মিউচুয়াল ফান্ড কি | মিউচুয়াল ফান্ডে কিভাবে বিনিয়োগ করব

মিউচুয়াল ফান্ড

মিউচুয়াল ফান্ড কি

মিউচুয়াল ফান্ড: বর্তমানে ভারতে শেয়ার মার্কেট ও মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেকটাই বেড়েছে, কিন্তু এই আকর্ষণ অন্যান্য দেশ-বিদেশে বহু সময় আগে থেকেই রয়েছে। শেয়ার মার্কেট ও মিউচুয়াল ফান্ড হল টাকার কমপাউন্ড বৃদ্ধির মাধ্যমে ধনী হওয়ার সহজ উপায়। সেই কারণেই মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি মানুষের আকর্ষণ অনেকটাই বেড়েছে। আকর্ষণ যেমন বেড়েছে সেইভাবে ভাবে মানুষের মনে বেড়েছে এই সম্পর্কিত বহু প্রশ্নের ধারণা, যেমন- বিনিয়োগ তো করলাম কিন্তু এটি কতটা নিরাপদ। তাই সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে আজকের এই প্রতিবেদন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানাবো- মিউচুয়াল ফান্ড কি, মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা, মিউচুয়াল ফান্ডের প্রকারভেদ, মিউচুয়াল ফান্ডে কিভাবে বিনিয়োগ করব, মিউচুয়াল ফান্ডের বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে। 

মিউচুয়াল ফান্ড কাকে বলে 

আজ বিনিয়োগকারীদের বাজারে বিনিয়োগ করার অনেক উপায় রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বিনিয়োগকারীদের বাজারে বিনিয়োগের জন্য একটি খুব ভালো সুযোগ দেয়। স্বল্প সময়ের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা সবসময়ই রিটার্নের ক্ষতির ঝুঁকি বহন করে, বিশেষ করে যখন ব্যালেন্স এবং ডেট ফান্ড ছাড়া ইক্যুইটি ওরিয়েন্টেড ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের আয়কে উপেক্ষা করা যায় না। মিউচুয়াল ফান্ডে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ অনেক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। এই ধরণের বিনিয়োগে, একজনের অর্থ নিরাপদ থাকে এবং দ্বিতীয়ত এটি তাদের ভালো আয়ও দেয়। এক্ষেত্রে মোদ্দা কথা হল- সবসময় কম সময়ের বদলে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের জন্যে লাভজনক ও সুবিধাজনক।

মিউচুয়াল ফান্ডের ইতিহাস

ভারতের প্রথম মিউচুয়াল ফান্ড 1963 সালে ইউনিট ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার আকারে আসে। উদারীকরণের যুগে সরকার পাবলিক সেক্টরের ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে মিউচুয়াল ফান্ড আনার অনুমতি দেয়। 1992 সালে, SEBI (Securities and Exchange Board of India) একটি বিল পাস করেছিল যার অধীনে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুরক্ষিত করা উচিত এবং যতদূর সম্ভব মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত নিরাপত্তা বাজারের নিয়ন্ত্রণ করা। SEBI (Securities and Exchange Board of India) 1993 সালে মিউচুয়াল ফান্ড সংক্রান্ত প্রবিধানগুলিকে অবহিত করেছে। তারপর থেকে, বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলিকে মিউচুয়াল ফান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। SEBI (Securities and Exchange Board of India) সময়ে সময়ে বিনিয়োগকারীদের অর্থ রক্ষার জন্য নিয়ম তৈরি করে এবং বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি করে।

মিউচুয়াল ফান্ড বাংলা

মিউচুয়াল ফান্ড কি তা জানার জন্যে নিম্নে তিন রকমভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হল-

  • একদম সহজ কথায় বলতে গেলে, ধরে নিন আপনি যেকোনো একটি কোম্পানি যেমন- টাটা মোটরস -এর 10 টি শেয়ার কিনলেন। সেক্ষেত্রে শেয়ারগুলি কেনার আগে আপনাকে ওই কোম্পানির বিভিন্ন রকম তথ্য যেমন, কোম্পানিটি শেয়ার মার্কেটে কবে থেকে লিস্টিং হয়েছে, রিটার্নের শতাংশ কত, গত কয়েক বছর ধরে ওই কোম্পানির সেল কতটা বেড়েছে, কিংবা ওই কোম্পানির গত কয়েক বছর ধরে কতটা লস হচ্ছে এই সমস্ত বিষয় নজরে রাখতে হয়। যদি দীর্ঘমেয়াদি ইনভেস্ট হয় সেক্ষেত্রে সমস্যা অনেকটা কম, আর যদি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ হয় তবে আপনাকে প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত বাজারের উপর নজর রাখতে হয়। ঠিক এই জায়গা থেকেই মিউচুয়াল ফান্ড আলাদা। মিউচুয়াল ফান্ডে আপনি নিজেও বুঝে বিনিয়োগ করতে পারেন। কিংবা যেকোনো একটি কোম্পানি বা বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন। যখন আপনি কোন গ্রুপ কোম্পানি মাধ্যমে বিনিয়োগ করবেন এক্ষেত্রে আপনার চাপ অনেকটাই কম হবে, বলতে গেলে পুরোপুরি কম হবে। উপরোক্ত শেয়ার মার্কেটের প্রশ্নগুলো আপনাকে মিউচুয়াল ফান্ডে জানতে হবে না। প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে পেয়ে আপনার বেছে নেওয়া কোম্পানি। আপনাকে প্রতিদিন কিংবা প্রতিমাসে একটি SIP -এর মাধ্যমে একটি পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এবং সেটি আপনি যখন খুশি বন্ধ করতে পারেন এবং যখন খুশি আপনার লাভ বুঝে আপনি টাকা তুলতে পারেন। 
  • মিউচুয়াল ফান্ডগুলি বেশিরভাগ লোকের কাছে বিভ্রান্তিকর এবং ভয়ানক দেখাতে পারে। আমরা খুব প্রাথমিক স্তরে আপনার জন্য এটি সহজ এবং পরিষ্কার করার চেষ্টা করব। আসলে, মিউচুয়াল ফান্ড তখনই তৈরি হয় যখন অনেক বিনিয়োগকারীর তহবিল বা টাকা জমা হয়। এই তহবিল পরিচালনার জন্য তহবিল ব্যবস্থাপক অর্থাৎ একটি গ্রুপ বা একটি কোম্পানি নিয়োগ করা হয়। এটি একটি ট্রাস্ট যা বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করে যাদের একটি সাধারণ উদ্দেশ্য রয়েছে। তারপরে, অর্থের পরিমাণটি বিভিন্ন বিকল্প যেমন ইক্যুইটি, বন্ড, মানি মার্কেট ইনস্ট্রুমেন্ট এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে। প্রতিটি বিনিয়োগকারী ইউনিটের মালিক হয় যা ফান্ডের মালিকানার একটি অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই যৌথ বিনিয়োগ থেকে উৎপন্ন আয়/ মুনাফা সঠিক অনুপাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, স্কিমের 'নেট অ্যাসেট ভ্যালু' গণনা করার পরে, সেই পরিমাণ থেকে কিছু খরচও কেটে নেওয়া হয়।  সহজ কথায়, মিউচুয়াল ফান্ড হল একজন সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প, যা তাকে একজন পেশাদার দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিতে বা শেয়ারে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয় এবং যার খরচও তুলনামূলকভাবে কম।
  • মিউচুয়াল ফান্ড হল বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার এবং একটি একক তহবিলে যুক্তকরার একটি উপায়। এই তহবিলটি একজন ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা পরিচালিত হয়, যিনি বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ বন্ড, স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করেন।  বিনিয়োগকারীকে তার অর্থের জন্য ইউনিট বরাদ্দ করা হয়। এই ইউনিটকে NAV বলা হয়। মিউচুয়াল ফান্ডে, বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের খরচ এবং লাভ ভাগ করে নেয়। বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্ত নেয় তারা কতটা ঝুঁকি নিতে চায় এবং তাদের রিটার্ন নির্ভর করবে বিনিয়োগ কতটা ভালো পারফর্ম করে তার উপর। মিউচুয়াল ফান্ড প্যাসিভ বা সক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে। একটি সক্রিয়ভাবে পরিচালিত তহবিল উচ্চতর রিটার্ন আছে, কিন্তু এটি সেই বিকল্পটি বেছে নেওয়া বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও বেশি ঝুঁকি বহন করে।
  • সহজ কথায়, মিউচুয়াল ফান্ড হল অনেক লোকের অর্থ দিয়ে তৈরি একটি তহবিল।  যেখানে বিনিয়োগকৃত অর্থ বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীকে তার পরিমাণ থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।  আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন মিউচুয়াল ফান্ড কী।

মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা

বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমগুলি প্রচুর বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। আশা করা হচ্ছে যে, আগামী সময়ে বাজারে আরও চমৎকার মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম চালু হবে, যা বিনিয়োগকারীদের সমস্যা আরও কমিয়ে দেবে। এবং বিনিয়োগকারীদের আর্থিকভাবে আরও নর্ভরশীল করে তুলবে।

এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাকে মিউচুয়াল ফান্ডের সেরা কিছু সুবিধার কথা বলব, যার ভিত্তিতে আপনি সহজেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।

1. অল্প পরিমাণের বিনিয়োগ 

মিউচুয়াল ফান্ডের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হল যে, কোনো আগ্রহী বিনিয়োগকারী মিউচুয়াল ফান্ডে মাত্র 100 টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন। অল্প পরিমাণ বিনিয়োগ করার পরেও, আপনার সেই টাকা বা বিনিয়োগ বলা ভালো হবে, পেশাদার বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পদ্ধতিগতভাবে পরিচালনা করা হয়।

2. নিরাপদ বিনিয়োগ

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, মিউচুয়াল ফান্ডগুলি ভারত সরকারের SEBI-এর অধীনে নিবন্ধিত বা রেজিস্টার হয়, তারপর মিউচুয়াল ফান্ডগুলি অন্যান্য বিভিন্ন তহবিলের তুলনায় খুব নিরাপদ বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচিত হয়। কারণ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা তহবিল ভারতের সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ বোর্ড(SEBI) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যার কারণে জনগণের পুঁজির সুরক্ষাও সরকারের দায়িত্ব হয়ে যায়।

3. বিনিয়োগে বৈচিত্র্য

মিউচুয়াল ফান্ডের বিভিন্ন স্কিমের অধীনে, শেয়ার, বন্ড, সিকিউরিটিজের মতো অনেকগুলি বিকল্প বিনিয়োগকারীদের কাছে উপলব্ধ।  বিনিয়োগকারীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়াও, বিনিয়োগকারীর বাজেট অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ডে বিভিন্ন ধরণের বোনাস, সিকিউরিটিজ, এফডি ইত্যাদি কেনা যায়।

4. দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য সর্বোত্তম বিকল্প

বাজারে উত্থান-পতন সাধারণ ব্যাপার। বাজারের অস্থিরতার কারণে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা স্বল্পমেয়াদে কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু একইভাবে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ যেখানে 5 বছর বা তার বেশি সময় বিনিয়োগ করে 20% এর বেশি লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

5. টাকা তোলার সহজতা

মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জিনিস হল যে বিনিয়োগকারীরা যখন প্রয়োজন তখন স্বেচ্ছায় টাকা তুলতে পারেন। এই ধরনের পরিষেবাগুলি শুধুমাত্র মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে দেখা যায়, যেখানে বিনিয়োগকারীদের কয়েক দিনের মধ্যে অর্থ উইথড্রয়ের সুবিধা প্রদান করা হয়।

অন্যদিকে, অন্যান্য তহবিলের দিকে দেখলে, এই প্রক্রিয়াটি বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘ সময় নেয় এবং সময়সীমা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ উত্তোলন করতে পারে না। কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ডের এই পরিষেবাগুলি একে অন্য ফান্ডের থেকে আলাদা এবং ভালো করে তোলে।

মিউচুয়াল ফান্ড কত প্রকার?

বর্তমান বাজারে অনেক ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে প্রধান হল 3 টি। আবার অনেকে 7 টিও প্রকার দেখিয়ে থাকেন। সবকিছুই নিম্নে বিশ্লেষণ করা হল- 

Assets class  অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড তিন ধরনের হয়-

  • Equity mutual fund
  • Debt mutual fund
  • Hybrid mutual fund

Structure বা গঠন অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ড দুই ধরনের-

  • Open Ended Fund
  • Closed Ended Fund

Fund Manage বা অর্থ পরিচালনার হিসেবে মিউচুয়াল ফান্ড দু'ধরনের- 

  • Actively Managed Fund
  • Passively Managed Fund

আরও কয়েক ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে যেমন-

  • International Fund
  • Real Estate Fund
  • Gold Fund
  • Exchange Trader Fund

এবারে প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক। আমরা উপরেই জেনেছি Assets class  অনুযায়ী মিউচুয়াল ফান্ড তিন ধরনের হয়- Equity mutual fund, Debt mutual fund, Hybrid mutual fund.

1. Equity mutual fund

যে মিউচুয়াল ফান্ডগুলি Equity -তে বিনিয়োগ করে তাকে Equity mutual fund বলে। এই ধরণের মিউচুয়াল ফান্ড শেয়ারে বিনোয়োগ করে। এই মিউচুয়াল ফান্ডেরও অনেক প্রকার রয়েছে- 

  • Large Cap Fund
  • Mid Cap Fund
  • Small Cap Fund
  • Sector Fund
  • Diversify Equity Fund
  • Dividend Yield Scheme
  • ELSS(Equity Linked Saving Scheme)
  • Thematic Fund

2. Debt mutual fund

যেসব ফান্ড ডেনচার, বন্ড, সার্টিফিকেট অফ ডিপোজিট -এর মতো ডেট ইনস্ট্রুমেন্টে বিনোয়োগ করে তাকে ডেট ইনস্ট্রুমেন্ট ফান্ড বা ডেট ফান্ড বলে, এতে ইকুইটি ফান্ডের তুলনায় ঝুঁকি কম এবং রিটার্নও কম। এই মিউচুয়াল ফান্ডেরও অনেক প্রকার রয়েছে- 

  • Gilt Fund
  • Junk Bond Scheme
  • Fixed Maturity Plans
  • Liquid Scheme

3. Hybrid mutual fund

এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড ইক্যুইটি এবং ঋণ উভয় ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করে। হাইব্রিড ফান্ড তিন প্রকার-

  • MIP-Monthly Income Plan
  • Balanced Fund
  • Arbitrage Fund

দেশের মিউচুয়াল ফান্ডের কিছু উদাহরণ-

1963 সাল থেকে দেশে মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবসা চলছে। বর্তমানে দেশে 1000 টিরও বেশি মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানি রয়েছে।

  • Motilal Oswal
  • ICICI prudential mutual fund
  • HDFC Mutual fund
  • Reliance mutual funds
  • Aditya Birla sun life mutual fund
  • SBI Mutual fund
  • UTI Mutual fund
  • Kotak Mahindra Fund
  • Franklin Templeton Mutual Fund

বিস্তারিত পড়ুনঃ মিউচুয়াল ফান্ড এর প্রকারভেদ 

মিউচুয়াল ফান্ডে কিভাবে বিনিয়োগ করব?

নতুন বিনিয়োগকারীরা যারা প্রথমবার মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে তারা কোন উদ্দেশ্যে এবং কত বছরের জন্য বিনিয়োগ করছেন যাতে তারা ভালো রিটার্ন পেতে পারেন। SIP এর মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা ব্যাঙ্ক এফডির চেয়ে অনেক ভালো এবং নিরাপদ। যার মাধ্যমে আপনি 100 টাকা থেকে 500 টাকা পর্যন্ত দিয়ে শুরু করতে পারেন। SIP এর মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার অনেক উপায় রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি আপনার মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারেন।

আপনি দীর্ঘ সময়ের জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারেন। আপনি দুটি উপায়ে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন, একটি হল SIP যাকে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বলা হয় এবং অন্যটি হল একমাস পরিমাণ।

যাইহোক, বাজারের ঝুঁকি মিউচুয়াল ফান্ডকেও প্রভাবিত করে। কিন্তু তবুও, চক্রবৃদ্ধির সুবিধা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য এটিতে বিনিয়োগ করে বেশ ভালো। আপনার পোর্টফোলিওতে মিউচুয়াল ফান্ড যোগ করার আগে, আপনার লক্ষ্য কী এবং আপনি কিসের জন্য বিনিয়োগ করতে চান তা স্থির করুন।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি বাচ্চাদের শিক্ষা, বিবাহ, একটি বাড়ি তৈরি বা আপনার অবসরের জন্য বিনিয়োগ করতে চান কিনা, তারপর সেই অনুযায়ী এই ধরণের তহবিলে বিনিয়োগ করা একটি ভালো বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। আপনি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে আপনি নিজেই ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট বা এজেন্টের মাধ্যমেও খুলতে পারেন। ডিম্যাটের মাধ্যমে সরাসরি ফান্ডে বিনিয়োগ করলে কমিশন কম-বেশি হয়। কিন্তু, আপনি যদি কোনো এজেন্টের মাধ্যমে তহবিলে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে এটিকে নিয়মিত তহবিল বলা হয়, যাতে আপনাকে আপনার এজেন্টকে কমিশনও দিতে হয় যা অ্যাকাউন্ট বা ফান্ডের আয় থেকে কেটে নেওয়া হয়, এ কারণে ব্যয়ের অনুপাত বেড়ে যায়। এটি পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনার যদি মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান না থাকে তবে নিয়মিত তহবিলে বিনিয়োগ করা সর্বদা সঠিক বিকল্প।

ব্যাঙ্ক বাজারের সিইও আদিল শেট্টির মতে, “মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা আর আগের মতো কঠিন নয়৷ তবে, নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাই শুরু করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং তারপর বিনিয়োগ করা। প্রথমে জানার চেষ্টা করুন যে এই বিনিয়োগটি স্বল্পমেয়াদী নাকি মধ্যমেয়াদী না দীর্ঘমেয়াদী বিকল্পের জন্য। আপনি যদি একজন বিনিয়োগকারী হন তাহলে আপনাকে ছোট থেকে শুরু করার এবং দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি আপনাকে আপনার বড় কর্পাস তৈরি করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও, এটি বাজারে ঘটতে থাকা যেকোনো ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে। তাই এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি SIP-র দ্বারা অল্প পরিমাণে শুরু করুন এবং যেকোনো ব্লু চিপ কোম্পানি বা বড় ক্যাপ ফান্ডে বিনিয়োগ করুন।

কোন ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন?

মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানি তাদের অর্থ শুধুমাত্র শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে। এবং পয়েন্টগুলি বাজারের ওঠানামা অনুসারে আপনার মিউচুয়াল ফান্ড পোর্টফোলিওতে যোগ করা হয়। বাজারের সমাবেশ তহবিলকেও প্রভাবিত করে। তাই সবসময় আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগ করুন। আপনি কতটা ঝুঁকি নিতে পারেন, কত সময়ের জন্য আপনি বিনিয়োগ করতে পারেন, আপনি যদি চাকরি করেন, তাহলে ট্যাক্স বাঁচানোর জন্য আপনাকে কি ট্যাক্স সেভিং ফান্ডে বিনিয়োগ করতে হবে, নাকি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের জন্য আপনাকে একক পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে, এই সব বিষয় মাথায় রেখেই বিনিয়োগ করা সঠিক কাজ। কেউ স্মলক্যাপ, ব্লুচিপ, মিডক্যাপ, মাল্টিক্যাপের পাশাপাশি ডেট ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। তহবিলের সম্পদের আকার দেখুন আপনি স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন, শার্পি রেশিও, বিটা মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিও বিবেচনায় নিতে পারেন।

মিউচুয়াল ফান্ড SIP করার সুবিধা

একটি পদ্ধতিগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা করার অনেক সুবিধা রয়েছে। স্টক মার্কেটে ঝুঁকি কমানোর জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। যে কেউ প্রতি মাসে 100-500 টাকা দিয়ে SIP শুরু করতে পারেন। এছাড়াও, চক্রবৃদ্ধির সুবিধা রয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদী লোকেরা উচ্চ রিটার্ন পান।

আপনি SIP -এর মাধ্যমে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন। এর সুবিধা হবে যখন স্টক মার্কেটে রিটার্ন বাড়বে, তখন আপনি টপ আপের মাধ্যমে আপনার কিস্তিও বাড়াতে পারবেন। এছাড়াও, যদি বাজার নিচে নেমে আসে এবং আপনি মনে করেন যে আপনি এমন পরিস্থিতিতে SIP -তে টাকা জমা করতে পারবেন না, তাহলে আপনার কাছে আপনার SIP থামানোর বিকল্পও রয়েছে। আপনি যদি একটি নিয়মিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তবে আপনাকে আপনার এজেন্টের দেওয়া একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে যার মাধ্যমে আপনি কয়েক মাসের জন্য SIP বিরতি দিতে পারেন এবং আপনি যদি সরাসরি SIP নিয়ে থাকেন তবে আপনি সেই SIP কোম্পানির ওয়েবসাইটে যেতে পারেন। আপনি নির্বাচন করতে পারেন বিরতি বিকল্প।

আজকের তারিখে CAMS, Paytm, Groww, Zerodha, Angel Broking -এর মতো অনেক অ্যাপ রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি যেকোনো সময় SIP তে বিনিয়োগ করতে পারবেন এবং বিনিয়োগ করা টাকাও তুলতে পারবেন। মনে রাখবেন, যদি ELSS অর্থাৎ ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম থাকে, তাহলে আপনি তিন বছরের আগে টাকা তুলতে পারবেন না।

ব্যাঙ্ক থেকে স্বয়ংক্রিয় ডেবিট বিকল্প থাকা উপকারী।  প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে টাকা কেটে নেওয়ায় সুফল পাওয়া যায় যে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এর জন্য আপনাকে বারবার SIP এর জন্য ব্যাঙ্কে যেতে হবে না।

আদিল শেট্টি বলেছেন যে 'ELSS এবং লার্জ ক্যাপ ফান্ড উভয়ই দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের একটি ভালো বিকল্প। ELSS তহবিলে বিনিয়োগ করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ আপনার অর্থ এতে তিন বছরের জন্য আটকে থাকে, তবে রিটার্ন বেশ ভালো। অন্যদিকে বড় ক্যাপ তহবিলগুলি কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং কোন লক-ইন ছাড়াই ভালো রিটার্ন পাওয়া যায়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার গবেষণা করুন এবং সিদ্ধান্ত নিন যে আপনার কোথায় বিনিয়োগ করা উচিত। চক্রবৃদ্ধির শক্তির কারণে বিনিয়োগ সবসময় বৃদ্ধি পায়, যার জন্য ধারাবাহিক বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আবশ্যক। সর্বদা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন আপনার পরিস্থিতি কী এবং আপনি কিসের জন্য বিনিয়োগ করছেন, তারপরে কেবল বিনিয়োগ করুন।

ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট, সমীর কাপুরের মতে- গত কয়েক বছর থেকে, মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প ভালো বৃদ্ধির সাক্ষী হচ্ছে, যার কারণে নতুন বিনিয়োগকারীরা SIP -এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করছে। যাইহোক, বাজারে বিভিন্ন ফান্ড হাউসের শতাধিক স্কিম উপলব্ধ রয়েছে। তাই, বিনিয়োগকারীদের জন্য, বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য, কিছু বিষয় মাথায় রেখেই তাদের মিউচুয়াল ফান্ড প্রস্তুত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ধাপ হল আপনার আর্থিক লক্ষ্য, বাজেট এবং সময়সীমা নির্ধারণ করা। মিউচুয়াল ফান্ডে কত টাকা বিনিয়োগ করতে চান তা আগে এই সমস্ত কিছুর পরিকল্পনা করুন, তবেই বিনিয়োগ করা সহজ হবে।

সমস্ত স্কিম সাবধানে পড়ুন এবং অন্যান্য তহবিলের সাথে তুলনা করুন। যাতে আপনি সব ধরনের স্কিম সম্পর্কে তথ্য পেতে পারেন। তাই অনেকগুলি স্কিম সবসময় বিনিয়োগকারীর দ্বারা তাদের সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মক্ষমতা, ফান্ড ম্যানেজার সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান, ব্যয়ের অনুপাত, পোর্টফোলিও উপাদান এবং পরিচালনার অধীনে সম্পদের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া উচিত।

যারা প্রথমবার মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করছেন, তাদের জন্য SIP-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ সর্বদাই সেরা বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়।  SIP এর সাহায্যে, আপনি সময়ের সাথে সাথে আপনার বিনিয়োগ বাড়াতে পারেন এবং ঝুঁকি কমিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি ভালো সংস্থা তৈরি করতে পারেন। আপনি যদি চান, আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সময়ে সময়ে আপনার SIP পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

মিউচুয়াল ফান্ড বর্তমান অবস্থা

বর্তমান পরিস্থিতিতে মিউচুয়াল ফান্ড টাকা বিনিয়োগ করার একটি ভালো এবং নিরাপদ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ ব্যাংক বা পোস্ট অফিসের থেকে এখানে অনেক বেশিই রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে। এর আরেকটি সুবিধা হল এখানে আপনি আপনার বিনিয়োগ মাত্র 100 টাকা থেকে শুরু করতে পারবেন। আপনি SIP -এর মাধ্যমে প্রতিদিন বা প্রতিমাসে আপনার নিজের ইচ্ছামত বিনিয়োগ করতে পারেন, এমনকি আপনার আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হলে আপনি বিনিয়োগ করা বন্ধো রাখতে পারেন। এবং সামান্য কিছু ক্ষেত্র ছাড়া, আপনি আপনার টাকা যখন খুশি তুলতে পারবেন। বর্তমান বাজারে অনেক কোম্পানির মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে, তাই সমস্ত কিছু দেখে শুনে আজকে শুরু করুন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ।

Post a Comment

0 Comments