তুলসী পাতার উপকারিতা | তুলসী পাতা খাবার নিয়ম

 

তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী পাতার গুণাবলী 

তুলসী পাতা অন্ততপক্ষে ২৬ রকমের রোগ প্রতিরোধের সহায়ক বলে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বর্ণিত রয়েছে। তুলসী পাতা খাওয়ার কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই।  যখন খুশি, যেমন খুশি, এবং যতগুলি খুশি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায়। কোনো না কোনো রোগের সুফল পাবেন, বিশেষ করে হার্টের রোগের।

বিভিন্ন রোগে তুলসী পাতার ব্যবহার

চোখ ওঠায়, অধিক রজঃস্রাবে, কুষ্ঠ রোগী, শীঘ্রপতনে, স্বপ্নদোষে, আধকপালিতে, কোষ্ঠকাঠিন্যে, কানে কম শোনায়, বীর্যক্ষীণতায়, সর্দি কাশি, জ্বর, ম্যালেরিয়া, বিদ্যুতের শক লাগা, মুখের দুর্গন্ধে, দাতের যন্ত্রনায়, দাঁতের পোকায়, চুল উঠে গেলে এবং গর্ভ নিয়ন্ত্রণে।

চক্ষু ওঠা

ঠান্ডা বা গরমে ঘোরা বা অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরমে চোখ ওঠে, রোগটি সংক্রামক। একজনের হলে বাড়ি শুদ্ধ সকলেরই হয়। এইসময় তুলসী পাতার রস কাজলের মতো চোখে দিলে বা মধু মিশিয়ে তা চোখে দিলে চোখ ওঠা, চোখ দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়।

অধিক রজঃস্রাব

কারো কারো মাসে ১৪/১৫ দিন অন্তর মাসিক হয় যা ২৮ দিন অন্তর একবার হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে তুলসী গাছের মূল চূর্ণ করে সাদা বা মিঠে পানের রস আধ চামচ মিশিয়ে মাস খানেক খেলে রজঃস্রাব স্বাভাবিক হয়।

কুষ্ঠ রোগ

হাত-পায়ের আঙ্গুলে ক্ষতের সৃষ্টি হয় কারো কারো আঙ্গুল ক্ষয়ে খসে পড়ে। কুষ্ঠ রোগ হলে তুলসী পাতার রস সবসময় সেবন করা উচিত। যদি শ্বেতকুষ্ঠ হয় তবে তুলসী পাতার ৫ টি পাতা সকালে, দুপুরে ও সন্ধ্যায় চিবিয়ে খেলে এবং তুলসী গাছের মূলের মাটির সঙ্গে তুলসী পাতা ঘসে কুষ্ঠের ক্ষততে প্রলেপ দিলে কুষ্ঠের দাগ মিলিয়ে যায়।

আধকপালী

আধকপালি হলে মাথার একপাশে যন্ত্রণা করে। এরকম হলে তুলসী গাছের কচি মঞ্জুরী ছায়াতে শুকিয়ে তা গুঁড়ো করে ৫ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে আধ চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান, এতে আধকপালী সারবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য

যদি পায়খানা পরিষ্কার না হয় তাহলে গলাতেও তার প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কাশি হয়, মাথা ভার ভার থাকে। এরূপ হলে ২৫ গ্রাম তুলসী পাতার সঙ্গে ৫০ গ্রাম গোলাপি ফিটকিরি চূর্ণ করে মিশিয়ে মটর দানার মত বড়ি তৈরি করুন। এই বড়িগুলি ছায়াতে শুকিয়ে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় একটি করে বড়ি জলসহ সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ নিরাময় হয়।

প্রসব কষ্টে

প্রস্রাব অল্প অল্প হয়, প্রস্রাবের সময় যন্ত্রণা করে। প্রসূতিকে তুলসী পাতার রস খাওয়ালে প্রসবের কষ্টকর বেদনা নিরসন হয় এবং সহজে প্রসব হয়। তুলসী পাতার বীজ ২/৩ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে সেই জল ছেঁকে তার সঙ্গে মিছরি মিশিয়ে খেলে প্রসবের যন্ত্রণা দূর হয়।

গর্ভ নিয়ন্ত্রণে

মাসিকের সময় শেষ হলে তুলসির পাতা সেদ্ধ করে সেই জল খেলে গর্ভসঞ্চার নিবারিত হয়।

দাঁতের বেদনায়

নাকের ভিতর রি রি করে, মাড়িতে যন্ত্রণা করে। দাঁতে যদি খুব যন্ত্রণা হয় তবে, তুলসী পাতার সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে বেটে তার বড়ি তৈরি করে দাতের যন্ত্রনার জায়গায় চেপে বসিয়ে দিলে দাঁতের যন্ত্রণা কমে যায়।

জন্ডিস

শরীরে রক্ত হ্রাস পেলে এই রোগ দেখা যায়। এই রোগের সমস্ত শরীর হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। প্রস্রাব হলুদ হয়। চোখের মনি বাদে সব হলুদ হয়ে যায়। এই রোগের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ হল ১০০ গ্রাম মুলোর রসের সঙ্গে ২৫ গ্রাম তুলসী পাতার রস এবং ২৫ গ্রাম আখের গুড় একসঙ্গে মিশিয়ে রোজ সকালে, দুপুরে ও সন্ধ্যায় মাস খানেক খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়। ৫ রাম তুলসী পাতা, ৫ পুনর্ণবার মূল, ৫ গ্রাম জল দিয়ে বেটে খেলে জন্ডিস রোগে যে হলুদ বর্ণ হয় তা কেটে যায় এবং রোগীর রোগও সেরে যায়।

গর্ভরক্ষায়

গর্ভাশয়ের গোলযোগে গর্ভপাত হয়। ৩০ গ্রাম তুলসী গাছের বীজ বেটে কাপড়ে ছেঁকে নিয়ে মাসিক হওয়ার সাতদিন পর থেকে সকালে, সন্ধ্যায় ও রাতে খান, গর্ভরক্ষা হবে।

দীর্ঘস্থায়ী যৌবন রক্ষায়

২৫ গ্রাম অশ্বগন্ধা, পিপলের মূল, তোপচিনি, তালমা খানা, নাগ কেশর ও ১২৫ গ্রাম তুলসী পাতা একসঙ্গে বেটে তাতে ৩০০ গ্রাম মধু, ৭৫০ গ্রাম চিনি দিয়ে চাটনি করুন। তা থান্ডা হলে তাদের ছোট এলাচ, জয়িত্রি, কেশর প্রভৃতি ১৫ গ্রাম মিশিয়ে বেটে ওই চাটনির সঙ্গে মিশিয়ে শীতকালে রোজ ১৫ গ্রাম করে সকালে ১ গ্লাস উষ্ণ গরম দুধের সঙ্গে পান খান। এর দ্বারা আপনার যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হবে। 

এগুলি বাদেও তুলসী পাতার বেশ কিছু ছোট ছোট টিপস রইল

১) স্নানের জলে কিছুক্ষণ তুলসীপাতা রেখে সেই জলে স্নান করলে কোনো চর্মরোগ হয় না।

২) খাবার জলে কিছুক্ষণ তুলসীপাতা রেখে সেই জল পান করলে পেটের রোগ হয় না।

৩) খাদ্যের উপর তুলসী পাতা রাখলে খাদ্য প্রস্তুতিতে কোন দূষিত আবহাওয়ার প্রভাব পড়ে না। তাই সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ এর সময় আবহাওয়া দূষিত হয় বলে খাদ্যবস্তু ও পানীয় জলে তুলসীপাতা দেওয়া হয়।

৪) তুলসী পাতা চিবোলে দাঁত মজবুত হয় এবং পোকা লাগে না।

৫) আমরা সবাই তেল, সাবান, বিভিন্ন ধরনের ক্রিম এর জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে ব্যবহার করে থাকি, তার পরিবর্তে তুলসী পাতার রস গায়ে মাখলে ত্বক উজ্জ্বল হয়, হাড় শক্ত হয়, দেহ সুস্থ থাকে।

৬) তুলসী একদিকে কামশক্তি বৃদ্ধি করে, অপরদিকে আমার সংযত করে রাখে ও নিয়ন্ত্রিত করে।

৭) তুলসী মালা গলায় পরলে শরীর ও মন সুস্থ ও শান্ত থাকে।

৮) তুলসীর গন্ধে রক্তবিকার ও রক্তদুষ্টি দূর হয়।

৯) হিন্দুধর্ম মতে, তুলসী গাছ আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক, তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালালে এবং তুলসী গাছকে প্রদক্ষিণ করলে মনে শান্তি আসে।

১০) তুলসী মনে আধ্যাত্মিক ভাব জায়গায়, মানসিক একাগ্রতা বৃদ্ধি করে।

১১) কার্তিক মাসে প্রতিদিন ৪-৫ টি করে তুলসী পাতা খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে সারা বছর শরীর সুস্থ থাকবে।

তুলসী পাতার উপকারিতা
Kolkata Corner

Post a Comment

0 Comments