সেরা ১০ টি উপকারী সব্জি | বিভিন্ন সব্জির উপকারিতা

বিভিন্ন সবজির উপকারিতা

সব্জির উপকারিতা

নানা ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাদ্য অথচ লো-ক্যালোরি ও হাই ফাইবার যুক্ত খাবার খুজলে আপনাকে টাটকা শাকসব্জি খেতেই হবে। এতে ফ্যাট প্রায় থাকেনা বললেই চলে। ভিটামিন A, C, E যুক্ত সব্জি ত্বককে সজীব রাখে। চোখ ভালো রাখে। হার্টের রোগীদের পক্ষে এই ধরনের সব্জি খুবই উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সব্জীর কোনও বিকল্প নেই। পটাশিয়ামযুক্ত সব্জি উচ্চ রক্তচাপে খুবই প্রয়োজনীয়। সেরার সেরা সব্জি নির্বাচন করা খুবই কঠিন ব্যাপার। কারণ প্রায় প্রতিটি সব্জিই সমান খাদ্য গুণে ভরপুর এবং অত্যন্ত উপকারী। এদের মধ্যে থেকে সেরা ১০ টি সব্জি বেছে নিয়ে তাদের উপকারিতা সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করা হল।

আলু

সাধারণভাবে আমরা হাতের কাছে যে সমস্ত শাকসবজি পেয়ে থাকি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় আলুর। কয়েকটি বিশেষ রোগ ছাড়া অন্যান্য সকল অবস্থাতেই খাওয়া যায় আলু।  আলু পেটের সমস্যায় নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়, এতে একটুও ফ্যাট থাকেনা। বরং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C এবং B কমপ্লেক্স থাকে। আলু দেহের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, কোলেস্টেরল কমায় এবং হার্টকে ভালো রাখে। চোখ ভালো রাখে, ব্লাড প্রেশার ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাতেও আলু খুবই উপকারী।

গাজর

এই সব্জিটি চোখের জন্য এতই উপকারী যে, অনেকে বলে থাকেন গাজর খেলে অন্ধকারেও দেখতে পাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় স্যালাড করে খাওয়া যায় অথবা রান্না করে খাওয়া যায়। গাজর ভিটামিন A -তে ভরপুর থাকায় চোখের জন্য খুব ভালো। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে গাজর। গাজর ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে রাখে। গাজরের প্রসঙ্গে বিটের কথা না বললে চলে না, বিটের রস ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে, মাংশপেশির ক্রিয়াক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। বিটে উপস্থিত পটাশিয়াম ক্লান্তি দুর্বলতা ও মাসল এর সংকোচন কমাতে সাহায্য করে। 

লাউ

লাউ -এ প্রায় ৯৬% জল থাকে, তাই দেহের ওজন বাড়ে না। গরমে খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ক্লান্তি কম হয়। এতে উপস্থিত সোডিয়াম, পটাশিয়াম হার্টকে ভালো রাখে। হজমশক্তি বাড়ায়, লিভার ভালো রাখে, পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। বিভিন্নভাবে নিয়মিত লাউ খেলে চুল ভালো থাকে।

টমেটো

আগে সাধারণত শীতকালেই টমেটো পাওয়া যেত বা এককথায় বললে আগে টমেটো ছিল শীতের সব্জি। এখন সারাবছরই যেকোনো ঋতুতে টমেটো পাওয়া যায়। টমেটো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, তাই একে 'সুপারফুড'ও বলা হয়ে থাকে। টমেটো ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে। চোখের ছানি এবং বার্ধক্য জনিত সমস্যা দূর করতে টমেটোর জুড়ি মেলা ভার। টমেটো খুবই প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সব্জি তাই ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে খুবই কার্যকরী। ত্বকের পাশাপাশি এটি চুল নখকেও ভালো রাখে। এটি ফলিক অ্যাসিডের প্রাকৃতিক উৎস। 

বাঁধাকপি

এর মধ্যে রয়েছে সালফরাপেন যা একধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধক। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানো এবং ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাঁধাকপি খুব ভালো কাজ করে। এতে রয়েছে ভিটামিন K যা ব্রেন ভালো রাখে, মনঃসংযোগ বাড়ায়। বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম। বাঁধাকপি হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।

উচ্ছে

খাওয়ার শুরুতে উচ্ছের বিভিন্ন পদ উপকারী এবং স্বাস্থ্যকর। এছাড়া সকালে খালি পেটে উচ্ছের রস কিংবা করলার রস স্বাস্থ্যের পক্ষে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে। এই রস প্রধানত ক্যান্সার প্রতিরোধক। দীর্ঘদিন ধূমপানজনিত কারণে জমা হওয়া নিকোটিনের আস্তরণকে দূর করে উচ্ছের রস। এছাড়াও অ্যাজমা রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। ওজন কমানো, ডায়াবেটিস, সুগার প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই রস খুবই উপকারী। করলার রস হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও জরুরি।

পটল

হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে এবং লিভার ভালো রাখতে পটলের জুড়ি মেলা ভার। এতে কম ক্যালোরি এবং পর্যাপ্ত মাত্রায় ফাইবার থাকায় ওজন কমাতে খুবই সাহায্যকারী। পটল ব্লাড পিউরিফায়ার, তাই ত্বককে সতেজ রাখে এবং উজ্জ্বলতা বজায় রাখে। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় পটল খুবই কার্যকরী। ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। যেকোনো ধরনের জ্বরের প্রতিষেধক হিসেবে পটল অত্যন্ত উপকারী। ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।

ব্রকোলি

ফুলকপি ও বাঁধাকপির সঙ্গে একই পরিবারের সদস্য ব্রকোলি। বিভিন্ন ভিটামিনের পরিপূর্ণ। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন K, C, B কমপ্লেক্স এবং প্রচুর মাত্রায় ডায়েটারি ফাইবার থাকে। এটি হাড়কে মজবুত করে, ত্বক ভালো রাখে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয়। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ায়। করোনারি আর্টারি ডিজিজ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি দূরে রাখতে সাহায্য করে। এটিকে স্যালাড হিসেবেও খাওয়া যায়।

কুমড়ো এবং চালকুমড়ো

ঘন্ট থেকে শুরু করে মুড়িঘন্ট এরকম বিভিন্ন সুস্বাদু পদে আমরা কুমড়ো কিংবা চালকুমড়ো কে পেয়ে থাকি। এটি বিটাক্যারোটিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কুমড়োর উজ্জ্বল বর্ণের কারণ। কুমড়ো খেলে ক্যান্সারের আশঙ্কা কম থাকে। কুমড়ো দেহ কোষে গ্লুকোজের শোষণ বাড়ায়, তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। কুমড়োতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ কুমড়ো ওজন কমাতে সাহায্য করে। কুমড়োয় পর্যাপ্ত মাত্রায় ভিটামিন A, C থাকে। 

চাল কুমড়ো ব্রেনের পক্ষে খুবই উপকারী, চাল কুমড়ো আমরা বড়ি বানাতেও ব্যবহার করে থাকি। এটি নানা ধরনের মানসিক সমস্যা, ডিপ্রেশন, অস্থিরতা, উন্মাদ রোগ, হাই ব্লাডপ্রেশার এবং কিডনির বিভিন্ন অসুখকে দূরে রাখে। পেপটিক আলসারের সমস্যায় খুব উপকারী।

কড়াইশুঁটি

এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন B কমপ্লেক্স, C, K এবং ফোলেট থাকে। এছাড়াও কড়াইশুঁটি তে রয়েছে বিভিন্ন মিনারেল, ডায়েটারি ফাইবার, কপার, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম। কড়াইশুঁটি পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কড়াইশুঁটি ডায়েটে রাখা বাধ্যতামূলক। টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কড়াইশুঁটি। দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হাড়কে মজবুত করে। কিডনি রোগীদের জন্য কড়াইশুঁটি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই খাওয়া উচিত।

বিভিন্ন সবজির উপকারিতা
Kolkata Corner

Post a Comment

0 Comments