বাস অনুসারে, হিন্দুধর্মের অন্যান্য দেবদেবীদের মতো ভগবান শিবেরও একাধিক অবতার বিদ্যমান। হিন্দু পুরাণ শাস্ত্রে শিবের অবতারের উল্লেখ রয়েছে।

5. শিবের গলায় সাপের নাম কি?

শিবের গলায় থাকা সাপের নাম- বাসুকী নাগ

6. শিবলিঙ্গের মুখ কোন দিকে থাকে?

শাস্ত্রমতে, শিবের মূর্তি সবসময় ঘরের উত্তর-পূর্বদিরে মুখ করে রাখতে হয়। তাতে পরিবারের উপর মহাদেবের কৃপা বর্ষিত হয়। খারাপ সময়গুলিতে ভয়াবহ কোনও আকার ধারণ করে না। আর্থিক, স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে শিব ঠাকুরের ছবি বা মূর্তি কখনও মাটিতে স্থাপন করে পুজো করবেন না। তবে যেখানে রাখবেন, সেই জায়গাটি ভাল করে পরিস্কার করে, সাদা কাপড়ের উপর রেখে পুজো করুন।

7. শিবরাত্রির সলতে বাগধারাটির অর্থ কি?

বাগধারাটির অর্থ 'একমাত্র সন্তান'।

8. শিব রাতে মেয়েরা কি করে?

আগের দিন থেকে উপোস করে প্রতিটি প্রহরে শিবের পুজো করে।

9. শিব শব্দের অর্থ কি?

শিব শব্দের অর্থ "মঙ্গলময়"।

10. শিব কে?

জড় জগতের তিনটি অবস্থা সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়। ব্রহ্মা হলেন সৃষ্টিকর্তা, বিষ্ণু হলেন পালনকর্তা, আর শম্ভু বা দেবাদিদেব মহাদেব হলেন সংহার কর্তা। সমগ্র জড় জগৎ জড় প্রকৃতির তিনটি গুণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সত্ত্ব গুণের অধীশ্বর হলেন বিষ্ণু। রজ গুণের অধীশ্বর হলেন ব্রহ্মা এবং তম গুণের অধীশ্বর হলেন শিব বা শম্ভু।

11. শিব চতুর্দশী কেন পালন করা হয়?

  • শিবরাত্রির দিনে শিব পার্বতীকে বিয়ে করেছিলেন।
  • প্রত্যেক বছর ফাল্গুনমাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে শিবরাত্রি উদযাপন করা হয়।
  • বিশ্বাস করা হয়, শিবরাত্রির রাতই মহাদেবের প্রিয় রাত।
  • শিবরাত্রির দিনেই মহাদেব তাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন। আর তারপর থেকেই এই নৃত্য পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে যায়।
  • অবিবাহিত মেয়েদের জন্য এটাই সবচেয়ে পূণ্যের রাত। যাঁরা ভগবান শিবের মতো স্বামী চান, তাঁরা এই দিন ব্রত করেন।
  • শিবরাত্রির দিনের এই ব্রত শুধু অবিবাহিত মেয়েরাই নন, বিবাহিত মেয়েরা এমনকি ছেলেরাও এই ব্রত করতে পারেন।
  • শুধু মহাদেবের মতো স্বামী চেয়ে বরই নয়, সাফল্য এবং সমৃদ্ধি চেয়েও এই ব্রত করা যায়।
  • শিবরাত্রির ব্রত করলে অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • নিশীথ কলা বা যে সময়ে মহাদেব শিব লিঙ্গের রূপ ধারণ করেছিলেন, সেই সময়ই শিবরাত্রি ব্রত উদযাপনের উপযুক্ত সময়।
  • সমুদ্র মন্থনে বিষ পাণ করেছিলেন মহাদেব। বিশ্বাস করা হয়, এই কারণেই সারারাত জেগে শিবরাত্রি ব্রত পালন করা হয়।
  • শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিবরাত্রি পালন করা হয়।
  • পূরাণে উল্লেখ করা রয়েছে যে ঠিক কোন কোন উপাদান ব্যবহার করা হয় শিবরাত্রিতে।
  • শিবরাত্রিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলির প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা উপকারীতা রয়েছে।
  • মহাশিবরাত্রির ব্রত করলে রজঃ গুণ এবং তমোঃ গুণগুলির সংযম শক্তি বাড়ে।
  • মহাদেবের ভক্তরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শিব মন্ত্র 'ওম নমঃ শিবায়' স্তব করে থাকেন।

Post a Comment

0 Comments