কলকাতা শহরের অজানা ইতিহাস | কলকাতার ইতিহাস বই

কলকাতা শহরের ইতিহাস 

KOLKATA: The City of joy,পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতবর্ষের মানুষের কাছে একটি প্রিয় ও ভালোবাসার শহর হল কলকাতা। হ্যাঁ, রসগোল্লার নাম শুনলে প্রথম যে শহরটির কথা মাথায় আসে সেই শহর কলকাতা। শহরটির জন্ম হয়েছিল ১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট, রবিবার। গন্ডগ্রাম থেকে A1 সিটিতে‌ রূপান্তরিত আমাদের শহর কলকাতা। বর্তমানে এই ব্যস্ত শহর কলকাতা যাকে ঘিরে আজ লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদিতে প্রয়োজনীয়। কলকাতা, যাকে বাদ দিয়ে আমাদের একটা মুহূর্তও ভাবা সম্ভব নয়। এই শহর ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে অনেক প্রচেষ্ঠায়, অনেক খড়-কুটো পুড়িয়ে, এখনও চলছে কলকাতাকে আরও আধুনিক করে, আরও সুন্দর করে মেগাসিটিতে রূপান্তরের কাজ। পূর্বেকার ভারতের রাজধানী, এবং বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও মেকলে সাহেব বর্ণিত 'City of Palace'। এই কলকাতা শহরের কথা ভাবলে মনে মনে আনন্দ জাগে, গর্ব অনুভূত হয়। তাই এই কলকাতা শহর সকলের কাছে ভালোলাগার শহর, ভালোবাসার শহর, ব্যস্ততার শহর ও মুশকিল-আসানের শহর।

কলকাতা শহরের নামকরণ

১৫৯৬ সালে সম্রাট আকবর রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে একটি নকশা তৈরি করেন। এই নকশায় কলিকাতা গ্রামের নাম দেখা যায়। কলিকাতার ইংরেজি নাম হয়েছে ক্যালকাটা। এই ব্যাপারে নানা মত প্রচলিত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মহলে। কেউ বলেন, কালীক্ষেত্র কথাটি থেকে কলিকাতা নামের উৎপত্তি। আবার কারও কারও মতে, যে জায়গার নাম ছিল কলিকাতা, সেখানে আগে ছিল জেলেদের বাস, ছিল চুনের ভাটি এবং চুনকে চলতি কথায় বলা হতো কলি। এই কলি থেকে কলিকাতা। ২০০১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে 'ক্যালকাটা' থেকে নাম পরিবর্তন হয়েছে 'কলকাতা'।

কলকাতার সীমানা ও মানচিত্র

পশ্চিমে হুগলি নদী, উত্তরে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণে দক্ষিণ ২৪ পরগনা।

পুরনো কলকাতার সীমানাটি হল, বর্তমানে চিৎপুর, বাগবাজার, শোভাবাজার ও হাটখোলা ছিল সুতানুটি গ্রাম। ধর্মতলা, বউবাজার, সিমলা, জানবাজার প্রভৃতি অঞ্চল ছিল কলিকাতার অন্তর্ভুক্ত। আর হেস্টিংস, ময়দান ও ভবানীপুর অঞ্চল জুড়ে ছিল গোবিন্দপুর গ্রাম।

নতুন কলকাতার সীমানাটি হল, উত্তরে সিঁথি, কাশিপুর ও ঘুঘুডাঙ্গা, দক্ষিণে টালিগঞ্জ, খিদিরপুর ও বেহালা, পূর্বে সল্টলেক, বেলেঘাটা, তপসিয়া ও পশ্চিমে হুগলি নদী।

কলকাতার মানচিত্র

কলকাতা শহরের প্রতিষ্ঠাতা

আমরা বহু বছর থেকে কলকাতা শহরের নামটি শুনে আসছি। কলিকাতা তার থেকে ক্যালকাটা এবং বর্তমান আমাদের ভালোবাসার শহর কলকাতা। কিন্তু আমাদের এই ভালোবাসার শহর কলকাতার প্রতিষ্ঠাতা কে? এই প্রশ্নটি আমাদের সবার মনে আসে, তাই এই প্রশ্নের উত্তরটা জানা উচিত। কলকাতা শহরের  প্রতিষ্ঠাতা হলেন জব চার্নক।

কলকাতার ইতিহাস বই

সাধারণত কোনো রাষ্ট্র, কোনো ছোটো দ্বীপ, কিংবা কোনো ছোটো রাজ্য এগুলির সম্বন্ধে বিশদে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান উৎস হল বই। বই থেকে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সমস্ত কিছু তথ্য আহরণ করতে পারি। কারণ এইসব বই গুলির মধ্যে বহু লেখক, বহু দার্শনিক তাদের চোখে দেখা কাহিনীকে কিংবা ঘটনাগুলিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তুলে ধরেন। তাই, কলকাতা সম্পর্কিত বিভিন্ন পুস্তক ও লেখক এর নাম দেওয়া হল- 


কলকাতার ইতিহাস বই

  • Calcutta: A Cultural and Literary History, কৃষ্ণ দত্ত
  • The Epic City: The World on the Streets of Calcutta, কুশনাভা চৌধুরী
  • Grand Delusions: A Short Biography of Kolkata, ইন্দ্রজিৎ হাজরা
  • The Black Hole of Empire: History of a Global Practice of Power, পার্থ চট্টোপাধ্যায়
  • Calcutta: The Stormy Decades
  • Longing Belonging: An Outsider at Home in Calcutta, বিশ্বনাথ ঘোষ
  • Calcutta: Two Years in the City, অমিত চৌধুরী
  • Empire and Ecology in the Bengal Delta: The Making of Calcutta, দেবযানি ভট্টাচার্য
  • City of Joy, দোমিনিক ল্যাপিয়ের
  • Calcutta, জিওফ্রে মুরহাউস
  • The Early History and Growth of Calcutta, বিনয়কৃষ্ণ দেব
  • A TASTE OF TIME- A FOOD HISTORY OF CALCUTTA, মোহোনা কাঞ্জিলাল
  • The Forgotten Palaces of Calcutta, জোঅ্যানি টেলর
  • সেই সময়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
  • A History of Calcutta's Streets, P. Thankappan Nair
  • The Parlour and the Streets Elite and Popular Culture in Nineteenth Century Calcutta, Sumanta Banerjee
  • A History of Calcutta's Streets: With New Photography, P. Thankappan Nair
  • Calcutta in the Nineteenth Century: An Archival Exploration, বিদিশা সক্রবর্তী
  • The History of Bengal.

রাজধানী হিসেবে কলকাতা শহর

কলকাতা বাংলার ৬ষ্ঠ রাজধানী। প্রাচীন ইতিহাস অনুসারে, প্রথম রাজধানী ছিল গৌড় (মালদহ), দ্বিতীয় রাজধানী নদীয়া, তৃতীয় রাজধানী রাজমহল, চতুর্থ রাজধানী ঢাকা, পঞ্চম রাজধানী মুর্শিদাবাদ। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস মুর্শিদাবাদ থেকে বাংলার রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন। এই সময় থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শুধু বাংলাই নয়, সমগ্র ইংরেজ শাসিত ভারতের রাজধানী হল কলকাতা, তারপর দিল্লি হল ভারতের রাজধানী।

কলকাতা শহের নির্বাচন

কলকাতায় বিধানসভার আসন ২০ টি, এবং লোকসভার আসন ২ টি (কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর)

কলকাতা শহরের গোড়াপত্তন

১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট, জব চার্নক যিনি একজন ইংরেজ সাহেব তিনি প্রথম সুতানুটি নামক জায়গায় আসেন। যে জায়গা বর্তমানে উত্তর কলকাতা হিসেবে পরিচিত। কলকাতার আগেকার নাম ক্যালকাটা ছিল। মনে করা হয়, এই সময় থেকেই ক্যালকাটা নামের সূচনা হয়েছিল। আজকের আমাদের ভালোবাসার শহর কলকাতা পূর্বে ছিল তিনটি আলাদা আলাদা গ্রাম সুতানুটি, গোবিন্দপুর, কলিকাতা। ১৬৯৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই তিনটি ছোটো ছোটো গ্রাম কিনে নেয়, এবং পরবর্তী সাল থেকে কলকাতাকে একটি প্রেসিডেন্সি শহর হিসেবে গড়তে শুরু করে। ১৭১৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ওই সময়ের মুঘল সম্রাট ফারুকশিয়ারের কাছ থেকে বছরে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে মুক্তভাবে ব্যবসা করার অনুমতি নিয়ে নেয়। ১৭৫৬ সালের ২০ জুন ওই সময়ের বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতার উপর আক্রমণ করে। তখন কলকাতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে ছিল। সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা জয় করে কলকাতার নাম পরিবর্তন করে রেখে দেন আলিনগর। এর ঠিক এক বছর পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফর (যিনি নবাবের সঙ্গে ছিলেন) এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদের উপর আক্রমণ করে, এবং নবাব কে পরাজিত করে। এই ঘটনা পলাশীর যুদ্ধ নামেও পরিচিত। এরপর পুরো বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজত্ব করতে থাকে। ১৭৬৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নর রবার্ট ক্লাইভ দিল্লির বাদশা আলম দো'র কাছ থেকে শুল্কের বিনিময়ে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা কে তাদের অধীনে নিয়ে নেয়। ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস মুর্শিদাবাদ থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও কার্যালয় কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন। এবং কলকাতাকেই‌ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজধানী হিসেবে তৈরি করা হয়। ১৭৮৪ সালে কলকাতা প্রথম অফিশিয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয়, যার নাম ছিল 'The Calcutta Gazette'। ওই বছর স্যার উইলিয়াম জোন্স দ্যা এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি এখন মিনিস্ট্রি অফ কালচার এর অধীনে আসে। ১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০৪ সালে দ্যা গভর্নর হাউস প্রতিষ্ঠিত হয়, যেটি বর্তমানে রাজভবন নামে পরিচিত। ১৮১৭ সালে রাজা রামমোহন রায়, রাধাকান্ত দেব এবং ডেভিড হেয়ারের প্রচেষ্টায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজ প্রথম ২০ জন ছাত্রকে নিয়ে শুরু হয়েছিল। তখনকার হিন্দু কলেজ বর্তমানে প্রেসিডেন্সি কলেজ হিসেবে পরিচিত। ১৮২৯ সালে রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা রদ করায় সফল হন। ১৮৫৪ সালের ১৫ ই আগস্ট কলকাতায় প্রথম ট্রেন চালু হয়েছিল, এই ট্রেন হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত চলেছিল। এর মধ্যবর্তী স্টেশন গুলি ছিল বালি, শ্রীরামপুর ও চন্দননগর। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রথম ট্রামগাড়ি চলেছিল কলকাতায়। ওই দিন ট্রামটি চলেছিল শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান স্ট্রিট পর্যন্ত। এই ট্রাম প্রথম ঘোড়ার দ্বারা চলেছিল। ১৮৭৫ সালে প্রথম কলকাতায় 'The Statesman' সংবাদপত্রটি চালু হয়েছিল। ওই বছরই ভারতীয় জাদুঘর তৈরি হয়েছিল। ১৮৯৬ সালে প্রথম কলকাতার রাস্তায় মোটর চালিত গাড়ির দেখা মেলে। ১৯০২ সালে কলকাতায় প্রথম ইলেকট্রিক ট্রামের সূচনা হয়েছিল। বর্তমানে সারা ভারতে কলকাতা এমন একটি শহর যেখানে এখনও পর্যন্ত এই ট্রাম গাড়ি স্বমহিমায় চলছে। ১৯২৪ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হন। তিনিই প্রথম ভারতীয় মেয়র ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের। 

কলকাতা নামের ইতিহাস

অজানাকে জানার, অচেনাকে  চেনার ইচ্ছা মানুষের চিরকালের। সেই ইচ্ছাকে কাজে লাগিয়েই মানুষ উন্নত থেকে উন্নততর পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 

গঙ্গা বা ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী শহর কলকাতা। বয়স তার প্রায় ৩৩২ বছর। বহু মানুষের বহুমত, কেউ কেউ বলে থাকেন আজব শহর, কেউবা বলেন মিছিল নগরী, আবার কারও মতে হাসি-ঠাট্টা-মস্তির শহর এই কলকাতা। প্রাসাদ নগরী হিসেবেও আখ্যায়িত হয়েছে এই কলকাতা শহর। তাই কলকাতা কলকাতাই। কলকাতা: "দ্যা সিটি অফ জয়" এরই ধারে ভেসে ওঠে সারা বিশ্বের হৃদস্পন্দন। এই কলকাতা নাম নিয়ে বিভিন্ন জ্ঞানী ব্যক্তি, কিংবদন্তি ও বিভিন্ন সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ। সাহিব মুখে বাংলা ভাষা ক্যালকাটা থেকেই হয়েছে কলকাতা। আবার শোনা যায়, ১৭৪২ সালে শহরের তিন দিকের কাটাখাল থেকেই নাকি এই শহরের নামের উৎপত্তি। অর্থাৎ খালকাটা থেকেই নাকি কলকাতা নামটি এসেছে। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন কলকাতা নামটি এসেছে কালিকট এর নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। আবার কারও মতে কালীঘাট মন্দিরের নামানুসারে কলকাতা নামটি রাখা হয়েছে। তবে যার মতামত চাই হোক না কেন, কলকাতা কিন্তু  আজকের নয়। ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে রচিত মনসামঙ্গল কাব্যে সর্বপ্রথম

উল্লেখ মেলে এই কলকাতার। মুকুন্দরামের চন্ডীমঙ্গলেও এই কলকাতা শহরের উল্লেখ রয়েছে। ১৬ শতকের শেষভাগে আবুল ফজলের লেখা আইন-ই-আকবরী গ্রন্থেও এই কলকাতা শহরের নামের উল্লেখ রয়েছে। তাই গবেষকদের মনে সন্দেহ জেগেছে, সম্ভবত আরও অতীতে কলিকাতা গ্রামের আদি বাসিন্দা কোল সম্প্রদায়ের কোলকাহোতা থেকেই নাম হয়েছে সেদিনের কলকাতার। কালে কালে পরিবর্তন হয়ে কলিকাতা-ক্যালকাটা। নামে কী বা আসে যায়, ব্রিটিশেরই সৃষ্টি শহর কলকাতা। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বি পৌঁছে যায় তারও আগে থেকে, ঘাঁটিও গাড়ে। হুগলিতে ব্রিটিশ, চন্দননগরে ফরাসি, চুঁচুড়ায় ওলন্দাজ ও আর্মেনীয়, শ্রীরামপুরে দিনেমার, ব্যান্ডেলে পোর্তুগিজ, রিষড়ায় গ্রিক, ভদ্রেশ্বরে পার্শিয়ান এই সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তারা শহর লুন্ঠন করতে এসছে। আর ঠিক এই সময়েই শহর লুন্ঠনের অপরাধে বা অপরাধ এড়াতে নবাবী ফৌজ এড়িয়ে ১৬৬৮ -তে হুগলি ছেড়ে ১৬৯০ সালে ২৪ আগষ্ট ঢুকল ইংরেজ সওদাগর কলিকাতার বুকে। অর্থাৎ হুগলি নদী বয়ে জব চার্নক এলেন সুতানুটি গ্রামে। পণ্ডিতদের বিধানে সেই থেকেই জন্ম হল ভাগীরথীর তীরে কলকাতার। ১৬৯২ সালে ১০ ই জানুয়ারি জব চার্নকের মৃত্যু হয়। আর তারপরেই ১৬৯৮ সালে ১০ ই নভেম্বর আর্মেনীয়দের আর্থিক সহায়তায় ২৯০০ টাকায় ডিহি কলিকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর এই তিনটি গ্রামের জমিদারিত্ব কেনে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। 

পুরনো কলকাতার ইতিহাস

উত্তর কলকাতার ইতিহাস

অনেকের মতে হাটখোলার এই হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন দত্ত পরিবারের মানুষরা। দত্ত পরিবার বলতে, গোবিন্দ স্মরণ দত্তের উত্তরপুরুষ যারা বহুয়াপরগনার দক্ষিনে বসবাস করতে চলে এসেছিলেন তাদের কথা বলা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, এই হাটটি প্রতিষ্ঠা করেন শেঠ বশাক। সেই কারণেই এই হাটটিকে বহু মানুষ শোভারাম বশাকের হাট নামেও ডেকে থাকেন।  হাটখোলা নিয়ে শেঠ বশাক বা দত্ত পরিবার সম্বন্ধে যে কথাগুলি বলা হয়ে থাকে বিষয়গুলি এরকম নাও হতে পারে। এই অঞ্চলটির জায়গিরদার লক্ষীকান্ত রায়চৌধুরী একটি পাকার সড়ক নির্মাণ করেছিলেন হালি শহর থেকে বরিষা পর্যন্ত। যে সড়কটি এই অঞ্চলের বুক চিরে সামনে এগিয়ে যেত। এই সড়কের দুই ধারে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন গ্রাম। এবং সেখানে বসবাস করতেন বিভিন্ন কর্ম এবং পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। মাঝখানে একটি রাস্তা এবং দুই ধারে বিভিন্ন পেশার মানুষজন, রাস্তা অর্থাৎ পরিবহনের একটি সুন্দর মাধ্যম। একথাও বলা ভুল হবে না যে, ওই সড়কের দুই ধারে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষজন তাদের বিভিন্ন জিনিস বেচা কেনার উদ্দেশ্যেই এই হাটের উদ্ভাবন করেন। 

দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার ইতিহাস

বাদররসা নাম বদলে হল গোবিন্দপুর, শেঠ বশাকের গোবিন্দজী নাকি গোবিন্দ স্মরণ দত্ত। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখতে গেলে দক্ষিণ কলকাতার হেস্টিংস থেকে এসপ্লানেড এটাই ছিল তৎকালীন গোবিন্দপুরের সীমানা। এবার আসা যাক বাদররসার কথায়, বাদররসা এরকম একটি নাম হওয়ার কারণ কি? গোবিন্দপুর হয়ে ওঠার আগে এটিই ছিল এই অঞ্চলটির নাম। চারপাশে বাদাবন আর জলাশয়ে ঘেরা একটি অঞ্চল। অর্থাৎ বলা যেতে পারে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ, যেগুলি বর্তমানে সুন্দরবন এলাকায় দেখা যায়। ম্যানগ্রোভ অরণ্য তৎকালীন সময়ে কলকাতার এই সমস্ত অঞ্চলগুলিতে বিস্তৃত ছিল। আজ যেখানে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ কলকাতা তৎকালীন সময়ে ছিল নিবিড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য। সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া ও পাইন গাছের জঙ্গল এবং তার মধ্যেই বসবাস করত বাংলা তথা সারা ভারতের গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সঙ্গে আরো অনেক পশুপাখি, কুমির, হরিণ, ঈগল আর অসংখ্য প্রজাতির মাছ। গাছে এবং জলাশয়ের তীরে ছোট-বড় নানা প্রজাতির, নানা রঙের পাখি। আরো একটি আকর্ষণীয় জিনিস ছিল ছোট-বড় গাছগুলিতে বসে থাকা বাঁদর। তো সম্ভবত এই বাঁদর বা বাদা থেকেই নাম হয়েছিল বাদররসা। গোবিন্দপুর নামটি প্রসঙ্গে অনেক গল্পই প্রচলিত রয়েছে। 

গোবিন্দ স্মরণ দত্ত, ইনার আদি নিবাস ছিল বর্তমান হাওড়া জেলার আন্দুল সেখান থেকে বালি হয়ে চলে আসেন বাদররসা গ্রামে। রাজা টোডারমল তখন জরিপ করতে এসেছেন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার, সালটি ছিল ১৫৮৪। গোবিন্দ স্মরণ দত্ত রাজা টোডরমল -এর কাছ থেকে এই জায়গাটি জায়গির হিসেবে পান। ওই জায়গায় গোবিন্দ স্মরণ দত্ত বসবাস শুরু করার পর আরও বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এখানে বসবাস করতে শুরু করেন। গ্রামটির উত্তরে ছিল কুঁচাগোড়া খাল, যেটি বর্তমানে গঙ্গা নদীর চাঁটফাল ঘাট থেকে শুরু করে পূর্বদিকের বাদা জঙ্গলে গিয়ে পড়ে। দক্ষিণে আদিগঙ্গার খাল বা গোবিন্দপুরের খাল। পূর্বে চৌরঙ্গীর জলা জঙ্গল। আর পশ্চিমে গঙ্গা নদী। 

গোবিন্দ দত্ত, তিনি ছিলেন একজন রাজা। গোবিন্দ দত্ত গঙ্গাসাগর থেকে তীর্থযাত্রা করে ফেরার পথে মা কালীর স্বপ্নাদেশে বাদররসা নামক এক জায়গায় নিজের বসতি স্থাপন করেন। সেখানে উনি মাটির নিচে প্রচুর পরিমাণে গুপ্তধনের সন্ধান পান। এবং সেখানকার বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় বাদা জঙ্গল পরিষ্কার করে গ্রাম তৈরি করেন।

শেঠ বশাক, এনাদের পূর্ব বাসস্থান ছিল হুগলি জেলার সপ্তক গ্রামে। সেই সময় সপ্তক গ্রাম ছিল এই অঞ্চলের মূল বাণিজ্য কেন্দ্র। সরস্বতী নদীর মূল প্রবাহটি এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতো। শেঠ বশাকের দেশ-বিদেশ খ্যাত বস্ত্রের ব্যবসা ছিল। দিনের পর দিন এরকম কাটতে থাকে। কিছু সময় পর সরস্বতী নদীতে জলের প্রবাহ কমতে থাকে। জল শুকিয়ে যেতে থাকে। বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী শেঠ বশাকরা অগ্রিম সমস্ত কিছু বুঝে গঙ্গা বা ভাগীরথীর তীরে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গঙ্গা বা ভাগীরথী তীরবর্তী অঞ্চলে প্রথমে আসেন চার ঘর বশাক- কালিদাস বশাক, বারিপতি বশাক, বাসুদেব বশাক ও শিবদাস বশাক। এবং ঠিক এর পরেই আসেন মুকুন্দরাম শেঠ। এই মুকুন্দরাম তার কূলদেবতা গোবিন্দজী কে নিয়ে এসে এখানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এবং তথাকথিত ভাবে গোবিন্দের নাম অনুসারে জায়গাটির নাম হল গোবিন্দপুর। 

কলকাতার অজানা ইতিহাস

ব্রিটিশদের রাজত্বকালের সময় থেকেই কলকাতা ছিল ভারতের মধ্যে একটি উন্নত জায়গা। এবং ব্রিটিশদের জন্য কলকাতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক কেন্দ্র। দূর্গা পূজার উৎসব কমবেশি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হয়ে থাকে, কিন্তু সব থেকে বেশি জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপূজা হয় পশ্চিমবঙ্গ তথা আমাদের রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরে। ২১৫ -এর থেকেও বেশি প্যান্ডেলে সেজে ওঠে কলকাতা শহর। ভারতীয় ক্রিকেট দলের মহান ক্যাপ্টেন সৌরভ গাঙ্গুলী অর্থাৎ আমাদের ভালোবাসার দাদা এই কলকাতা অর্থাৎ বাংলা থেকেই। কলকাতা শহরে অবস্থিত তৃতীয় বৃহত্তম স্টেডিয়াম ইডেন গার্ডেন। কলকাতা শব্দটির সঙ্গে গান কিংবা কবিতার একটি পুরনো ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। এবং আমাদের কলকাতায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম বইয়ের বাজার, কলেজ স্ট্রিট। আমাদের এই কোলকাতা শহরেই প্রথম মেট্রোরেল এর সূচনা হয়েছিল। সারা ভারতবর্ষের সবথেকে ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশনটি হচ্ছে হাওড়া। কলকাতার একটি অন্যতম আকর্ষণ হল হাওড়া ব্রিজ। এই ব্রিজটি হুগলি নদীর উপর অবস্থিত। ১৪ জুন, ১৯৬৫ -তে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রবীন্দ্র সেতু। পুরো এশিয়ার মধ্যে জাপানের টোকিও ছাড়া কলকাতাই এমন একটি শহর যেখান থেকে ৫ জন ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

Kolkata Corner

Post a Comment

0 Comments