জানেন কী, সিমেন্ট ছাড়াই কীভাবে শাহজাহান তাজমহল বানিয়েছিল?
Knowledge:- মমতাজের প্রতি শাজাহানের অনন্য নিদর্শন হল তাজমহল। তাজমহল আজ থেকে প্রায় 400 বছর আগে 1631 সালে বানানো শুরু হয়। এবং 22 বছর পরে 1653 সালে এটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এর নির্মাণে প্রায় 20 হাজার কারিগর দিনরাত পরিশ্রম করেছিলেন। তাজমহলে ব্যবহৃত প্রতিটি বস্তুকে হীরের মত যাচাই করে তবেই ব্যবহার করা হয়েছিল। তাজমহলের দেওয়ালে যে নকশা দেখা যায়, তা ইটালির কারিগর থেকে শেখা হয়। উজবেগিস্থান থেকে আসে শ্বেতপাথরের কারিগর। ইরান থেকে আসে ক্যালিগ্রাফির কারিগর। এবং এই সমস্ত মূল্যবান পাথর খুঁজে আনার জন্য এসেছিলেন বালুচিস্তানের কারিগর। কীরকম ভাবে গড়ে উঠেছিল এই তাজমহল যমুনা নদীর তীরে এই বালি মাটিতে? বর্তমান যুগে সাধারণ মাটির ওপর বিল্ডিং নির্মাণ করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখনকার সময় সিমেন্ট ছাড়া, কোনো মডার্ন টেকনোলজি ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে এই তাজমহল, কিন্তু কিভাবে এত মজবুত একটি নিদর্শন নির্মাণ হয়েছিল। সিমেন্ট ছাড়া কিভাবে শুধু কাঠের ওপর এত মজবুত স্মৃতিসৌধটি 400 বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর একটি অবাক করার মতো ঘটনা হল, কেন শাজাহান তাজমহলের পিছনে আরও একটি তাজমহল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন বা করছিলেন যার রং ছিল কালো, যেটা ছিল তাজমহলের থেকেও সুন্দর কিন্তু কোন কারনে শাহজাহান কালো তাজমহল নির্মাণ করতে ব্যর্থ হন এইসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে kolkatacorner -এর এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আরও পড়ুনঃ কেন সারা বিশ্বে স্কুল বাসের রং হলুদ হয়?
তাজমহলের মতো সুবিশাল মজবুত সৌধ নির্মাণ করার জন্য শাহজাহান এমন একটি স্থান নির্বাচন করেছিলেন, যেখানে সে যুগে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। যমুনা নদীর তীরে বালি মাটিতে ভরা এই স্থানে তাজমহল নির্মাণ করা অসম্ভব ছিল কারিগরদের কাছে। হিস্টোরিয়ানদের মতে, সে যুগে যখন তাজমহল নির্মাণের জন্য মাটি খোদাই -এর কাজ চলছিল সেই জায়গায় হঠাৎ খুব বালি বেরোতে শুরু করে ফলে কারিগররা শাহজাহান কে অন্য একটি স্থান নির্বাচন করতে বলেন তাজমহল নির্মাণের জন্য। কিন্তু শাহজাহান যমুনার তীরে তাজমহল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বদলানোর পরিবর্তে, কারিগরদের মজবুত মাটি না পাওয়া পর্যন্ত মাটি খনন করতে আদেশ দেন। অনেকটা গর্ত খোঁড়ার পর মজবুত মাটি পাওয়া যায় এবং এরপর লোহা পাথরের কংক্রিট আর কাঠ দিয়ে গর্তে ঢেলে পূর্ণ করা হয়। এভাবেই তাজমহলের ভিত মজবুত করা হয়। এই ভিত এতটাই মজবুত ছিল যে তাজমহলের থেকেও উঁচু ইমারত তৈরি করা সম্ভব ছিল এর ওপর। এই ভিত নির্মাণ করতে কারিগররা এক ধরনের কাঠ ব্যবহার করেছিলেন যার নাম ছিল আবলুস (আবলুস (ইংরেজি নাম ebony) একধরনের কাষ্টল গাছ। এর কাঠের রঙ কালো। আবলুস কাঠের ঘনত্ব জলের থেকেও বেশি। তাই জলে ডুবে যায়)। এই কাঠে যত জল লাগবে এই কাঠ আরও মজবুত হবে। ছবিতে কিংবা সামনে থেকে দাঁড়িয়ে দেখলে মনে হবে শুধুমাত্র সাদা মার্বেল পাথর দিয়েই তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু তাজমহল কে সাধারণ পাথর দিয়েই নির্মাণ করা হয়নি, এগুলি সব মূল্যবান পাথর। এবং এর উপর বিভিন্ন মার্বেল লাগানো হয় কিন্তু সেই সময় মার্বেল কাটার পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি পাথরের উপর অনেকক্ষণ ঘষার পর একটা শ্রমিক মাত্র একটা পাথর কাটতে পারতো, মার্বেল লাগানোর কাজ শেষ হওয়ার পর তাজমহল অনেক মূল্যবান পাথর দিয়ে সাজানো হয়। তাজমহলের গায়ে লাগানো বহু মূল্যবান রঙ্গিন রঙ্গিন পাথরগুলি চীন, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, পাঞ্জাব, আর আরব দেশ থেকে নিয়ে আসেন সম্রাট শাহজাহান। এত সুন্দর শিল্পকলা পৃথিবী আগে দেখেনি। এর জন্য শ্বেত পাথর রাজস্থানের মাকরানা থেকে আনা হয়। চুনি-পান্না চীন থেকে নিয়ে আসা হয়। গোমেদ আফগানিস্তান থেকে নিয়ে আসা হয়। এরকম প্রায় 28 রকম বহুমূল্য রত্ন বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এবং সাদা শ্বেত পাথরের উপর বসিয়ে অসাধারণ কারুকার্য করা হয়। এই সমস্ত বহুমূল্য দ্রব্য বিদেশ থেকে আগ্রা নিয়ে আসার জন্য প্রায় 1000 হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ ট্রাক্টরের পেছনের চাকা বড়ো আর সামনের চাকা ছোটো কেন?
সিমেন্ট ছাড়া কীভাবে তাজমহল তৈরী হল?
তাজমহল সম্পর্কিত সবচেয়ে অবাক করা বিষয় ছিল তাজমহল নির্মাণে কোনো সিমেন্টের ব্যবহার করা হয়নি। আজকাল মার্বেল পেস্ট করার জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে, যার মাধ্যমে মার্বেল পাথর পেস্ট করা হয়। তবে সে সময় পাথর আটকানোর জন্য বা ভিত্তিপ্রস্তর তৈরির জন্য বিশেষ ধরনের উপাদান প্রস্তুত করা হতো। একটি আর্টিকেল অনুসারে, তাজমহলের ভিত্তির জন্য একটি ভিন্ন সমাধান করা হয়েছিল, যাকে বলা হয় 'সরোজ'। এটি লাইম, কাদামাটি ইত্যাদি থেকে তৈরি করা হত। এছাড়া গুড়-বাতাসা, বেলের জুস, ডাল, চিনি, রজন, আঠা আরও আজব আজব পদার্থ এতে মেশানো হতো। এর সাহায্যে তাজমহল তৈরি করা হয়েছিল এবং এর সাহায্যে এটি এমনভাবে ধরে রেখেছে যে বহু বছর পরেও তাজমহল ভূমিকম্প, ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, তাপ, শীতের মুখোমুখি হচ্ছে। মেইন বিল্ডিং এর চারটে মিনার আমরা সবাই দেখেছি। সেই চারটি মিনার সোজা বানানো হয়নি একটু বাঁকানো রয়েছে। যাতে ভূমিকম্প হলেও ইমারতের উপর ধসে না পড়ে।
বর্তমান যুগেও তাজমহলের মতো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যায়নি তাই তাজমহল হল পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে একটি।
আজকের এই প্রতিবেদনের উপরের ভাগে আমরা কালো তাজমহল এর কথা উলেখ করেছিলাম। কিন্তু ঐতিহাসিক ও ভূতত্ববিদদের মোতে কালো তাজমহলের কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবে না। এরকম নানা ধরণের তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।
আরও পড়ুনঃ
গাড়ির চাকার রঙ কালো হয় কেন জানেন?
0 Comments