ইউরিক অ্যাসিড কেন হয় | ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে কী কী সমস্যা তৈরি হয়

ইউরিক অ্যাসিড কেন হয়

ইউরিক অ্যাসিড কেন হয়

ইউরিক অ্যাসিড, ঘরে ঘরে সমস্যা কিন্তু বিভ্রান্তিও কম নয়। কি খাবেন, কি খাবেন না, কোন সব্জি ভালো, কোন সব্জি খারাপ, আদৌ কোনো সব্জি খাওয়া বারণ কিনা, শুধুমাত্র কি আমিষ খাবারেই নিষেধাজ্ঞা? এই সবকিছুই বলা হল আজকের এই পোস্টে।

ইউরিক অ্যাসিড কেন হয়

মানুষের রক্তে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিনের মতো আরও একপ্রকার প্রোটিন আছে, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় পিউরিন বলা হয়। জ্যানথিন অক্সিডেজ নামে এক ধরণের এই জাইমের মাধ্যমে সংশ্লেষিত হয়ে ইউরিন অ্যাসিড তৈরি হয়, আর যেটা প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। আর যখন বের হতে পারে না তখন নানারূপ সমস্যা দেখা দেয়। 

কীভাবে তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড

মানব শরীর অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এই কোষের মধ্যে থাকে পিউরিন নিউক্লিওটাইড নামের একটি যৌগ। সাধারনত কোষের মধ্যে থাকা পিউরিন ভেঙ্গে গিয়ে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। আবার অনেক খাদ্যের মধ্যেও পিউরিন থাকে। সেখান থেকেও তৈরি হওয়া ইউরিক অ্যাসিড রক্তে এসে মেশে। এরপর কিডনির মাধ্যমে রেচন পদার্থ হিসেবে প্রস্রাবের সঙ্গে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। এটি একটি সাধারন প্রক্রিয়া। সবাই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। তবে কোনো কারণে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেই নানাবিধ সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। 

ইউরিক অ্যাসিড এর লক্ষণ 

গেঁটে বাত এর লক্ষণ

গেঁটে বাত রোগটির উপস্থিতি প্রাথমিক পর্যায়ে খুব বেশি অনুভব করা যায় না। গেঁটে বাত মূলত শরীরের জয়েন্টগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাধারণত হঠাৎ করেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং ২-৬ ঘণ্টার মাঝে এর তীব্রতা প্রকাশ পায়। শরীরের জোড়াস্থানগুলো ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং যন্ত্রণা করে। সচরাচর সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হঠাৎ করে রোগী এ ব্যথা অনুভব করেন। এটি সাধারণত পায়ের বুড়ো আঙুলে অথবা হাঁটুতে বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও এটি গোড়ালির জয়েন্ট, মধ্য পায়ের জয়েন্ট, হাঁটুর জয়েন্ট, হাতের ছোট ছোট জয়েন্ট, কব্জির জয়েন্ট বা কনুইর জয়েন্টেও হতে পারে। আবার পরবর্তী ৫ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ রোগটি আপনা আপনি সেরেও যেতে পারে। কিন্তু কখনও কখনও এক ধরনের নকল গেঁটে বাত ধোকা দিতে পারে এবং ঝামেলা বাড়তে পারে। এতেও গিরা ফুলে যায়, লাল হয় বা ব্যথা হয়। যদিও সব লক্ষণগুলো একই রকমের, কিন্তু চিকিৎসক যদি পরীক্ষাগারে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই এই নকল গেঁটে বাতের লক্ষণগুলো শুনে চিকিৎসাপত্র দিয়ে দেন তবে সেক্ষেত্রে সমস্যা বাড়তে পারে।

প্রধান প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গসমুহ নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ

  • হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়ে ২ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
  • প্রায়শই ভোরবেলায় তীব্র ব্যথায় রোগীর ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে।
  • এর সাথে জ্বর ও অবসাদগ্রস্ততা থাকতে পারে।
  • ব্যথা কমে গেলে আক্রান্ত স্থান চুলকায় ও চামড়া উঠে যেতে পারে।
  • ব্যথা এতই তীব্র হয় যে রোগী পায়ে মোজা পরতে পারেনা, আক্রান্ত জয়েন্ট বেশ ফুলে যায় এবং চামড়া চকচকে লাল হয়ে যায়।
  • ৫ থেকে ৬ দিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
  • কেউ কেউ একবার আক্রান্ত হবার পর দ্বিতীয়বার আর আক্রান্ত হয় না আবার অনেকেই কয়েক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হতে পারে।
  • এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে সেক্ষেত্রে ক্রনিক গাউটে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং এতে জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা থাকে।
  • দীর্ঘদিন রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেশি থাকলে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
  • জয়েন্ট ও এর আশেপাশের টিস্যুতে ক্রিস্টাল জমা হয়ে নডিউল বা দলা বা টোফাস তৈরি করতে পারে। আবার টোফাসে ঘা হতে পারে, সংক্রমণ হতে পারে কিংবা প্রদাহের ফলে পুঁজ বের হতে পারে

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বা রেঞ্জ 

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। তেমনি ইউরিক অ্যাসিডও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে। তবে এই ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক এবং বৃদ্ধির একটি মাত্রা রয়েছে
পুরুষের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা ৪ থেকে ৮.৫ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার। এবং মহিলার ক্ষেত্রে সেটি ২.৫ থেকে ৭.৫ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার। তবে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পুরুষের ক্ষেত্রে ৬ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার এবং মহিলার ক্ষেত্রে ৫.৫ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার -এর মধ্যে থাকলে সবথেকে ভালো। কোনো পুরুষের রক্তে ৮.৫ মিলিগ্রাম/ ডেসিলিটার এবং মহিলার রক্তে ৭.৫ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার -এর বেশি ইউরিক অ্যাসিড থাকলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে কী কী সমস্যা তৈরি হয়

গাউট বা গাউট আর্থ্রাইটিস, ইউরিক অ্যাসিড ন্যাফ্রোপ্যাথি, ক্রানক গ্রাউট, সেপটিক আর্থ্রাইটিস, কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিড স্টোন প্রভৃতি।

আর্থ্রাইটিস

রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে আর্থ্রাইটিস হতে পারে। বর্তমান চিকিৎসা পরিভাষায় এর নাম গাউট আর্থ্রাইটিস। আর আয়ুর্বেদে একে বাতরক্ত বলা হয়। এই রোগে শরীরের অস্থিসন্ধিগুলিতে ইউরিক অ্যাসিড ইউরেট হিসেবে জমা হয়। বিশেষত হাঁটু, গোড়ালি, হাতের কনুইয়ের পাশাপাশি কব্জি ও আঙ্গুলের গাঁটে গাঁটে ব্যথা হতে পারে। আক্রান্ত অস্থিসন্ধিগুলি লাল হয়ে ফুলে যায়, প্রচন্ড যন্ত্রণা হয়। চাপ পড়লে ব্যথা আরও বাড়ে। শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হলে কিডনি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সমস্যার নাম ইউরেট নেফ্রোপ্যাথি। কিছুক্ষেত্রে কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিডের ক্রিস্টাল জমে স্টোনও হতে পারে।

গেঁটেবাত বা গাউট

ইউরিক অ্যাসিড হাড়ের সন্ধিস্থলে ক্রিস্টালের মতো জমে যায়, হাড়ের সন্ধিস্থল ফুলে যায়। এই রোগের নামই গাউট বা গেঁটেবাত।
ইউরিক অ্যাসিড কেন হয়

উচ্চ রক্তচাপ

সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে হাই প্রেশারের সম্ভাবনা থাকে।

কিডনির রোগ

রেনাল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মূত্রের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড ও অন্যান্য বজ্র বের না হওয়ায় কিডনি বিকল হতে শুরু করে।

হার্টের রোগ

হৃদরোগের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়|

কি কি কারনে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়

যারা পাঁঠার মাংস, বিভিন্ন ধরনের পানীয় যেমন, স্পিরিট জাতীয় পানীয় ও মদ্যপান করে তাদের ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়। 
যারা যেকোনো ধর্মীয় রীতি পালনার্থে বা স্থূলতা কমাবার জন্য খাদ্যের পরিমাণ হ্রাস করে বা বেশি উপবাস করে তাদের ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়। আবার যারা খুব বেশি পরিমাণে আহার করে, বিশেষ করে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খায় তাদের ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়। 
অতিরিক্ত ঔষধ সেবনেও ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়, তবে অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য খাওয়ায় মানুষের স্থূলতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই কিন্তু ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়।

অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরির কারণ

ইউরিক অ্যাসিড রোগ হওয়ার মূলে রয়েছে বায়ু বৃদ্ধিকারক আহারবিহার এবং পিত্ত বৃদ্ধিকারক আহারবিহার। আহার অর্থাৎ খাওয়া, বিহারের অর্থ হল লাইফস্টাইল বা জীবনযাপন। সহজে বললে, ফুল খাদ্যভ্যাস এবং অনিয়মিত জীবনযাপন। কিছুক্ষেত্রে জিনগত কারণে বাচ্চাদের অতিরিক্ত ইউরিক এসিড তৈরি হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হাই কোলেস্টেরল ইত্যাদি সমস্যা থাকলেও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে।
যাদের উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিরাই এবং রক্তের শর্করা বেশি থাকে এবং সেইসঙ্গে স্থূলতা বেশি হয় তাদের ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়।
এতো গেল সাধারন ব্যাপার। কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণের ব্যাখ্যায় বলা হয়ে থাকে তা হল, মানবদেহের যে প্রোটিন থাকে তার রাসায়নিক গঠন হল- কার্বন ‌৫৪%, অক্সিজেন ২২%, নাইট্রোজেন ১৬%, এবং হাইড্রোজেন ৭%। একাধিক অ্যামাইনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল দিয়ে গঠিত হয় এই প্রোটিন। মানবদেহের প্রয়োজনে লাগে ২২ টি অ্যামাইনো
অ্যাসিড। তার মধ্যে ১৪ টি দেহের মধ্যেই তৈরি হয়। আর ৮ টি আমিষ ও নিরামিষ খাদ্য থেকে আহরণ করতে হয়। এই অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলিকে দেহের নানা প্রয়োজনের জন্য ব্যবহারের উপযুক্ত করে তোলার জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যম কিন্তু পিউরিন নামে একপ্রকার অ্যাসিড। এই পিউরিন থেকেই তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড।

কোন কোন রোগে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়

আমরা প্রত্যেকেই জানি যে মানবদেহে কোন একটি অসুবিধা দেখা দিলে সেই অসুবিধা অন্যান্য বিভিন্ন রোগকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। অনুরূপভাবে যে সমস্ত রোগ ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধিতে সাহায্য করে সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল- ক্যান্সার, রক্তাল্পতা, থাইরয়েড, কিডনির সমস্যা, চর্মরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি প্রভৃতি রোগ থাকলেই ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়, আবার ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পেলেও এগুলি বৃদ্ধি পায়। 

ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির হাত থেকে বাচার উপায়

শিশুকাল থেকে খাদ্যাভ্যাস পাল্টানো এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করা। পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া যেমন স্বাস্থ্য করার ক্ষেত্রে প্রয়োজন তেমনি ফ্যাট জাতীয় খাদ্যও বর্জন করা উচিত। টাটকা সব্জি, ফল খাওয়া উচিত আর মাছ, মাংস, ডিম কম। বিশেষ করে ডিম ও মাংস। 
মোদ্দা কথা সিনড্রোম ও স্থূলত্বই ইউরিক অ্যাসিডকে বাড়িয়ে দেয়। তাই এর প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। 

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ব্যায়াম 

আমাদের শরীরে যখন ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়, তখন তা ক্রিস্টাল বা দানাদার আকারে অস্থিসন্ধিতে জমে। ফলে অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হয়, সন্ধি লাল হয়ে ফুলে যায়, তীব্র ব্যথা হয়। এ অবস্থাকে গাউট বা গেঁটে বাত বলে। কাজেই শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
কিডনি রোগ, স্থূলতা, মেটাবলিক সিনড্রমে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। যেসব খাবারে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে, সেগুলো পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে লাল মাংস (গরু, ছাগল ইত্যাদির মাংস), অ্যালকোহল, ডাল, শিম, বরবটি, কচু, লতি, পুঁইশাক, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি।
ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বা অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ দেখা দিলে মেডিসিন বা বাত রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এ ছাড়া ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি বেশ কার্যকর। এ ক্ষেত্রে দক্ষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এবার জেনে নেওয়া যাক যেসব ব্যায়াম ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।

ইউরিক অ্যাসিড

অ্যারোবিক ব্যায়াম

হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো কিংবা নাচ ভালো ব্যায়াম হতে পারে। প্রথম দিকে ১০ মিনিট করে এসব ব্যায়াম করলেই চলবে। এরপর ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত করতে হবে সপ্তাহে পাঁচ দিন। পাশাপাশি সঠিক ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

সাঁতার

সপ্তাহে দুই দিন ১৫ মিনিট করে সাঁতার কাটতে হবে। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে তা ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত করা যাবে।

 স্ট্রেচিং

প্রথমে হাতের কবজি মুষ্টিবদ্ধ করে চারদিক ঘোরাতে হবে। ঘড়ির কাঁটার দিকে ও উল্টো দিকে ৩০ সেকেন্ড করে ঘোরান। এভাবে ১০ বার ব্যায়ামটি করুন। এরপর একইভাবে কাঁধের সন্ধি এবং অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে একইভাবে ঘোরানোর বা নড়াচড়ার চেষ্টা করুন। প্রতিটি অস্থিসন্ধিতে ৩০ সেকেন্ড করে ১০ বার ব্যায়ামটি করুন।
বসে পা দুটি সোজা করে হাত দিয়ে পায়ের পাতা ধরার চেষ্টা করুন। ৩০ সেকেন্ড ধরে রেখে আবার সোজা হয়ে বসুন। এভাবে ১০ বার করুন।
এ ছাড়া অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে অথবা সন্ধি ফুলে গেলে বরফ বা ঠান্ডা সেঁক ভালো কাজ করে। অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে।

ইউরিক অ্যাসিডের ডায়েট 

খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রোটিন বর্জন করতে হবে। আমাদের কোন খাদ্য কতটা খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার একটা চার্ট তৈরি করতে হবে। দৈনন্দিন কতটা খাদ্য গ্রহণ করা দরকার তারও একটি চার্ট তৈরি করতে হবে। মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রিতভাবে খেতে হবে। তা যেন মাত্রা না ছাড়ায়। আর কোন খাদ্যের সঙ্গে কোন খাদ্য খাওয়া উচিত নয় সেটাও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবে করতে হবে। যেমন যেদিন আপনি মাংস বা ডিম খাবেন সেদিন দুধ, ফলের রস বা ডাব খাবেন না। ঠান্ডা পানীয়, ফল ও ফলের রস খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। যেসব খাদ্যে প্রোটিন বেশি থাকে তা একেবারেই খাবেন না, যেমন কাজুবাদাম, চীনাবাদাম, বিন, সজনে, কাঁঠাল বীজ, পালং শাক, মসুর ডাল, কালো ছোলা, সোয়াবিন, এসব খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। মাংস, ডিম, দুধ এসব বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কম খেতে হবে। এভাবে চললে ইউরিক অ্যাসিডের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
আমাদের দেহ কোষের মূল উপাদান যে প্রোটোপ্লাজম তার শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগই জল। জল ছাড়া আমাদের দেহে সংবহন, পরিপাক, বিপাক কোনো কাজই হয়না। জল কোষ থেকে বর্জ্য পদার্থ পৌঁছে দেয় কিডনি নামক ছাকনিতে। সেখানে দূষিত পদার্থ আটকে যায়। আর সেই দূষিত পদার্থগুলি জল বাহিত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু রক্তে অতিরিক্ত প্রোটিন তথা ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পেলে এই ক্রিয়া হয় না। বর্জ্য পদার্থ কিডনিতে জমে পাথরে পরিণত হয়। কিডনিও বিকল হতে থাকে।
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা কমাতে কোন কোন শাক সব্জি উপকারী
যেকোনো মরশুমি শাকসব্জি খাওয়া যেতে পারে, বিশেষ করে শীতের সময় বাজারে শাকসবজির অভাব থাকে না সেই সময় পরিমাণমতো সব কিছুই খাওয়া যায়। আলাদা করে বললে, শুষনি শাক, নটে শাক, সালিজ্ঞ শাক, কাকমাছি শাক ইত্যাদি ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় বিশেষ কার্যকরী। সব্জির মধ্যে পটল, করলা, উচ্ছে, কাঁকরোল, খেলে ভালো ফল দেয়। তবে সব্জির বীজ ফেলে দিয়ে রান্না করতে হবে। রান্না হবে সুপাচ্য। অর্থাৎ বেশি ঝাল-মশলা খাওয়া যাবেনা।

কি খাবেন, কি খাবেন না 

একাধিক কারণে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে পারে।
যাঁরা প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে মাছ-মাংস খান, তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাবার ঝুঁকি বেশি। মদ্যপান ও কার্বোনেটেড কোলা জাতীয় ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ম করে খেলেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে। স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজন হলেও ঝুঁকি থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কিছুটা বংশগত। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি বেশি। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, কিডনির অসুখ থাকলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে।
প্রথম পাতাআনন্দ উৎসবকলকাতাপশ্চিমবঙ্গদেশবিদেশসম্পাদকের পাতাখেলাবিনোদনজীবন+ধারাজীবনরেখাব্যবসাঅন্যান্যপাত্রপাত্রী
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে পারেন খুব সহজেই
ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন সারা পৃথিবীর প্রায় ৪ কোটি মানুষ।
কেউ টম্যাটো বর্জন করেছেন, কেউ ঢ্যাঁড়শ পাতে নেন না, অনেকে আবার পিকনিকে গিয়ে শুকনো মুড়ি চিবিয়ে কাটান। জিজ্ঞাসা করলে একটাই উত্তর— ইউরিক অ্যাসিড আছে! বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ এই কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ইউরিক অ্যাসিডে গাঁটের ব্যথায় শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আমেরিকান কলেজ অফ রিউম্যাটোলজির এক গবেষণাপত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

সত্যিই কি ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কড়া নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক? এই প্রশ্নের উত্তরে ইন্টারন্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার জানালেন খাওয়া কমালেই ইউরিক অ্যাসিড কমে না। খাবার হজমের সময় ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এটা মূত্রের স্বাভাবিক উপাদান। মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে বা ওজন বাড়লে কখনও কখনও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। ‘‘বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড শরীরের অস্থিসন্ধি ও মূত্রনালীতে থিতিয়ে পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করে,’’ বললেন দীপঙ্কর সরকার। থিতিয়ে পড়া ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টালের আকার নেয়। এটি গাঁটে ব্যথা ও প্রস্রাবের সংক্রমণ ডেকে আনে। এ ছাড়া কিডনিতে পাথরও জমতে পারে। খাবার বন্ধ করে দিলেই যে এই সমস্যা মিটে যাবে, সেকথা ঠিক নয়, বলছেন দীপঙ্কর।
ইউরিক অ্যাসিড

বেশ কয়েক বছর আগেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে নানা খাবারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এখন নির্দিষ্ট কিছু খাবার ছাড়া, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে সবই খাওয়া যায়। এমনই জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এমন খাবার খাওয়া চলবে না, যাতে ওজন বেড়ে যায়। ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। দিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার জল খেলে, ইউরিক অ্যাসিড কমে যায়।

কী কী খাবার বন্ধ করতে হবে

কৃত্রিম রং, চিনি বা কর্ন সিরাপ দেওয়া খাবার একেবারে বন্ধ করা উচিত। কোলা জাতীয় পানীয়, রং দেওয়া জেলি, জ্যাম, সিরাপ, কৌট বন্দি ফ্রুট জ্যুস খাওয়া চলবে না। বলছেন দীপঙ্কর সরকার। স্মোকড ও ক্যানড ফুড খাওয়া চলবে না। আচার, চানাচুর, নোনা মাছ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। পালং শাক, বিনস, বরবটি, রাজমা খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। তবে রান্না করা শিম, কড়াইশুঁটি, ঢ্যাঁড়স বা টোম্যাটো খেলে কোনও সমস্যা হয় না, মত সুবর্ণা রায়চৌধুরীর। পালং শাক, পুঁই শাক, মুসুর ডাল, বিউলি ডাল, মাটন, সমুদ্রের মাছ খাওয়া মানা। মাছ, চিকেন বা ডিম খাওয়া যায়। তবে সব মিলিয়ে দিনে ৫০ গ্রামের বেশি নয়। সুবর্ণা বলছেন, মাছ বা চিকেন নিয়মিত খাওয়া গেলেও, মাছের মুড়ো, চিকেন বা মাটনের মেটে বাদ দিন। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেলে মূত্রনালীতে ইউরিক অ্যাসিড জমে স্টোন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই দিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার জল খান। ওজন স্বাভাবিক রাখতে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন 

ইউরিক অ্যাসিডের কিছু বাধানিষেধ

ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা থাকলে খাবারে বেশ কিছু বাধানিষেধ মেনে চলতে হয়। বেশি লবণ, বেশি টক, বেশি ঝাল, ক্ষার জাতীয় খাদ্য বেশি খাওয়া চলবে না। এছাড়া খাদ্যবস্তু ধরে বললে, রেড মিট, চিংড়ি, কাঁকড়া, মাষকলাই, শিম, মুলো, সরষের শাক, আখের রস, দই, ঘোল, মদ্যপান এবং বাসি খাওয়া চলবে না। তার সঙ্গে রাতজাগা, দিনে ঘুমানো, অতিরিক্ত পরিশ্রম, রোদে ঘোরা থেকেও বিরত থাকতে হবে। 

ইউরিক অ্যাসিড হ্রাসে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

কিডনির পাথর নিষ্কাশনে এবং ইউরিক অ্যাসিড কমাতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না। তারা রোগীর রোগের লক্ষণ বুঝে যেটা প্রয়োজন সেটা খেতে বলবেন।

Post a Comment

0 Comments