তুলসী দিয়ে রূপচর্চা
তুলসী ফেসপ্যাক: সবাই চায় তাদের ত্বক খুব সুন্দর এবং উজ্জ্বল দেখাক। কিন্তু সবার ত্বক সমান নয়, কিছুজিনের মুখে পিম্পল, বিভিন্ন রকম দাগ-ছোপ দেখা যায়, তাই তারা বাজার চলতি বিভিন্ন ধরণের ফেসপ্যাক এনে ব্যবহার করতে শুরু করে। কিন্তু তার ফলে হতে বিপরীত হয়, কারণ বাজার চলতি সেই কেমিক্যাল প্রোডাক্ট গুলি সবার ত্বকে সমান প্রভাব ফেলে না। বিভিন্ন ত্বকে সেই প্রোডাক্টগুলির পার্শ্বপতিক্রিয়াও দেখা যায়। সেই জায়গায় সুন্দর দেখানোর থেকে খারাপ বেশি দেখায়। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা প্রাকৃতিক অর্থাৎ তুলসী দিয়ে তৈরী কয়েকটি ফেসপ্যাক -এর ব্যাপারে বলবো যা আপনার ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে এবং বিভিন্নরকম সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
তুলসি একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা ত্বকের পাশাপাশি পুরো শরীরিক যত্নের রুটিনে ব্যবহার করা হয়। এই ভেষজ উদ্ভিদটি অনেক পুষ্টিতে সমৃদ্ধ যা অ্যান্টি-এজিং হিসাবেও কাজ করে। খুব কম মানুষই জানেন যে এটি আপনার মুখে জাদুকরী প্রভাব দেখাতে পারে। এটি শুধু গায়ের রং উজ্জ্বল করে না, পাশাপাশি এতে পাওয়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের ছিদ্র থেকে ময়লা দূর করতেও সাহায্য করে। তুলসী দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক লাগালে মুখে উজ্জ্বলতা আসে এবং দাগছোপ দূর হয়। আপনি ঘরে তৈরী করা তুলসীর ফেসপ্যাক দিয়েও উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারেন। এর জন্যে বাজার চলতি কোনো কিছু আপনার লাগবে না। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার এই যে তুলসী একটি ভেষজ উদ্ভিদ তাই এটি প্রতিটি ত্বকের জন্য সেরা।
মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
আপনিও যদি ত্বক সংক্রান্ত অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করতে চান, তাহলে অবশ্যই তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি এই ফেসপ্যাকগুলি ব্যবহার করে দেখুন।
ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী বাড়িতে তুলসী গাছ থাকা একটি সাধারণ ব্যাপার। তুলসীকে অন্য দেবী হিসেবে এবং পুজোয় ব্যবহার করা হলেও এটি বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই গাছ-পাতার ঔষধিগুণ ছাড়াও রয়েছে সৌন্দর্য বৃদ্ধির গুণও। এই কারণেই চুলের পাশাপাশি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও তুলসি ব্যবহার করা হয়। তুলসী পাতায় কিছু ঘরোয়া উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা ফেসপ্যাক মুখের বর্ণের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে এবং মুখের ব্রণের সমস্যাও কমিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে তুলসী থেকে ফেসপ্যাক তৈরি করা হয় এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে।
ত্বকের জন্য তুলসীর উপকারিতা
- তুলসী পাতা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
- বিভিন্নভাবে ত্বকে তুলসী ব্যবহার করলে ত্বক সমান হয়।
- তুলসীর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন অংশকে রোগ-জীবানু থেকে দূরে রাখে।
- প্রতিদিন নিয়মিত 3-4 টি তুলসী পাতা খেলে তা হজমে সাহায্য করে।
- সূর্যের এক্সপোজার দ্বারা সৃষ্ট কোষ এবং টিস্যু মেরামত করে।
- শরীরের শক্তি বাড়িয়ে মেটাবলিজম বাড়ায়।
- প্রাকৃতিকভাবে ব্রণ ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
- বার্ধক্য, কালো দাগ, সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা দূর করে।
- তুলসীপাতা শরীরে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
- এটি ক্ষতিগ্রস্ত কোষ এবং টিস্যু মেরামত করে ত্বকে উজ্জ্বলতা প্রদান করে।
- এটি থেকে তৈরি ফেসপ্যাক ত্বকের অনেক সমস্যা যেমন বলি, ফাইন লাইন, কালো দাগ, ব্রণের দাগ মোকাবেলায় সাহায্য করে।
- তুলসী ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- এটি ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, লালভাব মোকাবেলায়ও সহায়তা করে।
ব্রণের জন্য তুলসী পাতা ও নিমের ফেসপ্যাক
তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণ এমন কিছু সাধারণ সমস্যা যা আমরা প্রত্যেকেই সম্মুখীন হয়ে থাকি এবং এই তুলসি এবং নিম ফেস প্যাকটি সেই সমস্ত ত্বক সম্পর্কিত সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য একটি নিখুঁত সমাধান হতে পারে। নিমের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ব্রণ, বিভিন্ন প্রকারের দাগ-ছোপ এবং এর সাথে সম্পর্কিত লালভাব এবং চুলকানি প্রতিরোধ করে। এছাড়াও, লবঙ্গের তেল মৃত ত্বকের কোষগুলি অপসারণ করে এবং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ত্বকে একটি তারুণ্যের আভা দেয়।
প্রয়োজনীয় উপাদান
- তুলসী পাতা- 1 কাপ
- নিম পাতা- 1 কাপ
- লবঙ্গ তেল - 1 চা চামচ
কিভাবে বানাবেন এবং ব্যবহার করবেন
- তুলসী এবং নিম পাতা ধুয়ে (নিম পাতা দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ায়) একটি ব্লেন্ডারে রাখুন এবং পেস্ট তৈরি করুন।
- প্রস্তুত পেস্টে লবঙ্গ তেল যোগ করুন এবং আবার ভালভাবে মেশান এবং প্যাকটি ভালোভাবে প্রস্তুত করুন।
- মুখ ভালো করে পরিষ্কার করুন এবং ফেসপ্যাকটি মুখে সমানভাবে লাগান।
- প্রায় 30 মিনিটের জন্য ফেসপ্যাকটি লাগিয়ে রাখুন।
- 30 মিনিট পরে আপনার মুখ ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সপ্তাহে দুবার এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করুন।
ত্বকের রং ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে তুলসী এবং ওটস এর ফেসপ্যাক
আপনি যদি আপনার গায়ের রং উজ্জ্বল করার প্রাকৃতিক উপায় খুঁজছেন, তাহলে এই তুলসি এবং ওটস -এর ফেসপ্যাকটি একটি দুর্দান্ত বিকল্প হতে পারে। ওটসে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের মৃত কোষগুলিকে অপসারণ করতে,তাদের নরম করতে এবং পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড নতুন কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে এবং বাজারে উপলব্ধ অনেক অ্যান্টি-এজিং ক্লিনজারের একটি জনপ্রিয় উপাদান।
প্রয়োজনীয় উপাদান
- ওটস - 2 টেবিল চামচ
- তুলসী পাতা - 1 কাপ
- দুধ- 1 চামচ
কিভাবে বানাবেন এবং ব্যবহার করবেন
- প্রথমে ওটসের মিহি গুঁড়ো করে নিন।
- তুলসী পাতা ধুয়ে পিষে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন।
- একটি পাত্রে পেস্টটি বের করুন এবং এতে গ্রাউন্ড ওটস (গুঁড়ো করা) যোগ করুন।
- সব উপকরণ ও দুধ ভালো করে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন।
- ফেসপ্যাক লাগানোর আগে কাঁচা দুধ দিয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।
- মুখে এবং ঘাড়ে সমানভাবে ফেসপ্যাক লাগান।
- এটি প্রায় 15 মিনিটের জন্য রাখুন এবং এটি শুকাতে দিন।
- এবং প্রায় 15-20 মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে দুবার, অন্তত এক মাস ব্যবহার করলে ত্বকের উন্নতি হবে।
এছাড়াও কয়েকটি অল্প সময়ের ফেসপ্যাক
- কমলা খোসার গুঁড়োর সঙ্গে তুলসী পাতা মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। বিকল্পভাবে, আপনি তুলসী এবং চন্দন পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন, আপনি চাইলে 1 চা চামচ দুধের সাথেও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি প্রতিদিন 5-10 মিনিটের জন্য মুখে লাগান, যাতে ব্রণ এবং তাদের দাগ কমানো যায়। এছাড়া রক্ত ও ত্বক পরিষ্কার করতে প্রতিদিন 5 টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।
- তুলসী ত্বকের রং উজ্জ্বল করে। একটি ঘন পেস্ট তৈরি করতে পর্যাপ্ত দুধের সাথে তুলসী পাতা মিশিয়ে নিন। এই পেস্টটি মুখে লাগান এবং স্ক্রাব করার আগে 20 মিনিটের জন্য রেখে দিন। এক মাস নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
- তুলসীর খুব ভালোই অ্যান্টিসেপটিক গুণ রয়েছে। 1 চা চামচ মুলতানি মাটির সাথে তুলসী পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এরপর এতে 1 চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুলতানি মাটি মুখের উপর জমে থাকা অতিরিক্ত তেল শোষণ করতে সাহায্য করে এবং ছিদ্র সঙ্কুচিত করে। সপ্তাহে তিনবার এই প্যাকটি লাগান।
- বাড়িতে আপনার নিজের প্রাকৃতিক টোনার তৈরি করুন, যার জন্য ফুটন্ত জলে কয়েকটি তুলসী পাতা রাখুন এবং ঠান্ডা হতে দিন। এই জল ছেঁকে নিয়ে সমান অনুপাতে গোলাপ জল মেশান। কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে মুখে লাগান।
- 10-12 টি তুলসী পাতা 10-12 টি পুদিনা পাতা এবং সামান্য জল দিয়ে পিষে নিন। তারপর তা থেকে রস বের করে ফেস মাস্ক হিসেবে মুখে লাগান। 10 থেকে 15 মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
তুলসী ফেস প্যাক সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবে সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার করার আগে একটি টেস্ট করে নিন।
বন্ধুরা, আজকের এই পোস্টে আমরা প্রাকৃতিকভাবে তৈরী তুলিসর কয়েকটি ফেসপ্যাক এর কথা বললাম। আমরা আশা করি, এই ফেসপ্যাক গুলি ব্যবহার করে আপনি খুব ভালো ফলাফল পাবেন। যদি এই ফেসপ্যাক গুলি ব্যবহারের পর আপনি ভালো ফলাফল পান তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন, এবং বন্ধুদের সঙ্গে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না। প্রতিদিন এরকম বিভিন্ন বিষয়ের পোস্ট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জয়েন করুন- (Click Here)
0 Comments