শিবরাত্রি ব্রত পালনের নিয়ম
শুধু মহিলারাই নন, এই ব্রত পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সকলেই পালন করে থাকেন। হিন্দু শাস্ত্র মতে এই দিনেই শিব ও পার্বতী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই ভক্তদের বিশ্বাস, এই পূণ্যতিথি পালন করলে সমস্ত পাপ থেকে নিষ্কৃতি মেলে। সংসারে শান্তি ফেরে এবং মোক্ষ লাভ হয়। আবার অনেকের বিশ্বাস, এদিন মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করলে শক্তি বাড়ে। নির্দিষ্ট কিছু আচার-রীতি মেনেই এই বিশেষ দিনে হর-পার্বতীর পুজো করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে মহা শিবরাত্রির ব্রত পালন করবেন।
শাস্ত্র মতে, শিবরাত্রির দিন সকাল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত উপবাস করেই পুজো করতে হয় ভক্তকে। তবে যিনি উপবাস করছেন, তিনি দুধ-ফল ইত্যাদি খেতে পারেন। কিন্তু সেসব খেতে হবে সূর্যাস্তের আগে। যাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে এই ব্রত পালন করেন, তাঁরা সারারাত জেগে থাকেন। চোখের পাতা এক করেন না। বরং রাত জেগে ভক্তিগীতি গেয়ে থাকেন। পরের দিন পুজোর প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়। কথিত আছে, শিবরাত্রির দিন গঙ্গাস্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়।
এই দিন চার প্রহর ধরে মহাদেবের পুজো হয়। প্রথম প্রহরে জল দিয়ে, দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ঘি এবং শেষ প্রহরে মধু দিয়ে শিবলিঙ্গের অভিষেক করতে হয়। শিবের পুজোয় অপরাজিতা, ধুতরো, আকন্দ ফুল এবং বেল পাতা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। পুজো শেষ হলে মহাদেবের ১০৮ টি নাম যোগ করতে হয়। তবে বর্তমানে অনেকেই ব্যস্ততার জন্য এবং স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এভাবে ব্রত পালন করতে পারেন না। প্রায় একটা গোটা দিন উপবাস করা এবং সারারাত জেগে থাকা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত উপবাস করলেও হয়। স্নান করে শুদ্ধ বসনে সন্ধ্যায় শিবলিঙ্গে জল ও বেল পাতা নিবেদন করে পুজো করতে হয়। তারপর পুজোর প্রসাদ গ্রহণ করলেই ব্রত পালন করা সম্পন্ন হয়। রাত না জাগলেও কোনও দোষ হয় না। পুরোটাই মনের ভক্তি, বিশ্বাস ও নিষ্ঠার ব্যাপার।
আরও পড়ুনঃ শিবরাত্রি সম্পূর্ণ পূজা পদ্ধতি
শিবের ১০৮ টি নাম
- শিব- কল্যাণ স্বরূপ
- মহেশ্বর- মায়ার অধীশ্বর
- শম্ভু- আনন্দ স্বরূপ যাঁর
- পিনাকী- পিনাক অর্থাৎ ধনুক ধারণ করেছেন যিনি
- শশীশেখর- মস্তকে চাঁদকে ধারণ করেছেন যিনি
- বামদেব- অত্যন্ত সুন্দর স্বরূপ যাঁর
- বিরূপাক্ষ- বিচিত্র চোখ যাঁর (শিব ত্রিনেত্রের অধিকারী)
- কপর্দী- জটাধারণ করেছেন যিনি
- নীললোহিত- নীল ও লাল বর্ণ যাঁর
- শংকর- সবার কল্যাণ করেন যিনি
- শূলপাণি- হাতে ত্রিশূল যাঁর
- খটবাঙ্গি- খাটিয়ায় একটি পা রাখেন যিনি
- বিষ্ণুবল্লভ- বিষ্ণুর অতিপ্রিয়
- শিপিবিষ্ট- সিতুহায়ে প্রবেশ করেন যিনি
- অম্বিকানাথ- দেবী দূর্গার স্বামী
- শ্রীকণ্ঠ- সুন্দর কণ্ঠ যাঁর
- ভক্তবৎসল- ভক্তদের অত্যন্ত স্নেহ করেন যিনি
- ভব- সংসার রূপে প্রকট হন যিনি
- শর্ব- কষ্ট নষ্ট করেন যিনি
- ত্রিলোকেশ- তিন লোকের যিনি প্রভু
- শিতিকণ্ঠ- সাদা কণ্ঠ যাঁর
- শিবাপ্রিয়- পার্বতীর প্রিয়
- উগ্র- অত্যন্ত উগ্র রূপ যাঁর
- কপালী- কপাল ধারণ করেন যিনি
- কামারী- কামদেবের শত্রু, অন্ধকারকে পরাজিত করেছেন যিনি
- সুরসুদন- দৈত্য অন্ধককে যিনি বধ করেছেন
- গঙ্গাধর- যিনি গঙ্গাকে ধারণ করেছেন
- ললাটাক্ষ- ললাটে চোখ যাঁর
- মহাকাল- কালেরও কাল যিনি
- কৃপানিধি- করুণার সাগর
- ভীম- ভয়ঙ্কর রূপ যাঁর
- পরশুহস্ত- হাতে পরশু ধারণ করেছেন যিনি
- মৃগপাণি- হাতে যিনি হরিণ ধারণ করেছেন
- জটাধর- জটা রেখেছেন যিনি
- কৈলাসবাসী- কৈলাসের নিবাসী
- কবচী- কবচ ধারণ করেছেন যিনি
- কঠোর- অত্যন্ত মজবুত দেহ যাঁর
- ত্রিপুরান্তক- ত্রিপুরাসুরকে বধ করেছেন যিনি
- বৃষাঙ্ক- বৃষ চিহ্নের ধ্বজা রয়েছে যাঁর
- বৃষভারূঢ়- বৃষের উপরে সওয়ার যিনি
- ভস্মোদ্ধুলিতবিগ্রহ- সারা শরীরে ভস্ম লাগান যিনি
- সামপ্রিয়- সামগানের প্রেমী
- স্বরময়ী- সাতটি স্বরে যাঁর নিবাস
- ত্রয়ীমূর্তি- বেদরূপী বিগ্রহ করেন যিনি
- অনীশ্বর- যিনি স্বয়ং সকলের প্রভু
- সর্বজ্ঞ- যিনি সব কিছু জানেন
- পরমাত্মা- সব আত্মায় সর্বোচ্চ
- সোমসূর্যাগ্নিলোচন- চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নিরূপী চোখ যাঁর
- হবি- আহূতি রূপী দ্রব্যের মতো
- যজ্ঞময়- যজ্ঞস্বরূপ যিনি
- সোম- উমা-সহ রূপ যাঁর
- পঞ্চবক্ত্র- পঞ্চ মুখ যাঁর
- সদাশিব- নিত্য কল্যাণ রূপী
- বিশ্বেশ্বর- সমগ্র বিশ্বের ঈশ্বর
- বীরভদ্র- বীর হওয়া সত্ত্বেও শান্ত স্বরূপ যাঁর
- গণনাথ- গণদের স্বামী
- প্রজাপতি- প্রজার পালনকর্তা
- হিরণ্যরেতা- স্বর্ণ তেজ যাঁর
- দুর্ধর্ষ- কারও চাপের কাছে নত হন না যিনি
- গিরীশ- পর্বতের স্বামী
- গিরীশ্বর- কৈলাস পর্বতে শয়ন করেন যিনি
- অনঘ- পাপরহিত
- ভুজঙ্গভূষণ- সাপের আভুষণ ধারণ করেন যিনি
- ভর্গ- পাপনাশক
- গিরিধন্বা- মেরু পর্বতকে যিনি ধনুক বানিয়েছেন
- গিরিপ্রিয়- পর্বত প্রেমী
- কৃত্তিবাসা- গজচর্ম পরিধান করেছেন যিনি
- পুরারাতি- পুরদের বিনাশ করেছেন যিনি
- ভগবান- সর্বসমর্থ ঐশ্বর্য সম্পন্ন
- প্রমথাধিপ- প্রমথগণের অধিপতি
- মৃত্যুঞ্জয়- মৃত্যুকে জয় করেছেন যিনি
- সূক্ষ্মতনু- সূক্ষ্ম শরীর যাঁর
- জগদ্ব্যাপী- জগতে ব্যাপ্ত বাস যাঁর
- জগদ্গুরু- জগতের গুরু
- ব্যোমকেশ- আকাশের মতো চুল যাঁর
- মহাসেনজনক- কার্তিকেয়র পিতা
- চারুবিক্রম- সুন্দর পরাক্রম যাঁর
- রুদ্র- ভয়ানক
- ভূতপতি- ভূতপ্রেত বা পঞ্চভূতের অধিপতি
- স্থাণু- স্পন্দন বিহিন কূটস্থ রূপ যাঁর
- অহির্বুধ্ন্য- কুণ্ডলিনী ধারণ করেছেন যিনি
- দিগম্বর- নগ্ন, আকাশরূপী বস্ত্র ধারণকারী
- অষ্টমূর্তি- আটটি রূপ আছে যাঁর
- অনেকাত্মা- অনেক রূপ ধারণ করতে পারেন যিনি
- সাত্বিক- সত্ব গুণ যাঁর
- শুদ্ধবিগ্রহ- শুদ্ধমূর্তি যাঁর
- শাশ্বত- নিত্য থাকেন যিনি
- খণ্ডপরশু- ভাঙা পরশু ধারণ করেছেন যিনি
- অজ- জন্ম রহিত
- পাশবিমোচন- বন্ধন থেকে মুক্ত করেন যিনি
- মৃড- সুখস্বরূপ যাঁর
- পশুপতি- পশুদের অধিপতি
- দেব- স্বয়ং প্রকাশরূপ যিনি
- মহাদেব- দেবতাদেরও দেবতা
- অব্যয়- খরচ হওয়া সত্ত্বেও ঘাটতি হয় না যাঁর
- হরি- বিষ্ণুস্বরূপ
- পূষদন্তভিৎ- পূষার দন্ত যিনি উপড়ে ফেলেছিলেন
- অব্যগ্র- কখনও ব্যথিত হন না যিনি
- দক্ষাধ্বরহর- দক্ষের যজ্ঞ নষ্ট করেছিলেন যিনি
- হর- পাপ ও তাপ হরণ করেন যিনি
- ভগনেত্রভিদ্- ভগ দেবতার চোখ নষ্ট করেছিলেন যিনি
- অব্যক্ত- ইন্দ্রিয়ের সামনে প্রকট হন না যিনি
- সহস্রাক্ষ- হাজারটি চোখ যাঁর
- সহস্রপাদ- হাজার পদ বিশিষ্ট
- অপবর্গপ্রদ- কৈবল্য মোক্ষ দান করেন যিনি
- অনন্ত- দেশকালবস্তু রূপী পরিছেদ রহিত
- তারক- সবার তারণ করেন যিনি
- পরমেশ্বর- সর্বাধিক পরম ঈশ্বর
FAQ
1. মক্কায় শিব বন্দি কেন?
2. শিবের জটা কে কি বলে?
3. শিব কার ধ্যান করেন?
4.শিবের অবতার কি কি?
5. শিবের গলায় সাপের নাম কি?
6. শিবলিঙ্গের মুখ কোন দিকে থাকে?
7. শিবরাত্রির সলতে বাগধারাটির অর্থ কি?
8. শিব রাতে মেয়েরা কি করে?
9. শিব শব্দের অর্থ কি?
10. শিব কে?
11. শিব চতুর্দশী কেন পালন করা হয়?
- শিবরাত্রির দিনে শিব পার্বতীকে বিয়ে করেছিলেন।
- প্রত্যেক বছর ফাল্গুনমাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে শিবরাত্রি উদযাপন করা হয়।
- বিশ্বাস করা হয়, শিবরাত্রির রাতই মহাদেবের প্রিয় রাত।
- শিবরাত্রির দিনেই মহাদেব তাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন। আর তারপর থেকেই এই নৃত্য পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে যায়।
- অবিবাহিত মেয়েদের জন্য এটাই সবচেয়ে পূণ্যের রাত। যাঁরা ভগবান শিবের মতো স্বামী চান, তাঁরা এই দিন ব্রত করেন।
- শিবরাত্রির দিনের এই ব্রত শুধু অবিবাহিত মেয়েরাই নন, বিবাহিত মেয়েরা এমনকি ছেলেরাও এই ব্রত করতে পারেন।
- শুধু মহাদেবের মতো স্বামী চেয়ে বরই নয়, সাফল্য এবং সমৃদ্ধি চেয়েও এই ব্রত করা যায়।
- শিবরাত্রির ব্রত করলে অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- নিশীথ কলা বা যে সময়ে মহাদেব শিব লিঙ্গের রূপ ধারণ করেছিলেন, সেই সময়ই শিবরাত্রি ব্রত উদযাপনের উপযুক্ত সময়।
- সমুদ্র মন্থনে বিষ পাণ করেছিলেন মহাদেব। বিশ্বাস করা হয়, এই কারণেই সারারাত জেগে শিবরাত্রি ব্রত পালন করা হয়।
- শুধু ভারতেই নয়, সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিবরাত্রি পালন করা হয়।
- পূরাণে উল্লেখ করা রয়েছে যে ঠিক কোন কোন উপাদান ব্যবহার করা হয় শিবরাত্রিতে।
- শিবরাত্রিতে ব্যবহৃত উপাদানগুলির প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা উপকারীতা রয়েছে।
- মহাশিবরাত্রির ব্রত করলে রজঃ গুণ এবং তমোঃ গুণগুলির সংযম শক্তি বাড়ে।
- মহাদেবের ভক্তরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে শিব মন্ত্র 'ওম নমঃ শিবায়' স্তব করে থাকেন।
0 Comments