মশা তাড়ানোর উপায়
বর্তমান সময়ে কমবেশি সব ঋতুতে মশা দেখা যায়, তাই যতই সাবধানে থাকা হোক না কেন কমবেশি কিছু মশা আমাদের কামড়ায়। যাদের বাড়ির কাছে আবার বেশি নালা-নর্দমা থাকে সেই সমস্ত বাড়িতে সকাল ও সন্ধ্যায় মশার উপদ্রপ একটু বেশি হয়। এবং এই মশা কামড়ানোর ফলে আমরা দেখেছি অনেক রোগ হয় যেমন, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানিজ এনসেফালাইটিস এবং বিভিন্ন ধরণের জ্বর। এগুলি সার্বিকভাবে শরীরপক্ষে খুব খারাপ। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া ভাবে মশা তাড়ানোর উপায়।
কিভাবে ঘরের মশা তাড়াবেন
আমরা উপরে বললাম যে ঘরোয়া বা প্রকৃতিক উপায়, এর আবার কারণ কি? বাজারে তো অনেক প্রোডাক্ট পাওয়া যায় সেগুলো আনলেই হল। তাহলে এবার বলা যাক, মশার আতঙ্কে প্রায় সবাই আতঙ্কিত, এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ মশা মারার জন্য বাজারে চলতি রাসায়নিক কয়েল, তরল বা স্প্রে এবং বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের ধূপকাঠিও কিনে থাকেন এবং ব্যবহার করে থাকেন। এই সমস্ত জিনিস ব্যবহার করলেও সেরকম কোনো লাভ হয় না। এই সমস্ত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে মশার না যতটা ক্ষতি হয় তার থেকে বেশি ক্ষতি হয় আমাদের। এই জায়গায় সব থেকে বড়ো কথা হল উপরের ওই রাসায়নিক দ্রব্যগুলো যতটুকু সময় ধরে চালানো হয় বা জ্বলে ওই নির্দিষ্ট সময়টুকু মশারা রুমের বাইরে থাকে বা হয়তো মাথা ঘুরে পড়ে যায়, কিন্তু পুরোপুরি ভাবে তাড়ানো যায় না। এবং সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় আমাদের শরীরের এবং ফুসফুসের। লাখ লাখ চেষ্টার পরও এই মশারা ঘরে ঢুকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, এবং জ্বরের মতো রোগ ছড়ায়। এই রাসায়নিকযুক্ত স্প্রে এবং কয়েলের মতো জিনিস থেকে যে ধোঁয়া বের হয় তা ক্ষতিকারক। এসব এড়াতে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করে এই মশা থেকে রেহাই পেতে পারেন। এই সমস্ত উপায় সম্পর্কে জানতে আমাদের আজকের এই প্রতিবেদন "মশা তাড়ানোর উপায় | মাছি তাড়ানোর উপায়" টি সম্পূর্ন্ন পড়ুন।
তুলসি গাছ
তুলসীর অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। ঘরে তুলসী গাছ লাগালে মশা পালিয়ে যায়। এর রস শরীরে ব্যবহার করতে পারেন, এতে মশা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঘরে যে জায়গায় একটু রোদ লাগে সেই জায়গায় একটি টবে একটি বা দুটি তুলসী গাছ লাগিয়ে রাখুন।
ঘরে কর্পূর জ্বালিয়ে দিন
বিশেষ করে পূজায় কর্পূর ব্যবহার করা হলেও এটি মশার কামড় থেকেও রক্ষা পেতে সাহায্য করতে পারে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে যদি মশা আপনার ঘরে আতঙ্ক তৈরি করতে শুরু করে, তবে আপনি এর জন্য কর্পূর ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ঘরে কর্পূর জ্বালিয়ে রাখুন। ঘরের জানালা-দরজাও বন্ধ করে দিন, কিছুক্ষণ পর দরজা খুলুন এতে করে সব মশা ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে।
ল্যাভেন্ডার ফুল
ল্যাভেন্ডার ফুল শুধু সুগন্ধিই নয়, এটি মশা তাড়াতেও কার্যকর। এর ঘ্রাণ থেকে মশা পালিয়ে যায়। আপনি এর তেল দিয়ে ঘরে স্প্রে করতে পারেন।
গাঁদা ফুল
গাঁদা ফুল শুধু আপনার ঘরের বারান্দাকে সুন্দর করতেই কাজ করে না, এর সুগন্ধি মশা ও উড়ন্ত পোকামাকড়কেও আপনা ঘর থেকে দূরে রাখে।
অ্যালকোহল
মশা নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি বিয়ার বা অ্যালকোহল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ মশারা বিয়ার এবং ওয়াইনের গন্ধ সহ্য করতে পারে না এবং তারা এই জাতীয় গন্ধ থেকে দূরে পালিয়ে যায়। স্প্রে বোতলে ভরে বিয়ার বা অ্যালকোহল স্প্রে করতে পারেন।
তেজপাতা
প্রথমে নিমের তেলে কর্পূর মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এবার এই মিশ্রণটি তেজপাতার উপর স্প্রে করুন এবং তেজপাতা পুড়িয়ে দিন। তেজপাতার ধোঁয়া কোনোভাবেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। আশ্চর্যজনকভাবে বাড়ির সমস্ত মশা এই ধোঁয়ার প্রভাব থেকে পালিয়ে যাবে।
জোয়ান ও সরিষার তেল
সরিষার তেলে জোয়ানের গুঁড়া মিশিয়ে তা দিয়ে পিচবোর্ডের টুকরোগুলো ভিজিয়ে রাখুন এবং ঘরে উঁচু করে রাখুন। মশা কাছেও আসবে না।
নিমতেল
ঘুমানোর সময় মাথায় কর্পূর মিশ্রিত নিমের তেলের প্রদীপ জ্বালান।
এই তেলটি নারকেল তেলের সাথেও বিস্ময়কর কাজ করবে
সমপরিমাণ নারকেল তেল, নিমের তেল, লবঙ্গ তেল, পিপারমিন্ট তেল এবং ইউক্যালিপটাস তেল মিশিয়ে একটি বোতলে ভরে রাখুন। রাতে ঘুমানোর সময় ত্বকে লাগান এবং শান্তিতে ঘুমান। বাজারের ক্রিমের থেকেও এই পদ্ধতি বেশি কার্যকর।
পুদিনা
পুদিনা পাতার রস স্প্রে করলে মশা পালায়। এটি শরীরেও লাগানো যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ টিকটিকি তাড়ানোর উপায়
মাছি তাড়ানোর উপায়
বর্তমানে সব ঋতু বিশেষ করে বর্ষাকালে বাড়িতে মাছি আসা স্বাভাবিক, সেই সাথে এগুলি বিভিন্ন ধরণের রোগ ছড়ায় যেমন পেটের পীড়া, রক্তে দূষণ এবং নিউমোনিয়া। তাই সবাই চায় রোগ ছড়ানো এই মাছিগুলোকে তাদের বাড়ি বা কর্মস্থল ইত্যাদি থেকে দূরে রাখতে। কিন্তু সব চেষ্টা সত্ত্বেও এই মাছিরা আসতে থাকে। যার জেরে ঘরবাড়িতেও বিরাজ করছে বিপত্তি। ঘরের আর্দ্রতা ছাড়াও আবহাওয়ায় আর্দ্রতা, রাস্তার ময়লা বা ঘরে রাখা এমন ধরনের জিনিস যা আবর্জনার মধ্যে ফেলতে হয়, এই জিনিসগুলি মাছি আকর্ষণ করে। অন্যদিকে ঘর পরিষ্কার রাখলেও বাইরে থেকে কেউ বাড়িতে এসে ভিজে যাওয়ার কারণে এমনকি পায়ের আর্দ্রতার কারণে মেঝেতে দাগ পড়ার কারণেও এসব মাছি আপনার বাড়ির দিকে চলে আসে। এই মাছিরা প্রথমে ঘরের বাইরে পড়ে থাকা আবর্জনার ওপর, তারপর আমাদের খাবার ও পানীয়ের ওপর বসে। যে কারণে রোগ বাড়িতে আসতে শুরু করে, এই রোগগুলি কখনও কখনও মারাত্মকও হতে পারে।
অনেক সময় আমরা তাদের উড়িয়ে দিয়ে গিয়ে বা মারতে গিয়ে আঘাত পাই, কিন্তু তাদের তাড়ানোর সমস্ত প্রচেষ্টা বৃথা যায়। অন্যদিকে ভুলবশত কেউ একটি মাছি মেরে ফেললে অনেক মাছি সেখানে চলে আসে। মাছি দ্বারা সৃষ্ট সমস্যাগুলি ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন অনেক ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের বাড়িকে মাছি-মুক্ত বাড়ি করতে পারি।
ঘর থেকে মাছি দূরে রাখতে এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন
তুলসী
তুলসি শুধু তার ঔষধি গুণের জন্যই পরিচিত নয়। বরং এটি মাছি তাড়াতেও বেশ কার্যকর। তাই ঘরে তুলসী গাছ লাগান এবং মাছি তাড়ান। এছাড়াও আপনি পুদিনা, ল্যাভেন্ডার বা গাঁদা গাছ লাগাতে পারেন।
জলের প্লাস্টিক ব্যাগ
ঘরের প্রবেশ পথে প্লাস্টিকের জলের ব্যাগ ঝুলিয়ে রাখুন যাতে মাছি ঘরের ভেতরে না আসে।
দারুচিনি
মাছি তাড়াতে দারুচিনি ব্যবহার করুন; তারা এর গন্ধ ঘৃণা করে এবং এটি থেকে পালিয়ে যায়।
ভিনিগার
ভিনিগার হল মাছি দূর করার সর্বোত্তম উপায়, একটি পাত্রে কিছু ভিনেগার নিন এবং তারপর তাতে কিছু ডিটারজেন্ট যোগ করুন, যা মাছিদের তার দিকে আকৃষ্ট করবে। কিন্তু বের হয়ে আসতে পারবে না এবং এতে ডুবে যাবে।
শসা
আপনি আবর্জনার উপরে শসা রাখতে পারেন, যাতে মাছিরা এতে ডিম দিতে না পারে। কারণ শসা থেকে মাছি পালিয়ে যায়।
আপেল এবং লবঙ্গ
একটি আপেলের মধ্যে কয়েকটি লবঙ্গ ঢুকিয়ে দিন এবং এটি এমন জায়গায় রাখুন যেখানে মাছি রয়েছে। দেখবেন মাছি পালিয়ে যাচ্ছে, মাছিরা লবঙ্গের গন্ধ সহ্য করতে পারে না।
কর্পূর
এটি বাড়িতে মাছি প্রবেশ করতে বাধা দেয়। একটু কর্পূর জ্বালিয়ে ঘরের চারপাশে ঘোরাবেন, এর গন্ধে মাছি পালিয়ে যাবে।
লাল মরিচ
কিছু লাল মরিচ নিন, এটি একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন এবং এতে কিছু জল যোগ করুন, এটি ভালভাবে নেড়ে মেশান। এবার এই দ্রবণটি ঘরে ছিটিয়ে দিন, এতে মাছি মারা যাবে।
তেল
কিছু তেল আছে যা মাছি দূরে রাখতে ব্যবহার করা হয়। এগুলি হল ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, পেপারমিন্ট এবং লেমনগ্রাস। এগুলি কেবল তাদের সুগন্ধের জন্যই নয়, মাছি তাড়ানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়। আপনার শোবার ঘরে এবং রান্নাঘরে এটি স্প্রে করা যেতে পারে। বহুবার প্রমাণিত হয়েছে লবঙ্গ তেলের গন্ধে মশা ও মাছি পালিয়ে যায়। এছাড়াও নারকেল তেলের সাথে লবঙ্গের তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ওডোমোসের মতো কাজ করে।
স্ক্রীনিং
এর সাহায্যে আপনি আপনার বাড়িতে মাছি ঢোকা ঠেকাতে পারবেন। স্ক্রীনিং ঘরে পর্যাপ্ত আলো দেয়, যাতে মাছি ঘরে ঢুকতে না পারে।
মাছি তাড়ানোর অন্যান্য উপায়
সবুজ আপেল সাবান জলে মিশিয়ে একটি পাত্রে রাখুন, এর সুগন্ধে মাছিও এর কাছে চলে আসবে এবং এর গন্ধ পেয়ে মারা যাবে।
ঘরের সেই অংশে দারুচিনি রাখুন যেখান থেকে মাছি আসে, মাছি এতে অ্যালার্জি হয় এবং তারা তা থেকে পালিয়ে যায়।
বাড়ির চারপাশে গাঁদা ফুল লাগালে মাছি দূরে থাকে।
ঘরের জিনিসপত্র বিশেষ করে মিষ্টি জিনিস খোলা রাখবেন না, এতে মাছিও আকৃষ্ট হয় এবং আপনার বাড়িতে আসে।
জানালা যতটা সম্ভব পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখুন, এবং ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখুন, ঘরে নোংরা রাখলে মাছিরা ময়লার প্রতি আকৃষ্ট হয়, তাই পরিষ্কার বাড়ির সবকিছু পরিষ্কার রাখুন যাতে মাছি না আসে।
JOIN OUR TELEGRAM CHANNEL | CLICK HERE |
0 Comments