তুলসী পাতার উপকারিতা | তুলসী পাতার গুণাবলী

তুলসী পাতার গুণাবলী

তুলসী পাতার উপকারিতা

'তুলসী' বনস্পতির মধ্যে এক অন্যতম ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। তুলসীকে তুলসী এই কারণে বলা হয়, কারণ সম্পূর্ণ আয়ুর্বেদে এমন কোনো ভেষজ ঔষধ নেই যা যেকোনো ক্ষেত্রে, যেকোনোভাবে তুলসীর সমান কাজ করে। তুলসী অর্থাৎ এমন কোনো বস্তু বা পদার্থ যার তুলনা কোন কিছুর সঙ্গে পড়া যায় না। সারাবিশ্বে তুলসী বিভিন্ন প্রকারের পাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষে সাধারণত তিন প্রকার তুলসী পাওয়া যায়- (১) রাম তুলসী বা শ্রী তুলসী, (২) কৃষ্ণ তুলসী বা শ্যাম তুলসী এবং (৩) বনতুলসী। তুলসীর ইংরেজি নাম হল- Holy Basil, এবং এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল- Ocimum tenuiflorum।

তুলসী গাছের গুরুত্ব

তুলসী একটি ঘন শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট ২/৩ ফুট উঁচু একটি চিরহরিৎ গুল্ম। এর মূল কাণ্ড কাষ্ঠল, পাতা ২-৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগ হতে ৫টি পুষ্পদণ্ড বের হয় ও প্রতিটি পুষ্পদণ্ডের চারদিকে ছাতার আকৃতির মত ১০-২০ টি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ছোট ফুল ফোটে। এর পাতা, ফুল ও ফলের একটি ঝাঁঝালো গন্ধ আছে। তুলসী গাছ পরিবেশে প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ করে, একারণে একে 'অক্সিজেনের ভাণ্ডার' বলা হয়।

তুলসী পাতার গুণাবলী 

'Eugenol' এটি এক প্রকার শক্তিশালী অ্যান্টিসেপটিক, এবং অপরটি হল- Rosmarinic acid। এই অ্যাসিড  রাম তুলসী তে থাকে- 4.9-10.47 mg/ g, কৃষ্ণ তুলসী তে থাকে- 5.6-5.15 mg/g, বনতুলসী কে থাকে- 8.89-3.51 mg/g। সেই কারণেই বনতুলসী কে সবচেয়ে উপকারী বলে মানা হয়।

বর্তমান সমাজে অতিরিক্ত পড়াশোনা, অতিরিক্ত ভবিষ্যৎ ভাবনা, এবং ক্যারিয়ার অপশন বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক চাপ বেড়েই চলেছে। এবং এই চাপ, মানসিক যন্ত্রণা ইত্যাদি কমবেশি প্রায় সবারই লেগে থাকে। সমাজ ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে খাদ্য উৎপাদনে বেড়ে চলেছে রাসায়নিকের প্রচুর ব্যবহার। তাই রক্তে-মাংসে গড়া মানুষের শরীরের প্রাকৃতিক ক্ষমতা দিনের-পর-দিন হ্রাস পেতে থাকছে। এই সামাজিক দুরবস্থার সময় প্রকৃতির সাহায্য নিলেই হয়। কারণ প্রকৃতির শুধুমাত্র আমাদের দানা শস্য বা খাদ্য শস্যই, দিয়েছে বিপুল ভেষজ ভান্ডার হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ব্যবহার করে আসছে।

তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

১) কোষ্ঠকাঠিন্যে তুলসী খুবই উপকারী। কয়েকটি তুলসী পাতা , মধু এবং সঙ্গে জিরা পাউডার মিশিয়ে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভালো ফল লাভ হয়।

২) তুলসী পাতার রসের সঙ্গে আদার রস পান করলে বমি হওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৩) তুলসী ক্যান্সারের মতো ভয়ানক রোগকেও দূর করতে সক্ষম। প্রতিদিন দু-একটি তুলসী পাতা চিবোলে শরীরে ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি পায় না।

৪) হাঁপানিতেও তুলসী খুবই কার্যকরী, তুলসী পাতার সঙ্গে কালো লবণ মিশিয়ে চিবোলে হাঁপানি রোগের নিরাময় হয়।

৫) যেসব ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে সেক্ষেত্রে তুলসী এক কথায় রামবাণ।

৬) জ্বর-সর্দি-কাশি তেও তুলসী খুবই উপকারী। তুলসী পাতার সঙ্গে আদা মিশিয়ে খেলে খুব শীঘ্রই রোগ নিরাময় হয়।

৭) তুলসী পাতা চিবোলে দাঁত পোকা লাগা থেকে দূরে থাকে, দাঁত মজবুত এবং উজ্জ্বল হয়।

৮) তুলসী কামবাসনার উপর নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৯) স্নান করার আগে, স্নান করার জলে কয়েকটি তুলসী পাতা রেখে দিয়ে স্নান করলে শরীরে কোনোরকমের চর্মরোগ কিংবা এলার্জি হয়না।

১০) কারেন্টের শক লাগলে তুলসী পাতার রস মেরুদন্ডে এবং পায়ের তালুতে মালিশ করলে তাড়াতাড়ি জ্ঞান ফিরে আসে এবং দুর্বলতা দূর হয়।

১১) তুলসীর রস নিয়ে মালিশ করলে হাড় শক্ত হয়, দেহ ক্লান্তিময় হয়, দেহকে নীরোগ রাখে।

১২) তুলসী পাতা রক্ত পরিষ্কার করতে খুবই কার্যকরী।

১৩) তুলসী গাছ এক আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতীক।

তুলসী গাছের কাছে দাঁড়ালে মন শান্ত হয়, মনের একাগ্রতা বাড়ে।

১৪) প্রত্যহ শ্যাম তুলসীর দু-ফোঁটা রস চোখে ছাড়লে আমৃত্যু চোখের কোনো সমস্যা দেখা দিবেনা।

১৫) কানের যেকোনো সমস্যা, যেরকম- কান পাকা, কানে ব্যথা, পুঁচ হয়ে যাওয়াতে তুলসী খুবই কার্যকরী। তুলসী পাতার রসের সঙ্গে অল্পকিছু কপূর মিশিয়ে উষ্ণ গরম করে কানে দিলে সব ব্যথা নির্মূল হবে।

১৬) সাধারণত রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনি স্টোন বা কিডনিতে পাথর হয়, সেক্ষেত্রেও তুলসী খুবই উপকারী। তুলসী রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

১৭) যারা ধূমপান করেন, এবং ছাড়তে চাইছেন সেক্ষেত্রেও তুলসী খুবই কার্যকরী। যখনই ধূমপান করার ইচ্ছা হবে তখনি কয়েকটি তুলসী পাতা চিবোলে ধীরে ধীরে এই মারণ নেশা থেকে মুক্তি পাবেন।

তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

Post a Comment

0 Comments